ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (দ্বিতীয় পর্ব) সায়ন্তন ধর

ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (দ্বিতীয় পর্ব)

সায়ন্তন ধর

বরাবর আমার ভাগ্যটা এমন যে গুয়াহাটি পৌঁছেছি রাত ভোরে, আর গুয়াহাটি ছেড়েছি রাতে। ফলস্বরূপ গুয়াহাটি শহর দেখা হলেও ব্রহ্মপুত্রকে দিনের আলোয় দেখা হয়নি। ইউনিভার্সিটি থেকে যেবার এক্সকারশনে নিয়ে গেল, সেবারও সেই একই অভিজ্ঞতা। সেবার মূল লক্ষ্য ছিল পবিতোরা ওয়াইল্ড লাইফ স্যাংচুয়ারি ও ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট কাজিরাঙা অভয়ারণ্য দেখা। কিন্তু এবারও সেসব কথা এখানে বলব না, এখানে শুধু যতটুকু গুয়াহাটিকে দেখেছি ততটুকুই বলব। পবিতোরা থেকে শহরে ফিরে কিছুটা সময় ছিল হাতে, তাই দু’জন স্যারের তত্ত্বাবধানে আমরা ২৭ জন শিক্ষার্থী প্রথমে একটি অসমের ট্র্যাডিশনাল ফুডের রেস্তোরাঁয় প্রবেশ করলাম। সে তো এলাহি আয়োজন। চৌদ্দরকম পদের সাথে ভাত। প্রতিটি পদের বিশেষত্ব হল ব্রহ্মপুত্রের মাছের উপস্থিতি। এমনকি আলুসেদ্ধও মাছ দিয়ে মাখা। অপূর্ব সে স্বাদ আস্বাদন করে এলাম শ্রীমন্ত শঙ্করদেব কলাক্ষেত্রে। অসমের প্রতিটি উপজাতির খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, ব্যবহার্য্য সামগ্রী, বাদ্যযন্ত্র, মাছ ধরার উপকরণ, প্রাচীন মুদ্রা, কষ্টি পাথরের দেবদেবীর মূর্তি, নৃত্যরত মূর্তি, সাজসজ্জার সামগ্রী আরও কত কি। এতো গেলো মিউজিয়াম। পুরোটা একবেলায় দেখা অসম্ভব। বাইরের পার্কটিও সযত্নে সাজানো। প্রায় ছয় বর্ণের সালভিয়ায় সাজানো আছে মোরাম বিছানো পথের দু’পাশ। পার্কের মাঝ বরাবর কৃত্রিম লম্বাটে লেক। তার উপরে আর্চ করা ব্রীজ। সেখান থেকে বেরিয়ে এলাম পূর্ব তিরুপতি শ্রী বালাজী মন্দিরে। ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। অন্ধকারে শ্বেতশুভ্র মন্দিরের শোভায় মুগ্ধ হয়ে গেলাম। আমাদের আরও একটা জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ওই যে বললাম ভাগ্য, আমার ভাগ্যে দিনের আলোয় ব্রহ্মপুত্র দেখা নেই। সেদিনও হল না। ফিরে এলাম গ্র্যান্ড ম্যাজেস্টি হোটেলে। ফ্রেশ হয়ে ডিনার করতে এসে এককথায় চমক লেগে গেলো। নীলচে স্নিগ্ধ আলোয় সার বেঁধে রাখা আছে খাদ্যপাত্র। কত রকমের খাওয়া, বুফে সিস্টেম। কিন্তু অতি লোভ করে কাজ নেই, পরদিন আবার ২০০ কিমি দীর্ঘ জার্নি কাজিরাঙার উদ্দেশ্যে। তারপর রাতের অনেকটা সময় কাটলো বন্ধুদের সাথে গল্প করে। সেবারের মত এতটুকুই পরিচয়পর্ব এগোলো এ শহরের সাথে।

(ক্রমশঃ)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *