গল্প / চয়ন দা ও একটি কম্বল কলমে — সুমন দাশগুপ্ত

গল্প / চয়ন দা ও একটি কম্বল
কলমে — সুমন দাশগুপ্ত

চয়ন দা আর আমার বন্ধুত্ব টা অনেক টা স্কুল , কলেজের সময় থেকে চলে আসা বন্ধুর মত।

তিন , চার বছরের বড় হবে চয়ন দা। ওই দাদা ডাকা টাই সার, বাকি কোনোটাই ওই রকম না । সব ধরনের ইরাকী, বদমাইশি আর যা যা হয় , সব ই চলে চয়ন দার সাতে।

চয়ন দা র sathe porichoy jakhon ami আগের change change করে এই কোম্পানি তে join korechilam assamer dispur এ তা প্রায় বছর দশেক হয়ে গেলো।

আমাদের দুজনের পরিবার আর ও কয়েক টা পরিবারের খুব ঘনিষ্ট একটা বন্ধুত্ব রয়েছে। তবে চয়ন দা র ব্যাপার টা আবার একটু আলাদা । হতে পারে একটু বেশি। চয়ন দার দুর্দান্ত মিশুকে আর বেশ সুন্দরী বউ লোপা বৌদি ও আমার বিশিষ্ট বন্ধু, মানে আমাদের পারিবারিক বন্ধু। আমার বউ রুমা আর লোপা ত একে ওপর কে একদিন না দেখতে পেলে বেশ বড় ব্যাপার হয়ে যায়। একজন আর একজন কে বলতে শোনা যায়, ” কি রে ? ঈদের চাঁদ হয়ে গেলি ! লোপা বৌদি আবার স্কুল টিচার তাই নানা কারণ থাকতে পারে, তাও বিনর্ম ভাবে উত্তর দেয়, আরে বলিস না, তুলি কে নিয়ে একটু চিন্তায় ছিলাম , তুলি আর রনি হলো ওদের মেয়ে আর ছেলে।
এই ভাবে জীবন এগিয়ে যাচ্ছিল আমাদের কয়েকজনের।

এর মধ্যে আমার আবার একটা অদ্ভুত চিন্তা ছিলো লোপা বৌদি কে নিয়ে ।
এক অদ্ভুত আনন্দ পেতাম যখন বৌদি আমাকে নিয়ে কোনো কিছু তে বিচলিত হয়।

লোপা বৌদি কি করতে ,খেতে, ঘুরতে ইত্যাদি ভালোবাসে, আমার সবই মোটা মুটি জানা ছিল

অথচ এই সবের মধ্যেও বৌদি কিন্তু কোনো অবস্থায় চয়ন দার প্রতি ওর ভালোবাসা কম আছে বলে আমার মনে হয় নি।
লোপা বৌদি ভীষণ বেড়াতে ভালো বাসে আর তার ঠিক উল্টো টা হলো চয়ন দা।
যখন ই বৌদি কোথাও বেড়াতে যাওয়ার নাম নেয়, চয়ন দা অন্য subject e chole jai । আমার একটা বিশাল responsibility থাকে চয়ন দা কে কোনো অবস্থায় রাজি করানো।

এই ভাবেই চলে যাচ্ছিলো। একবার সেই অসাধারণ একটা ঘটনা আমার জীবন টা কে কেনো যেনো উলোট পালোট করে দিলো
খালি ভাবতাম যদি কোনও দিন একবার just ছুঁয়ে দেখতাম কেমন লাগে। এটা তো অনেক বার হয়েছে, তবে ওই ছোঁয়া তে কি হয়।

জীবনের সেই গভীর মুহূর্ত টা এসেও গেলো।
আমরা সবাই মিলে সিকিম এর একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান করলাম সেবারে। যদিও এটা লোপা বৌদির ই প্ল্যান ছিলো।

আমাদের ভ্রমণের সপ্তম দিনে ভারী বৃষ্টি শুরু হয়। বেশ উচু একটি অঞ্চল থেকে আমরা নামছি, ঠিক এই সময় দুটো ভাগ হয়ে গেছিলাম আমাদের আঠ জনের দলের। আর সেই দুই ভাগের এক ভাগের মাত্র তিন জন ছিলো। আমি , লোপা বৌদি ও চয়ন দা।

এক সময় দুই দলে যোগাযোগ হলো, র ঠিক হলো যে আমরা আপাততো যে ভাবেই হোক কোথাও রাত টা থেকে যাবো, তারপর পরের দিন সকালে সব্বাই মিলে একটা রাস্তা বার করবো।

সে এক বিরাট ইতিহাস আর তার উল্লেখ কোথাও নেই শুধু আমার মনের এই পাতায় থাকলো।

চয়ন দা ত প্রায় বেহুঁশ , তার কারণ ওই ঠান্ডায় রাম এর পরিমাণ অনেক হয়েগেছিল
হটাত একটা মোটা কালো কম্বল দেখে চয়ন দা চেঁচিয়ে উঠলো, চলো এটা দিয়েই আমরা বেচে thaki আজ রাত টা।

রাত তখন প্রায় শেষের দিকে, আর আমার সব নেশা চলে গিয়ে একটাই চিন্তা ছিলো এই রাত টা যেনো শেষ না হয়।
একটা সময় চয়ন দা বমি করতে চলে গেলো , আর বৌদি আমাকে ডেকে বলতে চাইলো যে চয়ন দা ঠিক আছে কিনা , আমাকে জেগে থাকতে দেখে বৌদি কিছুটা লজ্জা লজ্জা ভাবে শঙ্কিত হয়ে গেলো।
আমি উঠে দেখতে যাচ্ছি তখনই মনে হলো, থাক চয়ন দা হয়তো খারাপও পেতে পারে ।
কিছু ক্ষুন সব থেমে থাকার পরে হটাত এক প্রবল আওয়াজ হলো বাইরে , কিছু ভেঙে পড়ার।
বৌদি বেশ ভয় পেয়ে আমার কাছে এসে নিচু গলায় কি যেনো বলতে চাইলো।
আমি কিছু না বলতে পেরে দু হাতে জড়িয়ে ধরলাম।
ওই সময় টুকু কতটা ছিল বলতে পারবো না কোনও দিন , তবে দরজার আওয়াজে আমরা দু দিকে সরে গেছিলাম।

চয়ন দা আর একটি কম্বল আমার সারা জীবন মনে থাকবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *