//একটা সাধারণ আলনা // ।। চন্দনা রায় চক্রবর্তী ।।
//একটা সাধারণ আলনা //
।। চন্দনা রায় চক্রবর্তী ।।
নাহ্, ওর জন্য পড়ন্ত চল্লিশে
আমার এতো উথালিপাথালি কেন?
ও তো মধ্যবিত্ত পালিশের অতি সাধারণ এক আলনা,
নেহাৎ পুঁটির বিয়ের জন্য বায়না হয়েছিল…
শার্সির ফ্রেমে তখন মেঘলা বিকেল।
আমার ফ্রকের ঘেরে কৈশোর ছেড়ে যাবার হাতছানি।
আমাদের দিনের গল্পগুলো শুরু হতো আমতলায়,
কানে পেন্সিল গুঁজে তখন ভুবন জ্যাঠা কাজ করতো।
পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় রং-বার্ণিশের গন্ধ ছড়িয়ে
ওই প্রথম কথা বলেছিল।
বলেছিল, ওর বড়ো হয়ে ওঠার গল্প…
যৌবনবতী হয়ে ওঠার গল্পও…
পরীক্ষার অ্যাডমিড কার্ড দিতে
গেছিলাম পুঁটির শ্বশুরবাড়ি।
জাঁকজমকে মুখ গুঁজে, ও তখন ঝমঝমিয়ে উঠেছিল।
পুঁটির চোখের আড়ালে বেশ কটি কথাও হয়েছিল।
ওর রূপলাবণ্যে বুঝেছিলাম, বেশ ভালই আছে।
এক বৈশাখে রাঙা হলো আমার সিঁথিও।
ঘর হলো, বর হলো, গা-গতরে অনাবশ্যক মাংস হলো,
আমার কিন্তু কোন আলনা ছিলো না।
পুঁটির আলনার কথাটা একরকম ভুলেই গেলাম।
নতুন সংসারেও একসময় মরচে ধরলো
শেকড়-বাকড় ঘনালো সমস্ত কাঠামো জুড়ে।
মাঝখান দিয়ে গড়িয়ে গেলো,
টানাপোড়েনের অনেকগুলো বছর।
ওর সঙ্গে আবার দেখা।
মধবিত্ত পালিশ তুলে, এক উঠোন রোদের মাঝে
আটহাতি থান জড়িয়ে আলনাটা পড়ে ছিল কাত হয়ে।
বুকটা ছাঁৎ করে উঠলো।
তবে কি…?
এক নিমেষের দেখায়, কতো কিছু যে বলে দিলো,
ও ভালো নেই, আমিও ভালো নেই।
আমার বাড়তি বয়স, সাংসারিক খোস পাঁচড়া
তবু ওর মতোন তো নয়।
চাইনি, তবু এবার গল্প শেষ হলো সেই আমতলায়…
একটা মধ্যবিত্ত পালিশের আলনা,
পড়ে আছে ভাঙাচোরা, পালিশহীন, কদর্য।
শরীর জুড়ে বার্ধক্য আর অবহেলার কাটাকুটি।
চশমাটা উপরে তুলে,
ধীরে ধীরে ওর কাছে পৌছালাম।
ও কথা বললো,
এই প্রথম ও নিজের কথা বললো না,
ফিসফিস করে শুধু আমার কথাই শুধোলো।
একটা মধ্যবিত্ত পালিশের অতি সাধারণ এক আলনা।।
//একটা সাধারণ আলনা //
।। চন্দনা রায় চক্রবর্তী ।।