“তুমি” ✒️✒️শান্তময় গোস্বামী
“তুমি”
শান্তময় গোস্বামী
আজও দেখি রেল ব্রীজের নিচে, রাস্তার ধারে, নলিকাটা পুকুরের পাড়ে, বস্তির আগুনে, সঙ্গমের চিৎকারে যাবতীয় বেজন্মার আসরে তোমার ছিন্নভিন্ন স্বর ছটফট করে। মৃত্যুর ঠোঁটে এখনো বাঁশি বাজে। শরীরে বয়ে যাওয়া অসংখ্য নদীর আয়ুপথ কোথায় শেষ হবে, কি ব্যাখ্যা দেবে আমাদের রেশমিক ব্যর্থতা, তোমার গলা জড়িয়ে কে বলবে তুমি আমার দেশ নও, তুমিই আসলে নাবিক হাওয়া, বেঁচে থাকার প্রাচীন হরফ।
কখনো দেখি মাঝ দুপুরে শহর চেরা রাস্তায় উপুড় হয়ে শুয়ে আছে ‘তুমি’। দুপাশ দিয়ে ছুটে যাচ্ছে নানা রঙের গাড়ি ও ক্ষয়ের বর্বরতা। ট্রাফিকের আত্মার ব্যর্থ সিগনাল আর তীব্র হর্ন ছিটকে পড়ছে পা থেকে মাথা পর্যন্ত।’ তুমি’কে ঘিরে পাক খাচ্ছে কোঁচকানো জগৎ।মেলানিন শুকিয়ে গুঁড়ো গুঁড়ো,ঝরে পড়ছে পিঠের ওপর। বদলে যাচ্ছে মানুষ দেখা ও মারার কৌশল, কি সাবলিল ভঙ্গিতে খেলুড়ে বালকের মতো মেতে উঠছে অহংবাদী চৈতন্য । কেউ চিৎ করে শোয়াতে পারছে না তুমি’কে । হাজার হাজার শেকড় চারিয়ে গেছে পৃথিবীর কেন্দ্রে। আর আমি বাতাসের ভেজা জিভের ওপর দাঁড়িয়ে হাত নাড়ছি,হয়তো অনন্তকাল।জানি না, ‘তুমি’ গর্ভের আগুন কোন গুহায় কার জন্য তপস্যায় অনন্ত পাথর হয়ে যায়। যখন মাটি তার রূপ হারায় তখন আকাশ নেমে আসে। ‘তুমি’ এসে ঠোঁটের দরজা খুলে দেয়। সম্ভ্রম আর বিভ্রমের মধ্যিখানে প্রেমের অর্থহীনতা মনখারাপের চোরাবালিতে ঢুকে পড়ে। ইতিহাসের পর ইতিহাস জামা বদলে যায়। মানুষের বেঁচে থাকার ভয়ানক অপেরা ছটফট করে। তোমার দুই স্তনের ইলেকট্রন বিপরীত ঘুর্ণনে আমার যাবতীয় অক্ষর কেবল অনুকম্পা ভিক্ষে চায়। এও এক বিভীষিকা। গাছের বোঝা নিয়ে কিভাবে বেঁচে থাকে তুমি, অচেনা মরণ কখন যে করাত আর তুরপুনে উল্কি এঁকে দেয় ঘাড়ে টের পাই না।
হ্যাঁ, তুমি, তোমাকে বলছি, যে ভঙ্গিতে পৃথিবীর মাঝখানে দাঁড়িয়ে তুমি আজ স্ট্যাচু অফ প্রপার্টি , তার চারপাশে দ্যাখো কেমন আদুল গায়ে পাহারা দিচ্ছে রোদ্দুর বাহিনী, তোমার ময়ুর মুদ্রা দেখে ছুঁকছুঁক বৃষ্টিরা ঠোঁট টিপে হেসেই চলেছে। ঈর্ষার ধোঁয়া উড়ছা দূর থেকে দেখছি আয়নার ভেতর ছুটছে বিজ্ঞাপনের আলো ফ্লাডলাইটের ক্যারিশমায় ধুন্ধুমার শরীর। চকচকে লতানো গান আঁকড়ে ধরছে গ্রাম শহর মাঠ তারপর আয় সখী, তোর দেহেতে আমি আলোহাতে বাজনা বাজাই, ওঃ সে কি মার মার জেল্লা। তোমাকে দেখলেই নজরবিহীন নৌকো খুঁজে নিচ্ছে অনন্তর নদীমুখ। তুলসি তলা ঘুমিয়ে পড়ে কান্নায়, তুমিই বলো রঙিন মাছেরা কতদিন বাঁচে কতদিন?