“প্রেম না’কি পাপ” 🖊️মৌসুমী মন্ডল প্রথম পর্ব…..
“প্রেম না’কি পাপ”
🖊️মৌসুমী মন্ডল
প্রথম পর্ব…..
সেদিন দুপুরে খাওয়া দাওয়া সেরে বিছানায় আধশোয়া হয়ে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের “অরণ্যের দিনরাত্রি” পড়ছিল অনুশ্রী। টুং করে একটা নোটিফিকেশন ঢুকল ফোনে… ফোনটা হাতে নিয়ে অনুশ্রী দেখল ফেসবুকে কেউ একজন ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছে।সাথে একটা মেসেজ “আমি অর্কপ্রভ,বন্ধুত্বের হাত বাড়ালাম।যদি বন্ধু হওয়ার যোগ্য মনে করেন,হাত বাড়াতে পারেন”। প্রোফাইলটি খুলতেই দেখলো অর্কপ্রভ
নামে একজনের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট।রিকোয়েস্ট অ্যাক্সেপ্ট করার পর অনুশ্রী প্রোফাইলের ছবিগুলো দেখতে থাকে। বিভিন্ন কায়দায় তোলা সব ছবি,যা দেখে যেকোনো নারীর মনে ঝড় তুলতে সক্ষম!!
অনুশ্রী অর্কপ্রভকে অনলাইন দেখে ম্যাসেঞ্জারে “হ্যালো”লিখে অপেক্ষা করতে লাগলো।
অনেকক্ষণ কোনো রেসপন্স নেই দেখে সবে ফোনটা অফ করতে যাবে এমন সময়ে ইনবক্সে অর্কপ্রভর ছবির পাশে তিনটে বিন্দুর ওঠানামা শুরু হয়।
ধীরে ধীরে আলাপ জমে।অর্কপ্রভ আই টি সেক্টরের ইঞ্জিনিয়ার,মাঝবয়সী।
কথা বলতে বলতে অর্কপ্রভর মধ্যে একজন উচ্চকাঙ্ক্ষী, পরিশ্রমী পুরুষকে খুঁজে পাচ্ছিল অনুশ্রী।
দিন কাটতে লাগলো, অনুশ্রী আর অর্কপ্রভর মধ্যে বন্ধুত্ব দৃঢ় হতে লাগলো। ফোন নম্বর আদান প্রদান, চ্যাটিং, দেখা সাক্ষাৎ সবই চলতে থাকে দু’জনের মধ্যে। দু-একদিন অর্কপ্রভর অফিসে পর্যন্ত ঘুরে এসেছে অনুশ্রী,অর্কপ্রভর বন্ধু পরিচয়ে। তবে সবকিছুই চলছিল অনুশ্রীর স্বামী প্রদীপ্তকে লুকিয়ে।
কথায় আছে আগুন আর ঘি পাশাপাশি রাখলে দাবানল সৃষ্টি হতে সময় লাগে না! তেমনি অনুশ্রী আর অর্ক প্রভর হৃদয় মিলিত হতেও সময় নিল না। অর্কপ্রভর কাছে অনুশ্রী হয়ে গেল শ্রী আর অনুশ্রীর কাছে অর্কপ্রভ শুধুই অর্ক।শ্রী-আর অর্ক পরস্পরকে পাগলের মত ভালবাসে। আর সেই প্রেম পরিণত হয় পাঁচটা পরকীয়ার মতই!! অর্কপ্রভর মধ্যে একজন “প্যাশনেট” লাভারের হদিস পায় অনুশ্রী-র “বেহায়া”,“লোভী” মন। যদিও অনুশ্রী-র দাম্ভিক মন এই সত্যটা স্বীকার করতে প্রস্তুত ছিল না, ও নিজেদের সম্পর্কটাকে নিছক বন্ধুত্ব বলেই নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে।
এদিকে অফিসে প্রোমোশনের পর নতুন দায়িত্ব পেয়ে প্রদীপ্ত অসম্ভব ব্যস্ত হয়ে পড়ে,কিন্তু তার মাঝেও নিজের পরিবারকে এতটুকুও অবহেলা করেনি ও। নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়েও স্ত্রী, সন্তান, বাবা মা-র প্রতি নিজের কর্তব্য পালনে কোনো ত্রুটি রাখেনি। যেই পরিবারের জন্য ও আজ উন্নতির শিখরে পৌঁছেছে সেই পরিবারকে কি করে ভুলতে পারে সে!
তবে হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও অনুশ্রীর-র পরিবর্তন প্রদীপ্তর নজর এড়ায় না। আজকাল অনুশ্রী যেন একটু অন্যমনস্ক থাকে!! সবার মধ্যে থেকেও যেন থাকে না, ঠিক সদ্য প্রেমে পড়া অষ্টাদশীর মতো। অনুশ্রী-কে কিছু জিজ্ঞেস করলে “কিছু না” বলে, আবার নিজের স্ত্রীকে সন্দেহ করে তাকে ফলো করতে বা চুপিচুপি তার ফোন ঘাঁটতে রুচিতে বাঁধে প্রদীপ্তর!! এদিকে অনুশ্রী-কে অবিশ্বাস করতেও মন চায় না প্রদীপ্তর। সময়ের হাতে সবকিছু ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না ওর!
*****************************************
রাত পোহালেই অনুশ্রী-র জন্মদিন। ঠিক রাত বারোটায় প্রদীপ্ত প্রতিবারের মতই একটা নতুন শাড়ি আর কানের দুল দিয়ে উইশ করে তার প্রাণপ্রিয়া-কে! এবারে অনু-র জন্য একটা গর্জিয়াস শিফনের শাড়ি এনেছে প্রদীপ্ত। শাড়ি আর গয়না পেয়ে অনু খুশিতে জড়িয়ে ধরে প্রদীপ্ত-কে, যদিও কানের দুলটা আরেকটু বড় হলে বেশি খুশি হত ও! সবকিছুর মধ্যেও অনু-র মন ফোনের দিকেই বেশি, বিশেষ কারোর শুভেচ্ছাবার্তা-র অপেক্ষা করছে যেন!! প্রদীপ্ত লক্ষ্য করে অনু-র এই উৎকন্ঠা!
প্রদীপ্ত প্রশ্ন করলে অনু উত্তর দেয়,“আরে তেমন কিছু না,ঐ আমার সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক ফ্রেন্ডস আছে তো ,তারা এখনো উইশ করছে না তাই আর কি! তুমি শোও প্রদীপ্ত, সারাদিন কত কাজ করো!! ইউ নিড রেস্ট”
সন্তোষজনক উত্তর না পেলেও প্রদীপ্ত চুপচাপ শুয়ে পড়ে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অনুশ্রী ফোন অন করে….সবার বার্তা উপেক্ষা করে অর্কপ্রভর ইনবক্স খুলে নেয়…
“হ্যাপি বার্থডে শ্রী…স্টে হেলদি অ্যান্ড ইয়ং… কালকে প্লিজ একবার দেখা করো ……আই ওয়ান্ট টু সেলিব্রেট ইওর বার্থডে… প্লিজ কাম”
উত্তেজনায় অনুশ্রী-র হাত কাঁপতে থাকে, কোনোরকমে “থ্যাঙ্ক ইউ” লিখে ফোন রেখে দেয়। কালকে কখন যাবে, কিভাবে যাবে, বাড়িতে কি বলবে এসব ভাবতে ভাবতেই অনুশ্রী ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দেয়।
সকালে উঠে অনুশ্রী তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট সেরেই স্নান করে নেয়। তারপর প্রদীপ্তর দেওয়া সেই শিফনের শাড়ি আর কানের দুলে নিজেকে সাজিয়ে নেয়।
হালকা প্রসাধনে অনুশ্রী-র সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পায়।
সেজেগুজে চঞ্চলা হরিণীর মতো সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে যায়…কিন্তু বেরোনোর সময়েই প্রদীপ্ত গম্ভীর মুখে ওকে জিজ্ঞাসা করল,“কোথায় যাচ্ছ অনু?”
অনুশ্রী কি উত্তর দেবে বুঝে পায় না, কোনোরকমে কাঁপা গলায় বলল,“প্রদীপ্ত, আসলে কয়েক জন ফেসবুক ফ্রেন্ড আমার বার্থডে সেলিব্রেট করতে চাইছে, ওখানেই যাচ্ছি।”
“বেশ,যাও তবে দেরী করোনা!” বলে প্রদীপ্ত চলে যায়।
অনুশ্রী-ও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো,আর দেরি না করে রওনা দিল অর্ক প্রভর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে…
************
অর্কপ্রভ অনুশ্রী কে নিয়ে যায় তার নীলাদ্রির ফাঁকা ফ্ল্যাটে।
এদিকে কেক কাটা পর্ব মিটলে………
অর্ক প্রভ আলতো করে জড়িয়ে ধরে অনুশ্রী কে।তারপর
ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় শ্রী-র ঠোঁটের দিকে। শ্রী-র হৃৎস্পন্দন ও বাড়তে থাকে, উত্তেজনায় চোখদুটো বন্ধ করে দেয়, সঙ্গে সঙ্গেই প্রদীপ্তর মুখটা ওর সামনে ভেসে ওঠে! ও ছিটকে সরে আসতে যায় কিন্তু ততক্ষণে অর্ক ওকে নিজের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ করে শ্রী-র ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে দেয়। প্রথমে একটু অস্বস্তি হলেও ধীরে ধীরে শ্রীও অর্ককে জড়িয়ে ধরে।অর্ক শ্রী-কে নিয়ে বেডরুমের দিকে এগিয়ে যায়। শ্রী-কে বিছানায় ফেলে নিজের জামাটা খুলে নেয় অর্কপ্রভ, তারপর একটানে শ্রী-র শাড়িটাও খুলে ফেলে। প্রদীপ্ত র ভালোবেসে দেওয়া উপহার ভূলুন্ঠিত অবস্থায় ভালোবাসার বিশ্বাস ভঙ্গের সাক্ষী হয়ে থাকে।
ধীরে ধীরে অর্ক প্রভর পৌরুষের কাছে শ্রী-র উচিত অনুচিত বোধ পরাজিত হয়ে যায়… হারিয়ে যেতে থাকে একে অপরের শরীরী উষ্ণতায়….