বিকেলে ভোরের ফুল 🌹🌹 কবিতা দে-সরকার
বিকেলে ভোরের ফুল
কবিতা দে-সরকার
সেই সব রঙিন দিন!
‘আরে বাবা! কোন সব দিন?’
কেন? শৈশবের রোদেলা দিন—
‘সে তো গরমে হাঁসফাঁস
ঘাম আর ঘামাচির উৎপাত—‘
না রে হাঁদা! টুপ করে ডুবসাঁতার পুকুরে
তারপর টাপুর-টুপুর সকাল-দুপুর-রাত আহা রে !
‘যত্তসব! ঘরে বসে ঘাড়-গুঁজে খালি লেখাপড়া
মায়ের বকুনি আর বাবার ধমক কড়া কড়া
চোখেরজলে বই ভিজিয়ে নামতা মুখস্থ করা—‘
কী যে বলিস তুই? ভুলে গেলি? আমরা সবাই
জলকাদা ভরা মাঠে বল নিয়ে হইচই—–
সে সব দিন আর পাই কই রে?
তারপর মনে কর নদীর চরে, বিলের ধারে
কাশফুলের দোল দোল দুলুনি———-
‘আরে ধ্যাৎ! পুজোর ছুটি মানেই তো
শাসনের বারণের ঘ্যানঘ্যানানি—‘
বেশ তো! কিন্তু, লাল-নীল-হলুদ আর সবুজের ফাগুয়া
পিচকারি ভরা রঙিন জল! হুটোপাটি লুটোপুটি
মজা আর মজা দেখে হেসে কুটিকুটি!
‘শেষটায় কী হত মনে করে বল তো? আমি বলি শোন তুই—
কলতলায় বালতি-মগ-সাবান আর মায়ের বকবকানি
ঘষাঘষির সঙ্গে কানমলা আর মায়ের হাতে চুলের মুঠি
আরও কত দুঃখ ভরা কলতলার খুঁটিনাটি
দোলের আনন্দটাই মাটি!
একটুখানি নাচনকুঁদন, যার যেমন ইচ্ছে পূরণ
বাবা গো বাবা ! কী শাসন! কী শাসন !!
সবটাই ছিল কিন্তু অকারণ—একেবারে নিখাদ নির্যাতন!
এবার ভেবে বল! শেষবেলার এই ম্লান আলো
সবটাই ভালো আর ভালো—খুবই ভালো !
মন্দ কেন বলবি বল এইসব দিন?
এই যে তুই আর আমি দু’জনেই তো স্বেচ্ছাধীন—-‘
কোথায় আর হলাম স্বাধীন? এখন জীবন যে ডাক্তারের অধীন!
বারণের বাড়াবাড়ি! শাসনের কাড়াকড়ি! জীবনটা যেন বোঝা!
তাই তো শৈশবের রোদের কাছে একটু ওম খোঁজা
মনটা হয় ঝরঝরে তরতাজা——–
‘না রে! ভোরের আলোর কথা ভেবে গোধূলির রঙিন বাহার
উপভোগ করতে না পারাটা জীবনের সেরা ভুল—–
দেখার চোখ থাকলে ঠিক দেখতে পেতিস রে তুই
মাঝে মধ্যে বিকেলেও কিন্তু ফোটে সকালবেলার ফুল!’
কবিতা দে-সরকার