ধারাবাহিক গল্প। কন‍্যাশ্রী। (তৃতীয় পর্ব)। ছন্দা চট্টোপাধ্যায়

Loving mother and daughter spending leisure time at park

ধারাবাহিক গল্প।
কন‍্যাশ্রী।
(তৃতীয় পর্ব)।
ছন্দা চট্টোপাধ্যায়

গঞ্জের চালাঘরে বসে স‍্যাঙাতদের সঙ্গে বিড়ি ফুঁকছে গৌর পাল।মুরগীর গিলাচাট দিয়ে দিশি মদ তো আছেই।শুধু ভ‍্যান চালিয়ে সংসার চলেনা।স‍্যাঙাতদের সঙ্গে তাই নানা কারবারে জড়িত গৌর পাল।ইছামতীর তীরে বসে কেউ ঢেউ গোনেনা।গোনার জন‍্য তাদের আছে নানা সামগ্রী।গোরু,নারী এবং পিস্তলাদি আগ্নেয়াস্ত্র।বিনিময় মূল‍্য টাকা।আঙুলে সুখস্পর্শ আনে ঐ জিনিসটাই।তবে গোরু পাচার খুবই বিপজ্জনক।এত বড় জীব।সেই ঘটকপুকুর থেকে ভাঙর,পোলেরহাট,লাউহাটি,বিষ্ণুপুর,রাজারহাট।তারপর বারাসাত,বসিরহাট হয়ে বনগাঁ।স্থানে স্থানে হাতবদল হয় গোরুর পাল।থাকে ঘুষের ব‍্যবস্থা।কাজটা রিস্কি।তার থেকে নারী পাচার সহজ।

নাসির শেখ বলে-“তর ঘরে তো অহনও দুইডা আছে।রাজী থাকস তো ক’।মদনারে কইয়া দেহি।”–গৌর বলে–“হইবো না।থাকোর বিয়া ঠিক হইয়া গেসে গিয়া।ক্ষান্ত অহনো ডাগর হয় নাই।”–থাকোমনির নামের পেছনে ইতিহাস আছে।পরপর মেয়ে হওয়ায় মধুমতী ডুকরে উঠেছিল,–“থাউক মা ষষ্ঠি,আর য‍্যান্ কইন‍্যা না হয়।তাই তার নাম থাকোমনি।মা ষষ্ঠি শোনেননি।মধুমতীর এবারের প্রার্থনা,–“ক্ষ‍্যান্ত দাও মা।”–তেরো বছর বয়স থেকে বিয়োতে বিয়োতে ক্ষান্তয় এসে ক্ষান্ত দিয়েছে।থাকোকে এক সম্পন্ন কৃষকের ঘরে কাজে লাগিয়েছিল গৌর পাল।চেনাশোনা,প্রতিবেশী।তাদের বাড়ির জোয়ান ছেলে থাকোকে গর্ভবতী করে।গৌর ইশারা দিয়েই রেখেছিল।বাপের সেই ইশারা কাজে লাগিয়েছে মেয়ে।অতএব বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে পঞ্চায়েতে সালিশি ডেকে মেয়ের গতি করেছে গৌর পাল। শুধু চাপা আফশোষ তার,ক্ষতিপূরণ বাবদ কিছু নগদ প্রাপ্তি হলোনা।তবে মধুমতী স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে,তার একটা মেয়ে অন্তত সত‍্যিকারের স্বামীর ঘর করতে পারবে।

গৌর পালের শেষ সম্বল ক্ষান্তমনিও কিছুদিন বাদে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে গেল।সে বাপের ঠিক করা বিয়ে করতে চায়নি।পড়তে চেয়েছিল।সরকারী স্কুলে বিতরণ করা সাইকেল পেয়ে কী খুশী মেয়েটা।গৌর সেই সাইকেল বেচে মদ কেনে।ক্ষান্তমনি সেই অন‍্যায়ের প্রতিবাদ করে গলায় দড়ি দিয়ে।মধুমতীর আর্ত চিৎকারে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে–“আমি কী দুষ করসি,আমারে ছাইর‍্যা গেলি ক‍্যান্ রে মা?”–

বছর ঘোরে।গৌর পাল বুড়ো হচ্ছে।ভ‍্যানরিক্সা চালাতে পায়ের শিরাগুলি দড়ির মতো ফুলে ওঠে।বড্ড-“যন্তন্না।”- নাসির শেখ একদিন বলে-“শুন্ ভাই,পাচারের কাম তো তুই জানস।তরে ছুটো ছুটো পুলিন্দা দিমু।মুর্শিদাবাদ,মালদা,বর্ধমান,মেদনীপুরের গুপোন ড‍্যারায় পৌঁছে দিবি।কোটি কোটি টাকার কাম।লাখ টাকা কামাইতে পারবি।”–লোভী গৌরের চোখ চকচক করে।এতো খেটেও জীবনে লাখ কেন,হাজার টাকা একসঙ্গে দেখেছে কিনা সন্দেহ। মধুমতী কিন্তু শুনেই বলে-“ঐ পুলিন্দায় বোম বাননের মশল্লা থাহে জানোনা তুমি?জানোনা অরে কয় জিহাদি কাম?ধম্মের নামে মানুষ খুন! এই কামে দুইডা দ‍্যাশেরই ক্ষতি।মাইয়াগুলারে বেইচা খাইছ।অহনও টাকার লোভ গেলনা?”–এরপর মধু বোঝায়-” তা ছাড়া ধরা পড়লে যে মাইরডা দিব পুলিশ বুড়া হাড়ে নিতি পারবা?অবুঝ হইওনা।ঘরে তো খাওনের লেইগা মোদের দুইডা প‍্যাট।দুজনে মিইল‍্যা গতর জল কইরা খাইট‍্যা যা আনি,কুলাইয়া তো যায়?কও,ঠিক কইসি কিনা?আর কোন ছুটো কাম, খারাপ কা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *