ভাগাড় ✒️✒️ গীতশ্রী সিনহা
ভারতীয় স্বনামধন্য কবি শ্রদ্ধেয়া গীতশ্রী সিনহার বিখ্যাত “ভাগাড়” কবিতাটি পর্যালোচনা করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। আমি সবার আশীর্বাদ প্রার্থিনী। এভাবেই যেন আমি এগিয়ে যেতে পারি। 🙏🙏
ভাগাড়
গীতশ্রী সিনহা
সময়ের গা ঘেঁষে বিবর্ণ ইতিহাসের ছোপ চুঁইয়ে নামে …
বিছানা খোঁজে নিশীথ যন্ত্রণায়… অট্টহাস ভাসে সময়ের শরীরে
কড়িকাঠে চোখ রেখে বীজ পুঁতি স্বপ্ন লোধ্র শিকড়ে…
কাল – রাত্রির দেওয়ালে তোলপাড় শ্লোগানের শ্লোক
কতোদিন চুম্বনের দাগ পড়েনি অবাঞ্ছিত সময়ের চিবুকে…
শুনেছি ! ক্রিয়েটিভ মানুষরা নাকি অগোছালো থাকে ! বিভ্রান্ত থাকে
বন্ধুহীন জীবন কার্নিশে শ্যাওলার মতো একলা দুপুর কাটায়…
সম্পর্কের বাজারে বন্ধু খোঁজার তল্লাশি চলে, বাহারি সম্পর্কের পসরা সাজিয়ে বসেছে দেশীয় পণ্যের বাজার…
শব্দহীন মানুষের ভীড় শান্ত অন্ধকার… কঙ্কাল !
শৈশব সময় সম্পর্ক, প্রিয় সন্ধির আবছা ফ্রেম…
দেহের মূল থেকে উপড়ে যায়… মুছে যায় দাগ
নত হয় ব্যাকরণ শব্দের কাছে… লেখা হয় ক্ষত্রিয় পান্ডুলিপি…
শ্মশানের চুল্লিতে শ্রাদ্ধের আয়োজন চলছে, হাড় মজ্জা হৃৎপিন্ড
লাশ পোড়ার গন্ধ আলপিনের মতো গায়ে এসে জড়ায়…
এদিকে… অবিচার করার হাতের প্রোফাইল বিচার করতে বসি !
সূর্যের থেকে আগুন ধার করে জীবন কাটে দেওয়ালে লেগে থাকা টিকটিকি জীবন !
স্তূপীকৃত আস্তাকুঁড়ে লটকে থাকে গবাদিপশুর সাথে জীবন্ত লাশ…
প্রকান্ড শাবলের ছোবলে সভ্যতার অন্ধকার রূপান্তর হয় ত্রিকাল-মায়ায়। ভাগাড় চাপা অন্ধকার থেকে আলোর দূরত্ব ঠিক জানা নেই …! জানা আছে সভ্যতার দূরত্ব… !
অট্টহাসির মতো পিন্ডদানের মন্ত্র উচ্চারণ হতে থাকে… বেওয়ারিশ লাশের পাশে ঠিকানা হারানো জ্যান্ত লাশের তাল…
মা কালী দিব্যি বলছি লিখতে চাই না… সবটাই আসলে লেখার চোখে দেখি যে … !
———————————
সান্ত্বনা মজুমদার (বাংলাদেশ)
তারিখঃ ১৬/১০/২০২২ ইং
ভারতীয় প্রথিতযশা কবি,লেখক,নাট্যকার,
অভিনেত্রী,গায়িকা তথা পত্রিকা সম্পাদক অজস্র গুণে গুণান্বিতা “গীতশ্রী সিনহা” দি’ভাইয়ের দৃঢ় হস্তে প্রস্ফুটিত কবিতার শতদল শতরঙে শোভামান…
হাজারও মৌ পিপাসু পাঠক যে লেখার মধুপানে মত্ত,প্লাবিত থাকে সদা আনন্দ রসধারায়। কবিতার সাহিত্য সরোবরে হংস হয়ে ভেসে বেড়ান,সেখানে আমার মতো ক্ষুদ্র ভক্তের হৃদয়ঙ্গমকৃত অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ অতীব নগণ্য। গগনচুম্বী পর্বত স্পর্শ করার স্পর্ধা আমার নেই। দি’ভাইয়ের স্নেহাশীর্বাদের হস্ত শিরে ধারণ করে তারই অজস্র কবিতা সম্ভার থেকে তুলে নিলাম বিখ্যাত “ভাগাড়” কবিতাটি। আমার হৃদয়স্পর্শকারী এই কবিতাটির বিশ্লেষণাত্মক মন্তব্য আমার জন্য ততটাই কঠিন,যতটা কঠিন সমুদ্র গর্ভে পৌঁছে অগণিত ঝিনুক থেকে নেয়া একটি ঝিনুক খুঁজে মুক্তো তুলে আনা। বাস্তবতার নিরিখে হৃদয় দহনের অন্তর্জ্বালা থেকে নির্গত চরণদ্বয়ের সজ্জিতরূপ “ভাগাড়” কবিতা।যার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য সমাজ সচেতনতা,মানব মনে বিবেক জাগ্রতপূর্বক সভ্যতার সমুজ্জ্বল অবয়ব অক্ষুন্ন রাখা।সম্পর্কের বন্ধনকে সুদৃঢ় করে ভ্রাতৃত্ববোধে আলোকোজ্জ্বল ভবিষ্যতে অগ্রসর হওয়া।প্রেম-ভালোবাসা বিহীন জীবন যন্ত্রণায় অসহায় মানুষগুলো কার্নিশে লেপটে থাকা শ্যাওলার মতো জীবন কাটায়। রৌদ্রোতপ্ত দুঃখের দহনে শুষ্ক হয়ে বিলীনপ্রায় অস্তিত্ব কালচে দাগে পরিনত হয়। অশ্রুধারায় উজ্জীবিত প্রাণ। যেমনটা ভারী বর্ষণে শ্যাওলার সজীবতা পুনরুত্থান হয়। অগোছালো,বিভ্রান্ত,ব্যথাতুর মন বন্ধু খোঁজে,প্রিয়জনের সান্নিধ্য পেতে চায়। খুঁজে না পাওয়ার বেদনায় একাকীত্বের প্রহর গোণে দুপুরের নির্জনতায়। ভালোবাসা এখন বিক্রি হয় দোকানের আলু পটলের মতো। বাহারী সম্পর্ক প্যাকেটজাত করে পসরা সাজিয়ে বসেছে বিপননকারীরা। হরেক রকম প্রোডাক্ট,চটকদার প্রসাধনীতে ঢাকা পড়া অপার্থিব সম্পর্ক গুলো হারিয়ে স্তব্ধ মানুষ। বাকরুদ্ধ,শান্ত এক একটা কঙ্কাল। বিবেক বর্জিত মানুষ শ্মশানের চুল্লীতে হাড়,মাংস জ্বালিয়ে উৎসবের আয়োজন করে। পুড়িয়ে ছারখার করে,বিনষ্ট করে সভ্যতা।লাশ পোড়া গন্ধ ছড়ায় আকাশে বাতাসে।দূষিত করে প্রকৃতি, সুস্থ জীবন। অশ্লীল বাক্যে কলুষিত করে শ্রুতি মধুর শব্দ সম্ভার। কলঙ্কিত ব্যাকরণ আলপিনের মতো শরীর ঝাঁঝরা করে,রক্তাক্ত করে-
শব্দেরা চুপ হয়ে ভাষা হারিয়ে যায়। অলিখিত রয়ে যায় পান্ডুলিপি। প্রকান্ড শাবলে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে সভ্যতাকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেয়। লাশের উপর লাশ স্তুপীকৃত করে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে। যেন ঠিকানা বিহীন সেই বেওয়ারিশ লাশের মন্ত্র উচ্চারিত হয়, ধ্বনিত হয় আকাশে বাতাসে। ভাগাড় চাপা অন্ধকারে পড়ে থাকা জীবন্ত লাশ কখনো আলোর সন্ধান পায় না।
শ্রদ্ধেয়া প্রিয় কবি “গীতশ্রী সিনহা” এবং পর্যালোচনা কারিনী, দু’জনের জন্যেই শুভ কামনা অনিঃশেষ।