আজ আমার কলমে,,,, বয়স ,সে তো কেবল একটি সংখ্যা মাত্র ✒️✒️ কলমে-নিতু চৌধুরী

আজ আমার কলমে,,,,
বয়স ,সে তো কেবল একটি সংখ্যা মাত্র,,,
কলমে-নিতু চৌধুরী
রাত তখন এগারোটা হবে বাকিরা সবাই মোটামুটি ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছে বা দেবে দেবে করছে । রাত দুটোর আগে আমার ঘুম আসবে না কিছুতেই ।তাই সারাদিনের শেষে এই সময়টাই সবথেকে আমার আপন, আমার নিজেকে খুঁজে নেওয়ার, আমার আমি কে প্রমিস করার সময়।
কিছুদিন আগেই আমার কোন পরিচিত মানুষের বলা একটা কথা মনে পরলো আমরা সবাই এখন পঞ্চাশ পেরোনো বা পঞ্চাশের দৌড় গোড়ায় তাই আরো বেশি কর্তব্য পালন করতে হবে,দায়িত্ব বান হতে হবে তাহলে এই যে ফেলে আসা চল্লিশ-সাত চল্লিশ বছরের দীর্ঘ সময় কি করলাম?সেই সময়টা তো জীবনের কোন স্বাদ চেটে পুটে নিতেই পারিনি কখনও। ছোট্ট থেকেই পড়াশোনার সাথে সাথে বাবার প্রথম সন্তান হিসেবে ভাইয়ের বড়ো দিদির দায়িত্ব পালন, মায়ের শরীর খারাপে কন্যা সন্তান হওয়ার দায়িত্ব পালন, বাবার সন্মান রক্ষার জন্য বিয়ের পর মুখ বুজে গৃহবধুর দায়িত্ব পালন, কখনও সন্তানের জন্য মায়ের দায়িত্ব পালন এগুলোই তো করলাম। নিজের জন্য তাহলে কি করলাম?জীবনের আর যেটুকু সময় বাকি সেটাও কি অন্যের কথা ভেবে বা শুনে কাটাবো?
আজকাল বৃষ্টি ভিজলে ,প্রিয় গান শুনে নেচে উঠলে আশেপাশের মানুষ রা মনে করাতে তৎপর হয়ে ওঠে বয়স হয়েছে, ছেলেমানুষি আর নয়।কিন্ত তারা এটা কেন বোঝেনা যার যেটা স্বভাব সিদ্ধ আচরণ তা কখনোই পাল্টানো যায় না।বয়স পঞ্চাশের দৌড় গোড়ায় হলেও যদি আমার নাচতে অসুবিধা না হয়,তিনটে সিঁড়ি টপকে ওঠা নামা করতে কষ্ট না হয়, বৃষ্টিতে ভিজে যদি একটু আনন্দ পাই তাহলে ক্ষতি কি?হয়তো এগুলোই আমার এক ঘেঁয়েমি কাটানোর, বেঁচে থাকার রসদ।বয়স হলেও যদি সংসারের দায়ভার বহন করা যায় তাহলে এগুলো কেন করা যাবেনা ?
কোন বইতে এমন ফর্মুলা আছে যে বয়স হলে কোন কিছুই করা যাবেনা,কাউকে ভালোবাসা যাবেনা,নতুন করে সম্পর্ক তৈরি করা যাবেনা?এগুলোই তো জীবনের আবেগ আর আবেগ বাদ দিয়ে বেঁচে থাকা যায়? না নিজেকে মানুষ ভাবা যায়।
আমার মন বলে, এগুলো কেবল অজুহাত নিজেকে কষ্ট দেবার বা দুঃখ বিলাসী হওয়ার।আমার মতে,যে যেভাবে ভালো থাকে তাকে সেভাবেই থাকতে দেওয়া উচিত কারণ কারোর ব্যক্তিগত অনুভূতির উপর কখনও বয়সের ভার চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
মনের বয়স কখনও বাড়তে দেওয়া উচিত নয় কারণ সেখানেই থাকে আমাদের বেঁচে থাকার চাবি কাঠি তাই মনের চিলেকোঠার গোপন ঘরের তালা ভেঙে এবার ই তো নিজের মতো করে বাঁচার সময়।
আজ উপলব্ধি করছি শুধু একটাই কথা, বয়স যাই হোক, আমাদের প্রমাণ করতেই হবে ওটা একটা সংখ্যা বই কিছুই না।
জানি না ২০ বছর পর আমাদের ভবিষ্যৎ কি হবে ? জানি না মোবাইলে টাইপ করার শক্তি হাতে মজুত থাকবে কি না ? হয়তো ধীরে ধীরে চোখের দৃষ্টি আবছা হয়ে আসবে ,হয়তো শ্রবণ শক্তি ভালো করে গানটাও শুনতে দেবে না,হয়তো বন্ধুদের কল আসবেনা রি ইউনিয়নের জন্য। আস্তে আস্তে শিথিল হবে স্মৃতিশক্তির বাঁধন ….তবু থেমে যেন না যায় বন্ধুত্ব,তবু যেন মন ভুলে না যায় ভালোবাসতে, তবু যেন মনে থাকে প্রিয় জনকে একটি বার দেখার বা ছোঁওয়ার সাধ।
তাই বন্ধু চাই, ভাল বন্ধু, যে স্বার্থহীন ভাবে সুখে-দুখে তোমার পাশে থাকবে। এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে যেতে না চাইলেও একদিন তো চলে যেতেই হবে।
তাই যতদিন বাঁচো প্রান খুলে হাসো। জীবনে চাওয়া পাওয়ার সংকীর্ণতা ভুলে শেষের দিনগুলি আনন্দেতে বাঁচো।হ্যা তবে তোমার বাঁচার পথ যেন অন্যের ক্ষতি করে বা অন্য কে কষ্ট দেওয়া না হয়।
তাই আমার মতে,
দেহের বয়স হোক না হয় ,
আট কিম্বা আশি
মনকে বলো, এখনও
আমি বাঁচতে ভালোবাসি,
বয়স যতোই হোক আমার
দুই কুড়ি বা তিন কুড়ি
মনের বয়স বাড়তে দেবোনা,
হবোনা মোটেই আমি বুড়ি।
বন্ধুরা তোমাদের কি মত,আমার চিন্তা ধারা ভুল না ঠিক?আর যেকটা দিন আছে বাকি হাতে,জীবনের স্বাদ টা চেটে পুটে নিতে ক্ষতি কি,,, ,, ,, ,,,,