বোবা কান্না ✒️ গৌতমী ভট্টাচার্য ***

বোবা কান্না
গৌতমী ভট্টাচার্য
********************

ভোর থেকে সানাই এর শব্দে বিয়ে বাড়ি ধীরে ধীরে জেগে উঠেছে। এ বাড়ির মেয়ে সুকন্যার বিয়ে। বাড়ির একমাত্র বৌ শর্মিও শ্লথ পায়ে রান্নাঘরে সবার জন্য চায়ের জল বসাল। শাশুড়িমা আগেই বৌমাকে শাসিয়ে রেখেছে বিয়ের কোন কাজে যেন হাত না দেয়। যার সন্তান নেই সে কোনো শুভ কাজে হাত দিলে অমঙ্গল হবে। শর্মির বোবা কান্নায় মুখ কালো হয়ে যায়। একমাত্র ননদের বিয়ে কোন নিয়মকানুনের অনুষ্ঠানে যোগ না দিয়ে ঘরের যাবতীয় কাজ করে বিয়ের সময় ঘরের মধ্যে মুখ লুকিয়ে
কান্নায় ভেঙে পড়ে। বাঁচার ইচ্ছেটা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।

শর্মির ডাক্তারি রিপোর্টে কোন শারীরিক সমস্যা নেই। অথচ তা কিছুতেই মেনে নিতে চান না শ্বশুরবাড়ির লোকজন। শ্বশুরমশাই শাশুড়িমা ছেলেকে কিছুতেই ডাক্তারের কাছে যেতে দেবেন না। ওনার বিশ্বাস ছেলের কোন শারীরিক সমস্যা থাকতে পারে না। শর্মিকে জড়িবুটি তাবিজ কবচ পড়িয়ে সমস্যার সমাধান করতে চায় শাশুড়িমা।

হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি। ঘর থেকে বেরিয়ে দেখে কনের গায়ে আগুন লেগে গেছে সপ্তপদীর সময় হোমের আগুনে। সবাই কিংকর্তব্যবিমূঢ়। শর্মি ছুটে ঘর থেকে গিয়ে কম্বল নিয়ে ননদের গায়ে জড়িয়ে দেয়। আগুনের হলকায় শর্মি ও পুড়ে যায়। হাসপাতালে মেয়ে এবং বৌমা কে ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করে শর্মিকে আর অপয়া বা বাঁজা বলে কখনো অপমান করবে না। শাশুড়ি বৌমা দুজনেই নিঃশব্দ কান্নায় ভেঙে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *