ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (প্রথম পর্ব) সায়ন্তন ধর
ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে (প্রথম পর্ব)
সায়ন্তন ধর
ইসস্ !! কে এমন আগুন ধরিয়ে দিল ভোরের স্নিগ্ধ আকাশে ? সারারাত ট্রেনে না ঘুমিয়ে তিস্তাপড়ের শহর থেকে ব্রহ্মপুত্রের পাড়ে এসে নামলাম ভোররাতে। ঘুমানোর জায়গা বা অবসরের অভাব কিছু ছিলনা, ছিল ঘুমোনোর ইচ্ছার অভাব, আর রাতের প্রকৃতি দেখার অফুরন্ত ইচ্ছা। ফলের কথা না ভেবে তাই জেগে থাকা। কামাখ্যা স্টেশনে তড়িঘড়ি নেমে পড়া। টিকিট গৌহাটি অব্দি থাকলেও সহকর্মীর তাড়ায় নামতে হল, তার অভিজ্ঞতায় নাকি বলে এখান থেকে গাড়ি পেতে সুবিধা। তার প্রোগ্রাম একটু আলাদা, সংসারের পিছুটান সাথে করে কামাক্ষা দর্শন আরও অনেক কিছু। আইআইটির গেস্টহাউসে থাকবে। আমি থাকবো আদাবাড়িতে। হোটেল বুক করা আছে। উবের ক্যাব নিয়ে বেরোনো হল। পথে আদাবাড়িতে আমাকে নামিয়ে ওরা চলে গেল। ভোর পাঁচটা নাগাদ ফোন করে হোটেলের রিসেপশনিস্ট কে ঘুম থেকে তুলে জুটলো একফালি সোফা। দুপুর বারোটার আগে নাকি রুম দেওয়ার নিয়ম নেই, এমনকি ফাঁকা ঘর থাকলেও নয়, তবে ২০০ টাকা একস্ট্রা দিলে বড়জোর আটটায় রুম দেবে। এতক্ষণে বুঝলাম রাতে না ঘুমিয়ে কতটা অবিবেচকের মত কাজ করেছি। অগত্যা ঘুম ও মশা তাড়াতে পায়চারি করছি। এমন সময় ব্যালকনিতে এসে বাইরে চোখ পড়তেই দেখি … ইসস্ !! কে এমন আগুন ধরিয়ে দিল ভোরের স্নিগ্ধ আকাশে ?
এভাবে হঠাৎ করে এই প্রেক্ষাপট উত্থাপনের একমাত্র কারণ এই ছবিটা। তবে প্রতিবেশী রাজ্যের এই বিশেষ শহরে আমার আগমন হয়েছে বেশ কয়েকবার। আমি গুয়াহাটি প্রথম আসি গ্র্যাজুয়েশনের পর। পূর্বোত্তর পর্বতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে এন্ট্রান্স এক্সাম দিতে শিলং যাওয়ার পথে ভোরের ঘুমন্ত শহর ও ফেরার পথে জ্যামজটে বিধ্বস্ত, বর্ষায় স্নাত ও প্যাচপ্যাচে গরমে সন্ধ্যার শহরকে দেখেছি। চোখ টেনেছে বড় বড় হোর্ডিংয়ে অসমীয়া হরফগুলি। আমাদের রাজ্যে সামান্য পানের দোকানের হোর্ডিংও যেখানে ইংরেজিতে লেখা সেখানে মোবাইল আউটলেটে “ছেমছাং” বা শপিং মলে “চিটি চেন্টৰ” লেখা দেখে ওদের ভাষাপ্রেমটাকে সম্মান না জানিয়ে পারলাম না। যদিও স্টেশন চত্ত্বরের অপরিচ্ছন্নতা বেশ দৃষ্টিকটু লাগলো। এ সফরের খুব কম সময়ই গুয়াহাটিতে ছিলাম, আর শিলং -এর কাহিনী এখানে বলব না, তাই এখানেই এর ইতি। ফিরে আসবো অন্য চোখে একই শহর নতুন করে দেখব বলে।
(ক্রমশঃ)