☆ অণুগল্প 🏵️ অমর প্রেমী #কলমে : সাহানা

☆ অণুগল্প ☆
•••••••••••••••••••
অমর প্রেমী

#কলমে : সাহানা
••••••••••••••••

সকালের রোদটা কাঁচের জানলা গলে এসে পড়ে সোজা খাটের ধারে। আস্তে আস্তে উত্তাপ বাড়তে থাকে। আর ঠিক এই সময়েই রোজ ঘুম ভাঙে তার। অ্যালার্ম ঘড়ি লাগে না। কাচের ওপাশে খোলা কার্ণিশে দুটো পাখি—কিচিরমিচির করে। তাদের প্রেমের ভাষা সঠিক না বুঝতে না পারলেও, একে অপরের ঠোঁট ঘষে যে আদর প্রকাশ করছে, বোঝা যায়। ওদের দেখতে দেখতে এক অন্য দৃশ্য মনে পড়ে। অন্যমনস্ক হয় মন।

☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆☆
আদিল পেশায় শিল্পী। স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্মানিক ডিগ্রী পেয়ে সে নিজের স্টুডিও খোলে এবং স্বাধীনভাবে কাজ শুরু করে। অন্যান্য অনেক শিল্পীদের মতই তার অনিয়মিত জীবনযাপন। গভীর রাত পর্যন্ত চলে শিল্পকর্ম। মাঝে মধ্যেই সারা রাতও। সঙ্গী এবং সঙ্গিনীও অসংখ্য। শিল্পীর তুলিতে ফোটানো নানা রঙের ছবির মতই সঙ্গিনী পরিবর্তনে সে অভ্যস্ত। অথচ তার এই তিরিশ বছরের জীবনে পাকাপাকি ঘর বাঁধার মত নারীর দেখা মিলল না!
হয়তো হবেও না, দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার কাজে বসে সে।

শহরের কেন্দ্রে একটা সবুজ গাছে মোড়া পার্ক তৈরী হয়েছে। সেখানে একটি সুন্দর ভাস্কর্য বসানো হবে। উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী নিজে। কাজটা তার কাছেই এসেছে। কিন্তু কিছুতেই মনের মত কোনো ছবি তৈরী করতে পারছে না। আপ্রাণ চেষ্টা করেও রূপ দিতে পারছে না কোনো কল্পনাকে। হতাশ হয়ে জানলার পাশে বসে সে।

হঠাৎই গ্রামের বাড়ির কথা মনে হয়। সেই সোনালী সর্ষের ক্ষেত, রোদ ঝলসানো সবুজ গাছের সারি আর প্রাণভরা শুদ্ধ বাতাস! বেরিয়ে পড়ে সে।
গ্রামের বাড়িতে দূর সম্পর্কের কাকা কাকিমা আছে তার। যতবারই সেই বাড়িতে যাওয়ার রাস্তাটা ধরে, দেখে খুড়ি ঠিক দাঁড়িয়ে আছে একটু এগিয়ে ঘাসফুলেদের মাঝে, তারই অপেক্ষায়। মুখে গালভরা হাসি। স্নেহের এত উষ্ণতা অতুলনীয়! খুড়োও আসে লাঠিহাতে।
টেবিলে সাদা টেবিলক্লথ, নানারকমের ফল, রুটি –সব ঘরে তৈরী। ভীষণ ভাল লাগে তার। খাওয়া সেরে নিজের ছোট্ট ঘরে ঢোকে। বাবা-মা খুব ছোটবেলাতেই চলে গিয়েছে, দেওয়ালে তাদের ছবি এখন হলুদ।
ছোট খাটে বসে সে। কিছুক্ষণ পরে শুয়েও পড়ে। খুড়ি দরজা খুলে দেখে যায়। গায়ে একটা চাদর ঢাকা দিয়ে বেরিয়ে যায় নিঃশব্দে। এই নিশ্চিন্ত আশ্রয়টুকু বড় সম্বল তার কাছে। সে ঘুমিয়েই পড়ে।

একটা অস্পষ্ট হাসির শব্দে চটকা ভাঙে। খুব মৃদুস্বরে কারা যেন কথা বলছে। কান পাতলে শুধু গুঞ্জন । কোনো অন্তরঙ্গ সঙ্গীরাই এই আলাপ করতে পারে।
খুব সাবধানে দরজা খুলে বাগানে আসে সে। বিকেলের ভেজা হাওয়া ঝাপটা মারে, চোখে – মুখে, বৃষ্টি হয়ে গেছে।
বাগানের বেঞ্চিতে ওরা বসেছিল। একজনের হাত অন্যের হাতে ধরা। কথা বলছিল আর হাসি। দূর থেকে মনে হল, অসংখ্য সবুজের মধ্যে দুই চিরনবীন প্রেমী, ভালোবাসা তাদের মাঝে শাশ্বত হয়ে আজও বেঁচে আছে!

দৃশ্যটা মনে গেঁথে গেল। তার কাজের সাবজেক্ট সে পেয়ে গেছে, জীবন্ত। দ্রুতহাতে স্কেচ করবে বলে ঘরের দিকে পা বাড়ায়। পার্ক উদ্বোধনের বেশি দেরি নেই।

#কলমে : সাহানা
All rights reseeved.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *