স্বাধীনতা সংগ্রামে শরৎচন্দ্রের ভূমিকা প্রবন্ধ ✒️✒️ গীতশ্রী সিনহা
স্বাধীনতা সংগ্রামে শরৎচন্দ্রের ভূমিকা
প্রবন্ধ / গীতশ্রী সিনহা
প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া ভালো, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় সাহিত্যিক ছিলেন, রাজনীতিবিদ ছিলেন না। যদিও সত্য এটাও, সেই সময় কাজী নজরুল ইসলাম ও শরৎচন্দ্র ছাড়া আর কোনো কবি ও সাহিত্যিক রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হন নি। পরাধীন ভারতবাসীর কষ্টযন্ত্রণা উপলব্ধি করে এঁরা যেমন কলম ধরেছেন, তেমনি স্বাধীনতা সংগ্রামে যোগ দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথ ও সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ইংরেজ শাসন -শোষণ – পীড়ন ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লেখনী ধারণ করেছিলেন। কংগ্রেসের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগও ছিল, তবু রাজনীতির কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ অংশ নিতে উৎসাহী হননি। শরৎচন্দ্রের জীবনকথা থেকে আমরা জানতে পারি, দারিদ্রের সঙ্গে বাঁচা ছিল তাঁর প্রথম কাজ। জীবিকার সন্ধানে বর্মায় যান, কেরানিগিরি করেন। বর্মায় তিনি রাজনীতি করতেন কিনা জানা যায় না। সশস্ত্র বিপ্লবে বিশ্বাসী বিপ্লবীদের কথা হয়ত জানতেন। এমন অনুমানের কারণ, ” পথের দাবী ” উপন্যাস। যেখানে বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ডের একটা বড় অংশের আশ্রয়স্থল বর্মাদেশ। বিপ্লবী যাদু গোপাল মুখোপাধ্যায়ের ” বিপ্লবীর জীবনস্মৃতি ” গ্রন্থ থেকে জানা যায় ক্ষীরোদগোপালকে ১৯০৮ – এ বর্মায় পাঠানো হয়েছিল। তার সঙ্গে শরৎচন্দ্রের পরিচয় ঘটেছিল।বঙ্গভঙ্গ আআন্দোলনের সময়ও রেঙ্গুনবাসী শরৎচন্দ্রের প্রতিক্রিয়া জানা যায় না। ১৯১৬ খৃষ্টাব্দের মে মাসে তিনি কলকাতায় আসেন। এই সেই সময় যখন দেশজুড়ে রাওলটবিল নিয়ে হৈ চৈ শুরু হয়েছে। অন্যদিকে জালিয়ানওয়ালাবাগে নারকীয় হত্যাকাণ্ডে দেশবাসী স্তম্ভিত, শোকাহত। রবীন্দ্রনাথ ‘নাইটহুড ‘ উপাধি বর্জন করেন। যা জানতে পেরে শরৎচন্দ্র উচ্ছ্বাসিত হয়ে অমল হোমকে চিঠিতে লেখেন ( ১৬ আগাষ্ট ১৯১৯) —-
ইংরেজের মারমূর্তি খুব কাছে থেকেই দেখে নিলে ভালো করে। —– দরকার মনে করলেই ওরা যা কতো নিষ্টুর, কতটা পশু —– হতে পারে তা ইতিহাসের, পাতাতেই জানা ছিল এতোদিন —–
এবার প্রত্যক্ষ জ্ঞান হলো।
আর একলাভ —- দেশের বেদনার মধ্যে আমরা যেন নতুন করে পেলাম রবিবাবু কে। এবারে একা তিনিই আমাদের মুখ রেখেছেন।
১৯২০ – ৩১ এ গান্ধীজি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলে আমরা দেখি শরৎচন্দ্র তাতে যোগ দিয়েছেন। তাঁর প্রত্যক্ষ রাজনীতি চিন্তা ও কর্মের সূচনা এখানেই। পূর্ববর্তী ঘটনাগুলি অনুমান করা যায়, তার প্রস্তুতিপট রচনা করেছিল। যে জন্য তিনি হাওড়া কংগ্রেস কমিটির প্রেসিডেন্ট ও বি,পি,সি,সি,র সহ-সভাপতি হন।দেশবন্ধু ও সুভাষচন্দ্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতাও হয়। দেশবন্ধুর পরিকল্পনা মতো ” নারী কর্মমন্দির “স্থাপিত হলে, শরৎচন্দ্র তার অন্যতম সহযোগী হন।
রেঙ্গুন থেকে কলকাতায় শরৎচন্দ্রের প্রত্যাবর্তনের পর তৎকালীন উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলি এক নজরে দেখা যেতে পারে । ——-
১৯১৬ – লক্ষ্ণৌ চুক্তি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের সঙ্গে।
১৯১৭ – রুশ বিপ্লব ও বলশেভিকদের প্রতিষ্ঠা ঘটল।ভারতবাসীকে স্বায়ত্তশাসন দেবার কথা বলল ব্রিটিশ সরকার। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে চম্পারনের শুরু হলো কৃষক ও শ্রমিকের যৌথ আন্দোলন।
১৯১৮ – প্রথম মহাযুদ্ধ শুরু হলো। জার্মান পরাজিত হলো।
১৯১৯ – জার্মানির জেলে হত্যা করা হলো রোজা লুকসানবুর্গকে। ভার্সাই চুক্তি।
১৯২০ – লীগ অব নেশনসের প্রথম বৈঠক।
চিনে কমিউনিস্ট পার্টি তৈরি হলো। শুরু হলো খিলাফৎ আন্দোলন। কলকাতায় জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনে অসহযোগ আন্দোলনের সূচনা।
১৯২১ – প্রিন্স অব ওয়েলসের ভারতে আগমন ও প্রতিক্রিয়ায় ধর্মঘট, গুলি চালনা।
১৯২২ – মুসোলিনী কর্তৃক ইতালির শাসনভার গ্রহণ। প্রকাশিত হলো জেমস্ জয়েসের ” ইউলিসিস ” উপন্যাস।
১৯২৩ – কলকাতায় প্রকাশিত হলো ” কল্লোল ” পত্রিকা। লেখা হলো এলিয়টের ” দি ওয়েষ্ট ল্যান্ড ” কাব্য। তুরষ্কে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হলো।
১৯২৪ – মারা গেলেন লেলিন। ইংল্যান্ডে ক্ষমতায় এলো শ্রমিক সরকার অল্প সময়ের জন্য। কানপুর বলশেভিক ষড়যন্ত্র মামলা শুরু।
১৯২৫ – দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ মারা গেলেন। চলে গেলেন রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথও।
গ্রিসে প্রতিষ্ঠিত হলো প্রজাতন্ত্র। কানপুরে প্রথম কমিউনিস্ট সন্মেলন।
১৯২৬ – ইংল্যান্ডে প্রথম ধর্মঘট হলো। সোভিয়েত ইউনিয়নের নানা কলকারখানায় দেখা গেল মায়াকোভস্কি বক্তৃতা করছেন।
প্রকাশিত হলো ” পথের দাবী ” ও ” লাঙল ” পত্রিকা। কৃষ্ণনগরে নিখিল বঙ্গ প্রজা সম্মিলন।
১৯২৭ – সাইমন কমিশন গঠনও ভারতে আগমন।বিক্ষোভ। হাওড়া টাউন হলে জেলমুক্ত বিপ্লবীদের শরৎচন্দ্র সংবর্ধনা জানান।
স্বদেশ ও বিদেশের এইসব ঘটনাধারার প্রেক্ষিতে যদি আমরা শরৎচন্দ্র কে দেখি, তো বলতে হবে আন্তর্জাতিক ভাবনায় ততটা উদ্দীপিত নন।অবশ্য গোর্কির ‘ মাদার ‘ পড়েন, শ্রমিক আন্দোলন সমর্থন করেন। বিপ্লব নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর প্রখর ব্যক্তিত্বে তিনি আকৃষ্ট। চরকা কাটেন, খদ্দর পরেন। শেষ পর্যন্ত গান্ধীজীর মত ও পথে অবিচল থাকেন না। বরং তারুণ্যে উদ্ভাসিত সুভাষচন্দ্র ও সহিংস বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ড তাঁকে অনুপ্রাণিত করে। তথা সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিতে তাঁকে তেমন আগ্রহী হতে দেখি না। যা পাই নজরুলের মধ্যে। চৌরিচৌরার ঘটনার পর মর্মাহত শরৎচন্দ্র গান্ধীজির মত ও পথ থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।
গত বারো বছরের যে সালতামামি আমরা দেখেছি তার মধ্যে কয়েকটি ঘটনা শরৎচন্দ্রকে নাড়া দিয়েছিল, এটা সত্য।সেগুলো হলো ——
১) গান্ধীজীর অহিংস ও অসহযোগ আন্দোলন
২) দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের দেশের জন্য সর্বস্ব দান
৩) রুশবিপ্লব
৪) বাঙালি বিপ্লবীদের কর্মকাণ্ড ( যেমন, যাদুগোপাল মুখোপাধ্যায়, রাসবিহারী বসু, এম,এন,রায়।
৫) প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ইংরেজের সাম্রাজ্যবাদী ভূমিকা ও ফ্যাসিস্ট শক্তির আত্মপ্রকাশ। ব্রিটিশ বিরোধিতার স্বাক্ষর হিসেবে আমরা তাঁর ‘ সত্য ও মিথ্যা ‘ প্রবন্ধের কথা উল্লেখ করতে পারি, যা ‘ বাংলার কথা ‘ পত্রিকার ১৯২২ খৃষ্টাব্দে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশিত হয়। ১৯২৪ এ নজরুল ‘ ধূমকেতু ‘ পত্রিকা প্রকাশ করলে শরৎচন্দ্র কবিকে এই আশীষবাণী পাঠান —- ” যেন শক্রমিত্র নির্বিশেষে নির্ভয়ে সত্য কথা বলিতে পারো “। অসহযোগ আন্দোলন ব্যর্থ হলে ১৯২৪ এ শরৎচন্দ্র হাওড়া জেলা কংগ্রেসের সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি চান। ততদিনে বঙ্গ দেশে সহিংস আন্দোলন প্রবল হয়েছে। গোপীনাথ সাহা পুলিশ কমিশনার টেগার্টকে মারতে গিয়ে ভুল করে ফিল্টার ডেকে হত্যা করে। ফলে তাঁর ফাঁসি হয়। বিপ্লবীরা ক্রমে সক্রিয় হয়ে ওঠেন সর্বত্র। যার ফলে দেখা যায় কাকোরী ষড়যন্ত্র মামলা, দক্ষিণেশ্বর বোমা মামলা, আলিপুরের জেল হত্যাকান্ড মামলা ” ইত্যাদি। শরৎচন্দ্র সন্ত্রাসবাদীদের প্রতি সহানুভূতি দেখান। “তারুণের বিদ্রোহ ” বা ” স্বদেশ ও সাহিত্য ” গ্রন্থে তার পরিচয় আছে।
মনে হতেই পারে, দরদী ও মরমীএকজন কথাশিল্পী কেন এমনভাবে সন্ত্রাসবাদের পক্ষ নিলেন। আমার ধারণা, শরৎচন্দ্র তাঁর কৈশোর ও যৌবনের প্রথম পর্ব যেভাবে অতিবাহিত করেছিলেন ( ” শ্রীকান্ত ” উপন্যাসে যার কিছু আভাস আছে ) তাতে তিনি এডভেঞ্চার ও দুঃসাহসিকতা পছন্দ করতেন। তাই মহাত্মা গান্ধীর নরমপন্থা অপেক্ষা সুভাষচন্দ্রের চরমপন্থা তাঁকে আকর্ষণ করেছিল। যাদুগোপাল, রাসবিহারী বসু অনুপ্রাণিত করেছিল। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যর মতো তাঁরও বিশ্বাস —–
ওরা বীর, ওরা আকাশে জাগাত ঝড়।
ওদের কাহিনী বিদেশীর খুনে
বোমা বন্দুক গুলির আগুনে
আজও রোমাঞ্চকর।
তবু মনে রাখতে হবে শ্রীকান্তর প্রচ্ছদে যে শরৎচন্দ্র লুকিয়ে আছেন তিনি জন্ম রোমান্টিক। ‘ আগুন হাতে প্রেমের গান ‘ গাইতে তিনি পছন্দ করেন। যেজন্য চিঠিপত্রে ও উপন্যাসে বিপ্লব – ভাবনায় দুই শরৎচন্দ্রকে পাই। ‘বেনু ‘ পত্রিকার সম্পাদককে ১৩৩৬ এর ১০ চৈত্র তিনি উৎসাহ দিয়ে লেখেন, যৌনসমস্যাকে তারা প্রাধান্য না দিয়ে স্বদেশের কথা বলেছেন এটাই আশার কথা। লিখেছেন, ” পরাধীনতার, দুঃখই তোমাদের সকল ব্যথার বড় হয়ে তোমাদের এই পত্রিকায় বারে বারে ফুটে ওঠে “।আবার এই সম্পাদককে ওই একই সময়ে লেখেন —-
কোথাও দেখছে কি বিপ্লব দিয়ে পরাধীন দেশ
স্বাধীন হয়েছে কি? ইতিহাসে কোথাও এর নজির আছে ? —– বিপ্লবের মাঝে আছে ক্লাস ওয়ার, বিপ্লবের মাঝে আছে সিভিল ওয়ার —- আত্মকলহ ও গৃহবিচ্ছেদ দিয়ে আর যাই করা যাক, দেশের চরম শত্রুতে পরাভূত করা যায় না। বিপ্লব ঐক্যের পরিপন্থী।
রংপুরে বঙ্গীয় যুবসম্মিলনীতে বক্তৃতা বলেন, ” স্বাধীনতা সংগ্রামে বিল্পবই অপরিহার্য পন্থা নয়। ” অথচ ” পথের দাবী ” উপন্যাসে শরৎচন্দ্র বলেন —— বিপ্লব শান্তি নয়। হিংসার মধ্য দিয়েই তাকে চিরদিনই পা ফেলে আসতে হয় —- এই তার বর,এই তার অভিশাপ।
” পথের দাবী “ও সব্যসাচী অভিন্ন। উপন্যাসটি প্রকাশিত হলে বিপ্লবীদের মধ্যে সাড়া পড়ে যায়। গোপনে পাঠ চলে। অচিরে সরকার বইটি বাজেয়াপ্ত করেন। সারা দেশ যখন ইংরেজ বিরোধী আন্দোলনে সামিল,তখন ” পথের দাবী ” সেই উদ্দীপনার আগুনে ঘৃতাহুতি দিয়েছিল। সব্যসাচী তার বুকের আগুন নেভাতে চেয়েছে ইংরেজ সাম্রাজ্যের পতনে। যা সেই সময়ে সমস্ত দেশবাসীর ও স্বদেশবিপ্লবীদের কথাও বটে।” পথের দাবী” তে তিনি শ্রমিক শ্রেণীর গুরুত্বের কথা প্রথম বলেন।এর পিছনে গোর্কির ‘ মাদার ‘ এর ছায়া থাকা অসম্ভব কল্পনা নয়। ” পথের দাবী ” নিয়ে শরৎচন্দ্রের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের, মতান্তর হয়েছিল, যা আজ ইতিহাসের বিষয়। উপন্যাসটি যাতে মুক্তি পায়, শরৎচন্দ্র সেই অনুরোধ কবিগুরুকে করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথ জানিয়ে ছিলেন, শক্তিকে আঘাত করলে প্রত্যাঘাত সইতে হবে।
তবে দেশপ্রেম নিয়ে শরৎচন্দ্র গর্বিত ছিলেন। কাছের মানুষদের বলতেন তিনি ——-
যেদিন ভারতের স্বাধীনতার জন্য life and death Struggle আরম্ভ হবে, আমি বলছি তোমরা দেখো, সময় নিশ্চয়ই lead করবে বাঙালী।
অনেকেই মনে করেন এই নেতৃত্বদানকারীর নাম সুভাষচন্দ্র বসু।
বাংলার বিপ্লবীদের সঙ্গে শরৎচন্দ্র নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন, জীবনীকারেরা এ তথ্য জানিয়েছেন। সামতাবেড়ে বিল্পবীরা যেতেন, অর্থসাহায্যও পেতেন। শোনা যায়, অস্ত্র পর্যন্ত দেওয়া হতো। বারীন্দ্র ঘোষ, উপেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়, চারুচন্দ্র রায় প্রমুখের নাম এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায়। চন্দননগরের প্রবর্তক সংঘের মতিলাল রায়ের সঙ্গে শরৎচন্দ্রের বন্ধুত্ব ছিল – যিনি বিপ্লবী ছিলেন। বিপ্লবী হেমচন্দ্র ঘোষের সঙ্গেও ছিল ঘনিষ্ঠতা।তাঁকে নিজের রিভলবার থেকে গুলি বের করে দিয়েছিলেন শরৎচন্দ্র। সূর্য সেন কে পাঁচ হাজার টাকা সাহায্য পাঠিয়েছিলেন। ১৯২৭ – এ বিপিনবিহারী গাঙ্গুলি, সুরেন্দ্রমোহন ঘোষ, জ্যোতিষ চন্দ্র ঘোষ প্রমুখ মান্দালয় জেল থেকে মুক্তি পেলে শরৎচন্দ্র নাগরিক সভা ডেকে এঁদের সংবর্ধনা দেন, হাওড়ার টাউন হলে তাঁর ভাষণে বলেন ——–
দেশের জন্য এরা জীবন উৎসর্গ করেছে,
যৌবন উৎসর্গ করেছে, সর্বস্ব উৎসর্গ করেছে।
এঁরাই দেশের মুক্তির অগ্রদূত ! … গভর্নমেন্ট
সহস্র চেষ্টা করেও পারলে না ধ্বংস করতে,
তাদের মনের অপরাজেয় বল আর অন্তরের অনির্বাণ স্বাধীনতার স্বপ্ন।
চিরচঞ্চল চিরজীবী চিরতরুণ এঁরা।
এখন বিপ্লবী বন্ধু শরৎচন্দ্র কে ১৯৩০ এ চন্দননগরে আমন্ত্রণ করা হয় এবং প্রবর্তক সঙ্ঘে অভ্যর্থনা জানানো হয়। সেদিন উপস্থিত ছিলেন চারুচন্দ্র রায়, বসন্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, মতিলাল রায় প্রমুখ বিপ্লবী নেতৃবৃন্দ।এখানেই অভিভাষণে তিনি Reform নয়, Revolution চান বলেন। যার অর্থ ‘ আমূল-পরিবর্তন ‘। তাঁর ” পথের দাবী ” র সব্যসাচী বলে —- ” ভারতের স্বাধীনতা ছাড়া আমার নিজের কোনো আর দ্বিতীয় লক্ষ্য নেই “।যা বিপ্লবীদের নিঃসন্দেহে অনুপ্রাণিত করেছিল। যেজন্য শরৎচন্দ্রের মৃত্যুর পর ( ১৯৩৮) হরিপুরা কংগ্রেস অধিবেশনে সুভাষচন্দ্র বলেন Sarat chanda was a great artist no doubt but he was even greater as patriot.
শেষ পর্যন্ত শরৎচন্দ্র সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে যান। এমনকি শিবপুরে হাওড়া জেলার কংগ্রেস সম্মেলনেও যান নি। ” পথের দাবী ” র দ্বিতীয় খন্ড লিখব ভেবেও লেখেন নি। ” জাগরণ ” উপন্যাস শুরু করেও শেষ করেননি। যা শেষ হলে কৃষক আন্দোলনের ভিন্ন মাত্রা পাওয়া যেতো। তবু বাংলার স্বাধীনতা আন্দোলনে ও সংগ্রামে লেখক ও মানুষ শরৎচন্দ্রের ভূমিকা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।