সোনালীস্বপ্ন ও কিছু অবাঞ্চিত ভাবনা ✒️✒️ রত্না রায়
সোনালীস্বপ্ন ও কিছু অবাঞ্চিত ভাবনা
রত্না রায়
উদাসী বিকেলে অগোছালো পায়ে এসে দাঁড়িয়েছিলাম দুআনির তীরে।
পাথুরে টিলার নীচ দিয়ে বয়ে চলা উচ্ছল দুরন্ত তটিনী।
আজ যেন শান্ত ধীরা যোগিনী।
ওর বুকের আয়নায় ছায়াঘোর অভিমানী আকাশটার
কপালে চুমু দিয়ে যাচ্ছে সোনালী রোদ্দুর।
সোহাগী রিনিঝিনি ঝর্নার আহ্লাদী কান্না মুছে নীলসাদা
লেসেরফ্রকে আদুরী মেঘবালিকারা করে হুটোপুটি।
ওই দূরে, রেললাইনের ধার ঘেঁষে স্বপ্নেভাসা রাশিরাশি
তুলোমনা কাশফুলেদেরও আজ সোচ্চার ভালবাসাবাসি! চুপিচুপিবাতাস শব্দের ঢেউ তোলে…
সময় হয়েছে তার আসার…
সে আসছে শিশিরভেজা সকালে মহানন্দে
শিউলিহাসি মেখে বিভঙ্গ তরঙ্গে পদ্মনুপুরের ছন্দে
শাখাউপশাখার উজানভাটির খেলায় এক পাহাড়ি মেয়ে।
তুই রেগে গিয়ে বলে উঠেছিলি
পাহাড়ি মেয়ে কি! বলো দুর্গা দুর্গতিনাশিনী।
দু..র..গ..তি..নাশিনী!
বড়ো বোকা তুই।
দুর্গতি যে পাকে পাকে জড়িয়ে আছে দুর্গাদের।
কন্যাজন্মছকের কালসর্পদোষের ক্ষয় নেই, নাশ নেই।
একের পর এক মন্ত্রপূত সূঁচ ছিঁড়ে ফেলে ছোট্টদুর্গা শরীর।
অগ্নিজ্বলা গৌরী নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় বারুদের পোড়া গন্ধে।
সময়ের দিনলিপি বদলে ফেলে শুধু খোলসের ধাঁচ।
নাম, পরিচয়,কানাগলির আনাচকানাচ।
হ্যাসট্যাগের গরমাগরম কর্পূরধর্মী হুল্লোড়ে
বাজারে বিক্রি হয় মুচমুচে চানাচুর।
গঙ্গাজলে হাত ধুয়ে ফুল বেলপাতা, চন্দন
শেষ হয় সন্ধিপুজোর আয়োজন।
চোখদুটো ঝাপসা ধুনোর ধোঁয়ায়।
পুষ্পাঞ্জলি , জয়ধ্বনি,
“অভয়ালক্ষী, মহিষাসুরমর্দিনী..”
কোথায় তোর অভয়ার অভয়!
বিশ্বকর্মার অভেদবর্মটা গিলি গিলিগের মন্ত্রে নিমেষেই পরিণত নীলব্যাথায়।
থিমের বাহারে জ্বলেনেভে দুর্গামাঈয়ের মুদ্রা বরাভয়।
তুই বলে উঠেছিলি, ভালো হবে না বলছি।
জগতজননী মহাদেবীকে নিয়েও বাজে কথা!
আমি হো হো করে হেসে উঠেছিলাম।
জগৎ!গ্যালাক্সি! কোন গ্যালাক্সি!
তুই বোধহয় শুধুমাত্র আমাদের এই চেনা পৃথিবীর কথা বলছিস!
আয়ুরেখার হিসেবটা কিছু পেলি দশপ্রহারিনীর সপ্তশতী মঙ্গললিপিতে!
একটা উল্কা বা মহাকাশের বাইপ্রোডাক্ট
কিংবা ওয়েষ্টপ্রোডাক্ট
পথভোলা পথিকের একটা উন্মত্ত আগুনে ঝড়।
ডাইনোসরের মতোই জননীর সন্তানরা বিলীন সর্বভূতে।
চেতনার গুহা থেকে মুখ বাড়ানো কষ্টগুলো মৃন্ময়ীর আলোকচ্ছটায় ঝলসে গিয়ে গুঙিয়ে ওঠে
কালেরস্রোতে মুছে যায় ‘কথামানবীদের” কন্ঠস্বর! সত্যবতী, খনা, মস্তানামা, মালতী মুদি আরও… আরও… আরও….
আচ্ছা বাদ দে এসব মহামায়া সনাতনীদের।
আমার বা তোর চিন্ময়ীমা
দিবে আর নিবের তত্বে যাদের প্রবল অনীহা।
সত্যি দুর্গাদের জন্য একটা খুশির উৎসব,,,, একটা জ্যান্ত দুর্গোৎসব,,,
ভাবিনা… আমরা ভাবিনা মন… কিচ্ছু ভাবিনা..
অসীম নৈঃশব্দের আড়ালে বিসর্জনের হুঁশিয়ারি ঢাকের আওযাজ মিলিয়ে যায়।
আর আমরা, বধিরতার অন্ধকূপে রক্তরঙ মেখে অহেতুক
সিঁদুর খেলে যাই।
তুই দুহাত কানে চেপে শিউরে উঠে বলে উঠেছিলিস
চুপ করো। এসব কথা শোনাও পাপ।
আমি দেখেছিলাম স্বর্গমর্ত্যের অধিকারিনী কুমারসম্ভবের নায়িকাকে।
মধুকৈটভহন্ত্রীর মোহিনীকটাক্ষে মোমবাতিদান উপচে পড়েছিল গলন্তমোম।
নাগচম্পার ভিজে ভিজে মাদক নেশায় ডুবে যেতে যেতে চোখের কোণে ভেসে এসেছিল মাঠের ওপারে লকলকে সবুজ ধানের শিসে জমে থাকা সুখরসের সবটুকু শুষে নিচ্ছে একঝাঁক গঙ্গাফড়িং।
কোথায় যেন তখন বাজছে…
“দশভূজা দশশাস্ত্র শালিনী
অদ্বিতীয়া তুমি অনন্যা”
্্্্্্্্্্্্্্্্্্্