“প্রেম না’কি পাপ” 🖊️মৌসুমী মন্ডল দ্বিতীয় পর্ব…….
“প্রেম না’কি পাপ”
🖊️মৌসুমী মন্ডল
দ্বিতীয় পর্ব…….
ঘরে AC চলছে… তবুও অর্ক প্রভর ফর্সা কপালে স্বেদ বিন্দুর উপস্থিতি স্পষ্ট। তৃপ্ত,ঘুমন্ত অর্কর মুখের দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে শ্রী।
উচিত -অনুচিত ভুলে শ্রী-র মন বলেছে ও যা করেছে ঠিক করেছে। অর্কর প্রতিটা স্পর্শে আজ যে পরিমাণ সুখ পেয়েছে তা এত বছরে প্রদীপ্তর থেকে পায়নি। অর্কর ভালোবাসায় একটা উদ্দামতা আছে,এই ওয়াইল্ডনেস আর প্যাশনটাই শ্রী খুঁজত ওর হাসব্যান্ডের মধ্যে। কিন্তু প্রদীপ্ত-র স্পর্শ খুব কোমল, কামনার থেকেও স্নেহের আভাস পাওয়া যায় ওর ভালোবাসায়। চরম উত্তেজনার মুহূর্তেও প্রদীপ্ত খেয়াল রাখে অনু-র যাতে কোনোরকম কষ্ট না হয়!! নিজের সুখের জন্য অনু-কে যন্ত্রণা দেওয়ার কথা ভাবতেই পারেনা প্রদীপ্ত। অর্কর ভালোবাসা পাহাড়ি ঝর্ণার মত উত্তাল আর প্রদীপ্ত র ভালোবাসা শান্ত দীঘির মত ধীর… গভীর।
দুই পুরুষের প্রেম একজন নারী-র প্রতিই সমর্পিত… শুধু দুজনের প্রেমের প্রকাশ আর পদ্ধতি ভিন্ন..
কিন্তু অনুশ্রী-র মস্তিষ্ক ওকে বারংবার বোঝাচ্ছে যে আজ যেটা হল সেটা একেবারেই অনুচিত.. অনৈতিক। প্রদীপ্তর -র পবিত্র ভালোবাসা আর বিশ্বাসের অমর্যাদা করেছে অনুশ্রী। মন আর মস্তিষ্কের দ্বন্দ্বে ক্লান্ত শ্রী অবশেষে বিছানা ছেড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে…
সেদিন রাতে অনুশ্রীর প্রতি প্রদীপ্তর যখন নিজের সমস্ত ভালোবাসা উজাড় করে দিচ্ছিল,তখন অনু-র শরীর যেন অর্ক প্রভ কেই খুঁজে বেড়াচ্ছিল, কিন্তু প্রদীপ্ত যাতে কোনোভাবেই কিছু বুঝতে না পারে তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার আপ্রাণ চেষ্টা করতে থাকে অনুশ্রী।
সবশেষে ক্লান্ত প্রদীপ্ত ঘুমিয়ে পড়লেও অনুশ্রী-র চোখে ঘুম নেই। ওর বারবার অর্কর সেই পাগল করা ভালোবাসার কথা মনে পড়ছিল। তবে অনুশ্রী-র মন আর মস্তিষ্কের মাঝে যে যুদ্ধ চলছিল, তাতে মনের-ই জয় হল, প্রদীপ্তর বিশ্বাসের মান রাখার চেয়ে নিজের সুখ-কেই অগ্রাধিকার দিল অনুশ্রী। হয়তো কামনার চাদরে ঢাকা অনুশ্রীর -র মন প্রদীপ্তর নিঃস্বার্থ ভালোবাসার গভীরতা বুঝতে অক্ষম অথবা প্রদীপ্ত নিজের স্ত্রী-র আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে ব্যর্থ!!
জন্মদিনের পর থেকেই অনুশ্রী যেন বেপরোয়া হয়ে উঠল। ওর মনের যাবতীয় শঙ্কা, অপরাধ বোধ এক লহমায় ধুয়ে মুছে যায়। এবার প্রদীপ্তর সাথে সাথে ওর কলেজ পড়ুয়া মেয়ে তিতলি ও অনুশ্রী-র এই পরিবর্তন লক্ষ্য করে। আজকাল অনুশ্রীর চোখে মুখে একটা চঞ্চলতা দেখা যায়, সবসময় অন্যমনস্ক থাকে, ফোন নিয়েই ব্যস্ত থাকে, যখন তখন শপিং-এর নাম করে বাইরে বেরোয় আর কেউ কিছু বলতে গেলেই অশান্তি-কান্নাকাটি শুরু করে।
-অর্ক তুমি আমাকে ভালোবাসো তো?
-অফ কোর্স ভালোবাসি শ্রী!
– আমাকে কোনোদিন ছেড়ে যাবে না তো??
– আমি তোমাকে ছেড়ে কোথায় যাব শ্রী? তুমি এত স্ট্রেস নিও না।
.. আমি আর পারছি না অর্ক! তোমার সাথে আমি একটু ভালো থাকতে চাই!
-ওকে ওকে রিল্যাক্স!! এবার ফোন রাখো, আমি অফিসে।একটু ব্যস্ত আছি।
-হুম বাই।
*************
শ্রী শুধু অর্ক র সাথে আবার মিলিত হওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনতে থাকে। তিতলির আঠের তম জন্মদিন খুব ধূমধাম করে পালিত হয়। অনুশ্রী-র জোরাজুরিতে অর্ক প্রভ ও আসে। প্রদীপ্ত খুব অবাক হয়েছিল সেদিন, যে শ্রী নিজের চেনাজানাদের পর্যন্ত কোনোদিন কোনো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ করতো না সে হঠাৎ ফেসবুক থেকে পরিচিত অর্ক প্রভ -কে তিতলির র জন্মদিনে আসতে বলেছে?!!
কদিন ধরেই অনুশ্রী র মন, শরীর কোনোটাই ঠিক যাচ্ছে না। একদিন রাতের বেলা ঘুম আসছে না অনুশ্রী-র,কেমন যেন অস্থির লাগছে। প্রদীপ্ত গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন দেখে আস্তে আস্তে অনুশ্রী ফোন হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে যায়।অর্ক প্রভর সাথে কথা বলতে বলতে বিভোর হয়ে যায় নিজের জগতে।
“অর্ক প্রভর সাথে কথা বলছ শ্রী?”
প্রদীপ্তর গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে আরেকটু হলেই অনুশ্রী-র হাত থেকে ফোনটা পড়ে যেত!
-“প্রদীপ্ত তুতু… তুমি?”
-ডিসটার্ব করলাম বুঝি?
-নান্ না মানে আসলে…
-আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে অনু।
সন্দেহ তো অনেকদিন আগেই হয়েছিল কিন্তু নিশ্চিত হলাম তিতলির জন্মদিনের দিন।