“চতুর্থ এবং শেষ পত্র তাঁর কাছে” ✒️✒️ মালবিকা

“চতুর্থ এবং শেষ পত্র তাঁর কাছে”
মালবিকা

ঈশ্বর আজ আমার মন খুব বিষন্ন যদি বল কেন ?তবে সঠিক কারণ আমি বলতে পারব না। কেবল হৃদয়ের অন্তঃস্থল থেকে এক হাহাকার মথিত কান্নার দমক হয়ে উঠে আমার কণ্ঠস্বরকে রুদ্ধ করেছে। কবে পায়ে পায়ে আমি ষোড়শী হয়েছি ,অষ্টাদশী হয়েছি তারপর বিংশতি তে পদার্পণ করেছি সেও অনেকদিন হয়ে গেল। এখন মনে হয় এই কত বছর শুধু লেখাপড়া আর লেখাপড়া আমার ভুবনকে গ্রাস করেছিল। তখন তুমি ছিলে আমার অন্তরের গহন গভীরে। ভবিষ্যৎ গড়ার তাড়নায় আমি কী তোমায় ভুলে ছিলাম? তুমি কি আমায় মনে রেখেছো? কে জানে? তোমার তো অনুরাগী ভুবনজোড়া তারাই তোমাকে ভরিয়ে রেখেছে।

আমি এবার ভেবেছি তোমার পানে চলবো। জনি পথ অতি দুরূহ ।অনেক কাঁটা ফুটবে পায়ে।রক্তাক্ত হব আমি ।তবু আমি পথ হাঁটবো তোমাকে পাবার জন্য ।সে পথের শেষ কোথায় সে শুধু তুমিই জানো।কিন্তু আমি শুধু লক্ষ্যে অবিচল হয়ে অন্তহীন পথ হাঁটবো আর হাঁটবো ।তারপর একদিন নিশ্চয়ই আমার চলা শেষ হবে সেখানে যেখানে তোমার অপরূপ আবির্ভাব আমাকে সব সাধনার সার্থকতা দান করবে ।

আমার এ সংকল্প থাকুক তার মত করে ।কিন্তু ব্যবহারিক জীবনের যন্ত্রণায় যখন কাতর হব তখনও কি তুমি পলকের জন্য হলেও আমাকে দেখা দেবে না? শুনেছি প্রাচীনকালে মুনী-ঋষিরা বনে ,জঙ্গলে, পাহাড়ে ,গুহাতে, নদী কুলে গিয়ে তপস্যা করতেন। সে ছিল অন্য যুগ অন্যরকম সময়। বর্তমানে সেই সময় বা সেই যুগের প্রেক্ষপট আমরা ফিরিয়ে আনতে পারিনা। শুধু সকল কাজের মাঝে সকল দিন যাপনের মাঝে তোমাতে মগ্ন হওয়া এটুকুই আমার সাধ্য ।আর আমি তাই করবো।

সেদিন আমি একা একা পথে বেরিয়েছিলাম গন্তব্য ছিল না কিছুই শুধু তোমাকে ভেবেই পথ চলছিলাম ।তারপর যখন গ্রামের শেষ প্রান্তের সেই বুড়ো বটগাছের কাছে যখন পৌঁছলাম তখন আমার মন আনন্দিত হয়ে উঠলো। সেই বটগাছের কত ঝুড়ি নেমেছে চারদিকে। গাছের পেছনে কি সুন্দর এক টলটলে জলভরা পুকুর ।সামান্য সামান্য হাওয়া দিচ্ছে।গাছের পাতাগুলো তিরতির করে কাঁপছে।সেই মৃদুমন্দ হওয়ায় আমি মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে পড়লাম। আমার অন্তর আমাকে বললো এখানে ওই বটের মূলে আমার দেবতা, আমার প্রিয়তম আমার জন্য দাঁড়িয়ে আছেন ।মুহূর্তে আমার অন্তরাত্মা উজ্জ্বল দীপের মতো জ্বলে উঠলো।আমি দেখলাম আমার অনতি দূরে তুমি ওই বটের মূলে দাঁড়িয়ে আছো। সত্যিই তুমি দাঁড়িয়ে ছিলে, ঠিক আগের মত। তোমার মুখে মোহন হাসি আর হাতে মোহন বাঁশি। বৃক্ষমূলের চারদিক উজ্জ্বল হয়ে গেছে তোমার উপস্থিতির আলোতে ।আর আমি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে তোমাকে দেখছি। এই প্রথম শুধু এই প্রথম আমি তোমাকে একা দেখলাম। দেখছি দেখছি কত সময় বয়ে গেল কে বলবে তারপর চেতনা ফিরলে দেখি কেউ কোথাও নেই। শুধু আমার দৃষ্টি অবরুদ্ধ হয়ে গেছে নয়ন জলে। আমার আনন্দ হল তোমাকে দেখলাম বলে আর দুঃখ হল তুমি চলে গেলে বলে। একদা শ্রীমতি তোমার শতবর্ষের বিরহানলেও তোমাতে নিবেদিত ছিলেন। আর আজও আমিও তোমার জন্য জীবনভোর ধরে শুধু তোমার নাম জপ করবো।

– “তোমারেই যেন ভালোবাসিয়াছি শত রূপে শতবার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।
চিরকাল ধরে মুগ্ধ হৃদয় গাঁথিয়াছে গীতহার-
কত রূপ ধরে পরেছ গলায় নিয়েছো সে উপহার
জনমে জনমে যুগে যুগে অনিবার।।

– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
কবিহৃদয়ের এই ব্যাকুলতাই যেন আমার ব্যাকুলতা।
ইতি-
অনুরাধা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *