” শুনছো কবি ” **** কলমেঃ- সীমা সান্যাল
” শুনছো কবি “
*****************
কলমেঃ- সীমা সান্যাল
ভাগ্যিস ফজিলতুন্নেসা তোমার প্রেম প্রত্যাখ্যান করেছিল।
হ্যাঁ বলতে পারো কবি — সাধারণ এক নারী হয়ে এতো বড়ো স্পর্ধা আমার হয় কেমন করে একথা বলার?
কি করি বলো, নাহলে যে তোমার এ প্রেমময় মনের হদিশ পেতামনা।
তোমার কাছে তো প্রেম কখনো সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ, কখনো বা নীরব, কখনো বড্ডো নিজের,কখনো বা দূর আকাশের তারায়।
প্রেমের রূঢ় প্রত্যাখ্যানের রূপ তোমায় চেনায় ঐ শ্যামলা, দোহারা প্রথম মুসলিম ছাত্রী যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিত নিয়ে পড়তে আসে।
প্রথম দর্শনে প্রেম আর সে সন্ধ্যাতেই দেখা করতে আসার ইচ্ছে তোমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চিরদিনের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছিল।
তবুও ওই যে বলেনা জেদ এসে যায়। সৌখিন৷ হস্তরেখাবিদ হয়ে তুমি ফজিলতের হাতের রেখা, শনি, মঙ্গল, বুধ, এমনকি হৃদয়রেখাও নিরীক্ষন করলে আধঘন্টা ধরে তারপরেও কোন সমাধান দিতে পারলেনা।
আচ্ছা কবি সত্যি করে বলোতো, সেদিন রাতে তুমি যে স্বপ্ন দেখেছিলে সত্যিই কি তার রেশ ধরে তুমি ফজিলতুননেসার বাড়ি পৌঁছে গেছিলে?
সেদিম কি সত্যিই তুমি মোমবাতির আলোয় তাকে প্রেম নিবেদন করে প্রত্যাখ্যাত হও? তাই কি পরদিনই তুমি ঢাকা ছেড়ে কোলকাতায় চলে আসো?
ফজিলতের গলার লম্বা মটরমালাটা ছেঁড়া কেন ছিল কবি?
এতো তোমার প্রেমাভিমান।
প্রেমের কাঙাল ছিলে তুমি,ছিলে নাছোড়বান্দা —আশা ছাড়োনি তবুও— তাইতো বন্ধু মোতাহার হোসেনকে সাত সাতটা আর ফজিলতুননেসাকে একটা চিঠিতে উজার করেছ নিজের ভালোবাসা।অঙ্ক যে তোমার প্রেমের বাঁধা হয়ে উঠবে এতো তুমি ভাবতেই পারোনি।
আর ততোদিনে বুকে হাত রেখে বলোতো, তুমি হিংসে করতেনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক ডঃ নলিনী মোহনকে?ক্ষিপ্ত হয়ে তুমি তাঁকে বলতে -” প্রাণহীন যক্ষ” যে ভূতের মতো মনিরত্ন ( ফজিলাতুন্নেসাকে) আগলে রাখতেন।
তোমার কষ্ট বি. এ পাশ করলে তুমিও দেখিয়ে দিতে উঁচুনাকের ফজিলাতুন্নেসাকে এম. এ তেও ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট কবি হওয়া যায়।
” গণিতজ্ঞ লোকেরা বড়ো নিষ্ঠুর– ওরা কেবল intellectual, কোন heart নেই””– জানিনা কবি বিশ্বাস করো বড্ডো মন কেমন করে তোমার এ কথাগুলোয়।
এতো প্রেম, এতো ভালোবাসা সবটাই একতরফা রয়ে গেলো— তোমার পক্ষেই বলা সম্ভব —” যাকে ভাসিয়ে দিয়েছ স্রোতে তাকে দড়ি বেঁধে ভাসিওনা।তরঙ্গের সাথে ভেসে যেতে দাও, পাহাড় বা চোরাবালি বা সমুদ্রে সে একদিন ঠেকবেই।স্রোতে ভাসতে গেলে দড়ি ধরে টানা তার কাছে খেলা হলেও তোমার কাছে তা মৃত্যু সমান।
প্রেমাঞ্জলি নিও আমার কবি—–