কবিতাঃ “কুলির জীবন” কলমেঃ সান্ত্বনা মজুমদার

কবিতাঃ “কুলির জীবন”
কলমেঃ সান্ত্বনা মজুমদার

সেদিন বসে আছি কমলাপুর
রেল স্টেশনে,
সকাল আটটার ট্রেনে
ফিরবো গন্তব্যে।
হঠাৎ দেখি শার্ট-প্যান্ট
টাই,সু পরা এক ভদ্রলোক
ঝড়ের গতিতে এসে
থামলেন আমার সামনে।
নাদুস-নুদুস,ফর্সা,লম্বা করে
পিছনে ঠিক তার বিপরীত
কালো,রোগাক্লিষ্ট,লিকলিকে
এক লোক ভারী বোঝা মাথায়
নামালো এক এক করে।
কোমরে বাঁধা ময়লা,ছেড়া
গামছা খানা দিয়ে
কপালের ঘাম মুছে
শার্টের খোলা দুটো বোতাম
আটকে নিল।
ঠোঁটের কোনে এক চিলতে
হাসি। সাহস করে বলল,
“বাবু,দশটা টাকা বকশিস
দেবেন,সামনে পুজো…..
তিন,চারটে ছেলে মেয়ে
বুড়ো মা-বাবা…..”
কথা শেষ না হতেই বাবু
খেঁকিয়ে উঠলেন,
“খেতে পরতে পাস না
তোদের এতো ওভার
প্রোক্রিয়েট আসে কোথা থেকে?”
ইংরেজিটা না বুঝে লোকটা
একবার আমার দিকে
একবার বাবুর দিক
ফ্যাল ফ্যাল করে তাকালো।
বাবু মানিব্যাগ বের করে
আকাশ থেকে পড়লেন,
“সেকি রে,খুচরা নাই যে!
নে ধর,এই চল্লিশ টাকা-”
লোকটার মুখ ফ্যাকাশে
হয়ে গেল,মিনতির সুরে
বলল,”বাবু পঞ্চাশ টাকা
দেবার কথা ছিল-”
পুনরায় খেঁকিয়ে উঠলেন বাবু,
“দেখছিস না খুচরা নাই
সব পাঁচশো টাকার নোট?”
বিরক্তির সুরে বললেন,
“গ্রেট বেগার!”
এবার আমি উঠে দাঁড়িয়েছি,
আমার সঙ্গী আমায় টেনে
বসিয়ে দিয়ে বললেন,
“অপমানিত হতে যেওনা,
পারলে তুমি ওকে দশটা
টাকা দিয়ে দাও।”
ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকেছে
সবাই ছুটছে-
আমি লোকটার হাতে
দশটা টাকা গুজে দিয়ে
পা বাড়ালাম ট্রেনের
উদ্দেশ্যে। লোকটা
অপলক তাকিয়ে রইল
ধেয়ে আসা ট্রেনটার দিকে……

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *