রবীন্দ্রনাথের ‘ শাস্তি ‘ – প্রত্নপ্রতিমার সন্ধানে প্রবন্ধ / গীতশ্রী সিনহা
রবীন্দ্রনাথের ‘ শাস্তি ‘ – প্রত্নপ্রতিমার সন্ধানে
প্রবন্ধ / গীতশ্রী সিনহা
” চন্দরা কহিল মরণ ” —
এই ‘ মরণ ‘ শব্দটিকেই যদি রবীন্দ্রনাথের ‘ শাস্তি ‘ গল্পের keyword রূপে গ্রহণ করি, অসংগত হবে না। ছিদাম রুই – এর বউ চন্দনা – এর এই অন্তিম সংলাপটিকে আমরা সমগ্র গল্পের বীজবাক্য বলতে পারি। বিনা দোষে ফাঁসির শাস্তি প্রাপ্ত চন্দরার মৃত্যু তিলে তিলে ছিদাম, দুখিরাম কে দগ্ধ করে যাবে। বেঁচে থেকেও মরার অধিক যন্ত্রণা।
‘ শাস্তি ‘ গল্পের নামকরণ ও keyword ‘ মরণ ‘ একসূত্রে গাঁথা এবং গভীর তাৎপর্যবাহী। গল্পের আদিবয়ান থেকে আমরা সেই যোগসূত্র খুঁজে বের করার আগে দুটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্নের সম্মুখীন হই —-
১) জন্ম – মৃত্যু বলয়িত এই মানবজীবনে অনিবার্য ঘটনা মরণ, তাই একে কি শাস্তি বলা চলে ?
২) রবীন্দ্র মানসে মৃত্যুর অভিঘাত কি প্রবলতা তাঁর জীবন ও সাহিত্য মিলিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। এদিকে ” মরিতে চাহিনা আমি সুন্দর ভুবনে /মানবের মাঝে আমি বাঁচিবারে চাই ” যেমন বলেন তেমনি ‘ মরণ রে তুঁহু মম শ্যাম সমান ‘ তাঁরই লেখনী প্রসূত বাণী। তাই যে চন্দরা স্বেচ্ছায় নিজের অকৃত কর্মকে স্বীকার করে নেয় তার মৃত্যু অন্যের কাছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি হয় কেন ?
প্রশ্নগুলির উত্তর নিহিত আছে পাঠকৃতি ( Text ) – এর মধ্যেই। আপাতদৃষ্টিতে চঞ্চলা, প্রগলভা, নবযুবতী চন্দরা আর পাঁচটি গ্রামবাংলার বধূর মতোই স্বামী – সংসার নিয়ে সুখী হওয়ার স্বপ্ন দেখতো। বড় জা রাধার সঙ্গে নিত্যকলহ কিংবা কালী মজুমদারের মেজো ছেলের প্রচুর প্রশংসা করার আড়ালে ছিদামের প্রতি সদাশঙ্কিত ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। অন্যদিকে ছিদামও স্ত্রী কে গভীরভাবে ভালোবাসতো।ভালোবাসা ও অধিকার হারানোর ভয় দু’জনকেই দারুণ ভাবে পেয়ে বসেছিল। রবীন্দ্রনাথ ছিদাম সম্পর্কে মন্তব্য করেছেন —-
‘ মানুষের উপর মানুষের যতটা ঈর্ষা হয় মনের উপর এতটা নহে ‘ কারণ, ‘ এক অঞ্জলি পারদ ‘ – এর মতো চন্দরা কে নিয়ে ছিদামের ভয়, অশান্তি ও আশঙ্কার পাশাপাশি মনে হতো ——
‘ এমন কি এক একবার মনে হইত, এ যদি মরিয়া যায় তবে আমি নিশ্চিত হইয়া একটুখানি শান্তিলাভ করিতে পারি। ‘
আর ঠিক এই মানসিকতায় যখন ছিদাম ছিল তখনি ঘটলো এই হত্যাকাণ্ড। পরিশ্রান্ত দুখিরাম ভাত চেয়ে যখন শোনে স্ত্রীরা ঝগড়া করে রোজ দিনের মতো বসে আছে এবং রাধার শ্লেষাত্মক কথা —– ” ভাত কোথায় যে ভাত দিব। তুই কি চাল দিয়া গিয়াছিলি। আমি কি নিজে রোজগার করিয়া আনিব “।
দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে দা বসিয়ে দেয় তার মাথায়।আর এরপরেই অনুতপ্ত দুখিরাম,হতবুদ্ধি চন্দরা আর ছিদাম এর জীবননাট্যে সেই অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন। বাকি পাওনা নিতে আসা রামলোচন চক্রবর্তীকে ছিদাম হঠাৎ ই বলে ফেলে — ” ঝগড়া করে ছোট বউ বড় বউয়ের মাথায় এক দায়ের কোপ বসাইয়া দিয়াছে ‘ এবং তারপর বউকে বাঁচাতে দাদার ঘাড়ে দোষ চাপাতে চায় না, কারণ —-
‘ ঠাকুর বউ গেলে বউ পাইব,কিন্তু আমার ভাই ফাঁসি গেলে আরতো ভাই পাইব না। ‘
আর এখান থেকেই আমরা ‘ শাস্তি ‘ গল্প দুটি পুরানো কাহিনীর পুননির্মাণ লক্ষ্য করি – বাল্মীকি রামায়ণে রাম – সীতার প্রতিমা আর শেক্সপিয়ার রচিত ওথেলো – ডেসডিমনার প্রতিমা।
* রাম – সীতার প্রতিমা
অধ্যাপক স্বরাজ সেনগুপ্ত তাঁর ‘ বিভাজন ‘ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন —-
—— বউ গেলে বউ পাইব, কিন্তু আমার ভাই ফাঁসি গেলে তো ভাই পাইব না। এই কথাগুলি কি রামের কথা দেশে দেশে কলত্রাণি… ‘ ইত্যাদির বাংলা নয় ?… ছিদানের মুখে রামচন্দ্রের মতো এইসব কথায় গল্পগুচ্ছের লেখকের যেন ব্যাঙ্গোক্তি শুনতে পাই।… সীতা ও চন্দরা দুজনেই মিথ্যা অপবাদে অভিযুক্তা, ( পৃ ৭৮-৭৯ )। আর তাই বনবাসে পাঠানোর পরেও পূর্নগ্রহণের আগে শপথ নিতে বললে তিনি জননী ‘ পৃথিবীকে বিদীর্ণ হতে বলেন আশ্রয়ের জন্য। আমাদের চন্দরাও মৃত্যুর আগে মাকে দেখতে চায়। আর স্বামীর জন্য ‘ মরণ ‘।
রামায়ণে আমরা দেখি লক্ষ্মণ শক্তিশেলের আঘাতে সংজ্ঞাহীন হলে শোকাতুর রাম বলেছেন…
‘ দেশে দেশে কলত্রাণি দেশে দেশে চ বন্ধবীঃ।
তং তু দেশং ন পাশ্চ্যামি যত্র ভ্রাতা সহোদরঃ।
( দেশে দেশে পত্নী পাওয়া যায়, দেশে দেশে বন্ধুও মেলে, কিন্তু এমন দেশ দেখি না যেখানে সহোদর ভ্রাতা পাওয়া যায় ) এমনকি যুদ্ধ শেষে সীতাকে যাঁকে ইচ্ছে তাকে ( লক্ষ্মণ, ভরত, শত্রুঘ্ন, সুগ্রীব, বিভীষণ প্রমুখ ) বরণ করে নিতে বলেছেন, তাঁর সতীত্বে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। রবীন্দ্রনাথ এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীর মূল্যহীনতাকে তাই ‘ শাস্তি ‘ গল্পে তুলে ঘরেছেন ও প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন।
* ওথেলো – ডেসডিমনার প্রতিমা
পঞ্চম অঙ্কে দ্বিতীয় দৃশ্যে আমরা ডেসডিমনাকে সন্দেহবেশে হত্যাকারী ওথেলোর সংলাপে শুনিঃ
Then must you speak
of one that loved not wisely but too well,
of one not easily jealous but, being wrought
Perplexed in the extreme… ‘
নিছক ইয়াগোর কথায় সে ডেসডিমনার সতীত্ব সন্দেহ করে, তাকে ক্রোধান্ধ হয়ে হত্যা করে। তারপর অনুতাপ, যন্ত্রণা। আর তাই বেঁচে থেকেও মরার যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে ওথেলোও আত্মঘাতী হয়। রবীন্দ্রনাথের ছিদাম ও তার ‘ যুবতী স্ত্রী টিকে একটু বিশেষ ভালোবাসিত ‘ আর তা থেকেই ঈর্ষা, প্রেমসম্পদকে হারানোর ভয়, হয়তো মরে গেলে একটু শান্তি পাওয়া যায় কারণ অন্য মানুষের নয় কেবল তারই অধিকার থাকবে সেখানে। ভালোবাসা এ আরেক বিধ্বংসী প্রকাশ। আমাদের মনে পড়ে ‘ রক্তকরবীর রাজার সংলাপ ‘।
‘ আমি হয় পাবো, নয় নষ্ট করবো। যাকে পাইনে তাকে দয়া করতে পারিনে। তাকে ভেঙে ফেলাও খুব একরকম করে পাওয়া। ‘
রবীন্দ্রনাথ জানিয়েছেন এ ঘটনার আগে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ‘ ভারি একটা গোলযোগ চলছিল। ‘ কাজের অছিলায় ছিদামের বাইরে থাকায় চন্দরার সন্দেহ জাগে, তাই সেও ‘ কিছু বাড়াবাড়ি দেখাইতে লাগিল। ‘ ফলত ছিদামের বিষবৎ দিন- রাত্রি, চন্দরাকে ঘরবন্দী করা, চন্দরার পিতৃগৃহ গমন, সাধ্যসাধনায় তাকে আবার ফেরানো। এমত পরিস্থিতিতে ভাইকে বাঁচাতে গিয়ে চন্দরাকে দোষী বানানোর পিছনে কি এই অবচেতন মনের অধিকার ও ঈর্ষা ক্রিয়াশীল ছিল না? ডক্টর তপোব্রত ঘোষ এখানে মনোবিকলনের কথা বললেও, ওথেলো প্রসঙ্গ টি বলেন নি।
কিন্তু এরপর চন্দরা কে বাঁচানোর জন্য তার পরবর্তী চেষ্টায় কোনো ক্রটি দেখি না। কিন্তু চন্দরা একবার ভেঙে যাওয়া বিশ্বাসকে আর জোড়া দিতে পারে না, বজ্রাহত চন্দরা —–
‘ তাহার কালো দুটি চক্ষু কালো অগ্নির ন্যায় নীরবে তাহার স্বামীকে দগ্ধ করিতে লাগিল। তাহার সমস্ত শরীর মন যেন ক্রমেই সংকুচিত হইয়া স্বামী রাক্ষসের হাত হইতে বাহির হইয়া আসিবার চেষ্টা করতে লাগিল। তাহার সমস্ত অন্তরাত্মা একান্ত বিমূখ হইয়া দাঁড়াইল। ‘
ডেসডিমনার মতো চন্দরার অসাধারণ রুমাল জাতীয় কোনো স্মারক চুরির ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যেতে যেতে চন্দরা একবারও স্বামীকে দোষী প্রতিপন্ন করতে চায় নি।এই পরোক্ষ খুনির অপরাধ ছিদাম কে নিজেকেই সহ্য করতে হয়েছে। নবযৌবন নিয়ে চন্দরা ফাঁসিকাঠকেই বরণ করে নেয় ; বলে — ‘ হাঁ আমি খুন করিয়াছি ‘ এবং ফাঁসির শাস্তি ভিক্ষা করে জজ সাহেবের কাছে। অর্থাৎ মৃত্যুর জন্য সে নিজেই যেন দোষী, আদালতে তাই প্রতিপন্ন হয়। চন্দরাকে যখন জজ প্রশ্ন করে
‘ ——– সাক্ষীর দিকে চাহিয়া বলো, এ তোমার কে হয়। ‘ চন্দরা দুই হাতে মুখ ঢাকিয়া কহিল, ‘ ও আমার স্বামী হয়। ‘ প্রশ্ন হইল ‘ ও তোমাকে ভালোবাসে না ? ‘ উত্তর। উঃ, ভারি ভালোবাসে।
প্রশ্ন । তুমি উহাকে ভালোবাসো না ?
উত্তর। খুব ভালোবাসি ‘
আমরা ডেসডিমনার ( Desdemona) অন্তিম সংলাপ স্মরণ করতে পারি —– D – O, falsely murdered !
* * * * *
Emilia – Help ! help, ho ! help ! O lady, Speak Again !
Sweet Desdemona ! O sweet mistress speak !
D – A guiltless death I die.
E – O, who hath done this deed ?
D – No body : I myself Fare Well,
Commed me to my kind lord : O, farewell ! ( dies )
Act 5/Sc. 2
চন্দরা এতস্পষ্ট স্বীকারোক্তি করেনি, কিন্তু স্বামীর প্রতি অভিমান, অভিযোগ গোপন থাকে নি উভয়ের সংলাপেই। আর তাই ওথেলো যখন এমিলিয়াকে জানায়, She’s like a liar gone to burning hell,
‘T was I killed her
এমিলিয়ার মতো আমরা চন্দরাকে Angel আর ছিদামকে ‘ blackerder বলি না যদিও। কিন্তু ছিদামের আদালতে দোষ নিজস্কন্ধে নেওয়ার চেষ্টায় আমরা ওথেলোর যন্ত্রণার সাদৃশ্য পেলে ভুল হবে না।
তবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর চরিত্রগুলিকে নিজ গুণেই ভাস্কর করেছেন। আপাত সাদৃশ্য বা মিল তাঁর মূল গল্পভাবনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।
প্রবন্ধের শুরুতেই আমরা ‘ মরণ ‘ – এর তাৎপর্য প্রসঙ্গে দুটি প্রশ্নের অবতারণা করেছিলাম। দুটি ‘ প্রতিমা ‘ – র সাদৃশ্য নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে সে প্রশ্নের উত্তর অনেকখানি পাওয়া গেলে আশা করা যায়। তবু এই অন্তিম সংলাপটি আরেকটু ব্যাখ্যার অপেক্ষা রাখে। ডঃ তপোব্রত ঘোষ লক্ষ্য করেছেন – ‘ এই একটি শব্দের মধ্যে স্বামীর প্রতি ধিক্কার ও ব্যঙ্গ যেমন পুঞ্জীভূত হয়ে আছে, তেমনি রয়েছে মৃত্যুকে অশ্রুবিজড়িত কন্ঠে আহ্বান। ‘
( রবীন্দ্র ছোটগল্পের শিল্পরূপ )
সাধারণত গ্রাম্য নারীরা গালাগাল দিতে, ক্ষোভ ও ধিক্কার জানাতে যেমন ‘ মরণ ‘ বলে, তেমনি ‘ মরণ ‘ শব্দের মৃদু আহ্লাদ লজ্জা ও মিশে থাকে কখনোবা। যে চন্দরা মৃত্যুর আগে কেবল মাকে দেখতে চায় বলে দয়ালু সিভিল সার্জনকে জানায়, সেই শেষ সাক্ষাৎ প্রার্থী স্বামীকে দেখতে অস্বীকার করে। সীতা বা ডেসডিমনার মতো স্বামীর প্রতি শেষ মুহূর্তেও ভালোবাসা মরে যায়নি তার, কিন্তু নিদারুণ অভিমান।
‘ আমি তোমাকে ছাড়িয়া আমার এই নবযৌবন লইয়া ফাঁসিকাঠকে বরণ করিলাম —– আমার ইহজন্মের শেষবন্ধন তাহার সহিত ‘।
স্বামীকে ভালোবেসেও যে প্রতিদান সে পেল না, মৃত্যুর কাছে যেন শেষ আশ্রয় তার। প্রেমবঞ্চিত জীবন – যৌবন মৃত্যুকে সঁপে দিয়ে চন্দরা যে আপাত শাস্তি পায় তা তার কাম্য ছিল না কোনোদিন। তাই ‘ মরণ ‘ শব্দে তার শেষ অভিমান, গোপন ভালোবাসা অশ্রুত থাকে না।
তিন পরিচ্ছেদে ব্যাপ্ত ‘ শাস্তি ‘ গল্পে বর্ষা প্রকৃতি ঘটনাপ্রবাহের সার্থক পটভূমি রচনা করেছে। বর্ষা প্রকৃতির গুমোট ভাব,পদ্মার স্থির ভয়ংকর ভাবধারন এবং দূর্ঘটনার পরেও প্রকৃতির ‘ পরিপূর্ণ শান্তি ‘ – র ছবি রবীন্দ্রনাথ সঙ্গতভাবে এঁকেছেন।তবে ‘ শাস্তি ‘ – র তাৎপর্য নির্ণয়ে দুটি চিত্র আমাদের কাছে বিশেষ ব্যঞ্জনাবাহী ——-
১) দুখিরাম ও ছিদাম রুইকে জোর করে কাছারিঘর সারাতে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সমস্ত দিন পরিশ্রম করেও ‘ মধ্যে মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজিতে হইয়াছে উচিতমতো পাওনা মজুরি পায় নাই এবং তাহার পরিবর্তে যে সকল অন্যায় কটু কথা শুনিতে হইয়াছে, সে তাহাদের পাওনার অতিরিক্ত।
এই সামন্ততান্ত্রিক শোষণনামক ‘ শাস্তি ‘- র প্রভাব রাধাকে হত্যার পিছনে ক্রিয়াশীল অনেকখানি। কারণ এরপরেই লেখক লেখেন —-
‘… পরপারের চরে যাহারা নুতন পক্ক ধান কাটিতে গিয়াছিল তাহারা পাঁচ – সাতজনে এক একটি ছোটো নৌকায় এপারে ফিরিয়া পরিশ্রমের পুরস্কার দুই – চার আঁটি ধান মাথায় লইয়া প্রায় সকলেই নিজ নিজ ঘরে আসিয়া পৌঁছিয়াছে। ‘
২) চন্দরা ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে দোষ স্বীকার করলে তাকে সেশন আদালতে পাঠানো হয়। এই অংশে লেখক দেখান প্রকৃতির স্বাভাবিক গতি, শ্রাবণ প্রকৃতির ছবির প্রেক্ষিতে তুচ্ছাতিতুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে পুলিশি মোকদ্দমার কথা। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে —–
‘ ছিদাম বাতায়ন হইতে এই অন্যন্ত ব্যস্তসমস্ত প্রতিদিনের পৃথিবীর দিকে একদৃষ্টে চাহিয়া আছে, সমস্তই স্বপ্নের মতো বোধ হইতেছে। কম্পাউন্ডের বৃহৎ বটগাছ হইতে একটি কোকিল ডাকিতেছে – তাহাদের কোনোরূপ আইন আদালত নাই। ‘
ছিদামের নিঃসঙ্গতা, হঠকারিতা দুঃসহপরিণাম, প্রেমিক হৃদয়ের অসহ্য বেদনা রূপায়িত হয়েছে। সত্য বললেও কেউ শোনে না, স্ত্রীকে দেওয়া তার আশ্বাস ‘ আমরা তোকে বাঁচাইয়া দিব ‘ আজ পরিহাস মনে হয়। স্বপ্ন নাকি মায়া এসব ঘটনা ছিদাম ভেবে পায় না, তার একমাত্র প্রার্থনা।
‘ দোহাই হুজুর আমার স্ত্রীর কোনো দোষ নাই ‘ —- দুই ভাই এ নিজেকে হত্যাকারী বলে শাস্তি চায়, কিন্তু চন্দরা স্বীকারোক্তি বদলায় না। স্বেচ্ছাপ্রবৃত্ত উকিলরাও হার মানে। কঙ্কাল – এর নায়িকার মতো সে যেন বধূর মতো মৃত্যুর বাসর কক্ষে যাত্রা করতে উৎসুক। রাধা শাস্তি পায় শান্ত স্বামীকে কুকথা শোনাবার জন্য, দুখিরাম অন্যায় করেও বেঁচে গিয়ে —— কিন্তু প্রতিমুহূর্তে চন্দরার ‘ মরণ ‘ ছিদামকে মারবে, মৃত্যুই তার কাম্য হবে। পুনর্বিবাহ গ্রামবাংলায় হতেই পারে, যদিও সে আভাস এখানে নেই। তাই জীবন – মরণের সীমানা পার হয়ে চন্দরা শোষক সমাজ ও পুরুষের ভালোবাসা – কে অভিযোগের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেয়, রেখে যায় বিবেকের দংশন চিরকালের জন্য এই ‘ শাস্তি ‘ – র বিধান।