# আমি কেন লিখি # – ১ অরণ্যানী

# আমি কেন লিখি # – ১

অরণ্যানী

লেখিকা হিসাবে একদিন বড় কোনও সম্মানের অধিকারী হবো, এই আশা নিয়ে লেখা শুরু করিনি। এমন কোনও স্বপ্ন কোনদিন ছিল না আমার। তবে মনের স্বতঃস্ফূর্ত ইচ্ছায় মেয়েদের সঙ্গে পুতুল খেলতে গিয়ে প্রথম লেখা শুরু করি। মানে প্রায় মধ্য বয়সে। উদ্দেশ্য ছিল, পুতুল খেলায় বিভিন্ন কাহিনীর মাধ্যমে সমাজ, রাজনীতি, মানবিক চেতনা বোধ, মানুষের মনের জটিলতা সম্পর্কে মেয়েদের মনে সচেতনতা জাগানো। মেয়েদের তখন কিশোরী বয়স। কিন্তু বড় হওয়ার মুখে তখন ওরা। সেছাড়া টিভিতে অনেক বাংলা হিন্দি সিনেমাও ওরা দেখছে। তাই সঠিক পরিণত মনের হয়ে ওঠতে বড়দের কাহিনী পুতুল খেলায় ব্যবহার করতে সংকোচ হয়নি। যেহেতু এই পুতুল খেলার কাহিনী ছিল বাস্তব সমাজের ছবি, তাই একটু বড় বয়সে (কিশোরী বয়সে সাধারণত কেউ পুতুল খেলে না।) খেলতে ওদের আগ্রহ ছিল যথেষ্ট। যদিও আমার এই পদ্ধতিতে শিক্ষা দানের চেষ্টা সমাজে আমাকে পাগল প্রতিপন্ন করেছিল। কারণ মধ্য বয়স্ক এক নারীর পুতুল খেলা মানসিক রোগের লক্ষণ মনে হয়েছে তাদের কাছে।
আমার এই প্রচেষ্টা অনেকটা হলেও সফল হয়েছিল। কারণ আমি দেখলাম, আমার মেয়েদের মধ্যে স্বাধীন চিন্তাধারার বিকাশ ঘটছে সমাজের অনেক ছেলে মেয়েদের থেকে বেশি পরিমাণে। তারা বড়দের বিষয় নিয়েও বিতর্কে অংশ নিতে পারছে। অনেক জটিল সামাজিক, রাজনৈতিক বিষয়ে মত দিতে পারছে। সে জায়গায় ওদের সমবয়স্ক অনেক ছেলে মেয়েই শুধু প্রেম, হোটেল রেস্টুরেন্ট, পোশাক নিয়েই ব্যস্ত।

এরপর স্বাভাবিক নিয়মেই একদিন পুতুল খেলার অবসর আর না পাওয়ায়, আর ওরাও যৌবনে পা দেওয়ায় কমে গেল। তবুও একেবারে শেষ হয়ে গেছে বলতে পারছি না। আজও সন্ধ্যার দিকে সময় পেলে মাঝে মাঝে পুরনো পুতুলদের চরিত্ররা কে কী করছে, তা একটু শ্রুতি নাটকের মতো করে দেখাই আমরা। এতে লেখার সময় চরিত্রের মুখে খুব সাবলীল সংলাপ বসাতে সুবিধা হয় দেখি। আর নতুন নতুন কাহিনীর জন্ম হয়। নতুন অনেক চিন্তা ভাবনা কাজ করে আমাদের মনে। আমরা বিভিন্ন বিষয়ে ভাবি।

এবার সরাসরি আসি আমার লিখতে শুরু করার কারণ সম্পর্কে। ২০১৭ সালের নভেম্বর মাসে আমি ফেসবুক খুলি। দেখি অনেক ফ্রেন্ডরা এমন অনেক গল্প শেয়ার করছেন, যেগুলো সব কটিই প্রায় কয়েকটি ছকে পড়ে যাচ্ছে। কাহিনী একটু এগোলেই বুদ্ধি থাকলে কাহিনীর পরিণতি ধরে ফেলা যাচ্ছে। গল্পের মান অতি নিকৃষ্ট। (জানি না, কেউ আঘাত পেলেন কিনা। পেলেও কিছু করার নেই। আমার মত আমি প্রকাশ করলাম।) এমনকি এই সকল ছকে বাঁধা গল্প ফেসবুকে লিখে একজন লেখিকা ততদিনে যথেষ্ট নাম খ্যাতি অর্জন করে ফেলেছেন। বেশ অবাক হতে হল ফেসবুকে থাকা বেশিরভাগ মানুষগুলোর অপরিণত বুদ্ধি দেখে। আর তার সঙ্গে তো আছেই টিভি সিরিয়ালের মগজ বিহীন কাহিনীর জনপ্রিয়তা! মনে হল, ভালো যা কিছু আছে তা মানুষকে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য এগুলো কি সব ইচ্ছাকৃত ষড়যন্ত্র? আর অন্যদিকে টাকা কামানোর যন্ত্রেও পরিণত হচ্ছে কিছু মানুষ মানুষের রুচি বোধ, সমাজ চেতনাকে নষ্ট করার জন্য। তাই কলম তুলে নিলাম একদম অনভ্যস্ত হাতে তখন থেকে।
এত বড় লেখা পড়িয়ে আপনাদের কষ্ট দেবো না। ধীরে ধীরে লিখব। আজ এটুকুই।
(চলবে)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *