নারী দিবসের প্রহসন(মনের কথা প্রবন্ধ আকারে) কলমে / বাবিয়া নন্দী
নারী দিবসের প্রহসন(মনের কথা প্রবন্ধ আকারে)
কলমে / বাবিয়া নন্দী
আজ নারী স্বাধীনতা বা নারী দিবস যাই বলি না কেন,খুব বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে না।এতো ন্যাকামী সত্যিই আমার পোষায় না।তাই কিছু আলাদা করে ঢং এর লেখা না ই বা লিখলাম।কোন দিবস কিসের দিবস!কিসের নারী স্বাধীনতা? কুটকচালি কারা বেশী করেন?এই আমরা নারী রা।পরনিন্দা আর পরচর্চা সেখানেও নারী এগিয়ে।একজন কন্যা সন্তানের মা হয়ে অন্যের বিয়ে করা স্বামীকে নিজের হাতের মুঠোয় বা কব্জা করার চেষ্টা কারা করেন?এই নারীরা।বৌমার শরীর খারাপ হলে বা সন্তান ধারণের ক্ষমতায় ব্যর্থ হলে ওনারা এটাও খুঁটিয়ে দ্যাখেন না আদৌ দোষ টা কার?তাঁর পুত্রের না বৌমার?”বৌমা ভালোমন্দ খাবার খাও।তোমার কোল জুড়ে আমার বংশধর আসুক।আমার কিন্তু নাতি চাই বৌমা।তুমি কন্যাসন্তানের না।পুত্রসন্তানই প্রসব করবে।
যদিও মেডিকেল Science বলছেন ভ্রুণের লিঙ্গ ধারণে একমাত্র ভূমিকা পালন করে শুক্রাণু। সেখানে একজন পুরুষই দায়ী।সন্তান কন্যা হবে না পুত্র?তাই আবদার টা কিন্তু শ্বাশুড়ি কে করতে হবে তার নিজের সন্তানের কাছে।যদিও কারুর হাতেই থাকে না এর সমাধান।একমাত্র ঈশ্বরই করতে পারেন।
এতো গেলো সংসারের কুটকচালি মোটা বুদ্ধিমত্তা ও মানসীকতার পরিচয়।এরপর আসি বান্ধবী দের সাথে নিয়ে। “কি রে এখনও বয়ফ্রেন্ড জোটাতে পারলি না?করলি টা কি জীবনে?আমি দ্যাখ,রকি কে নিয়ে কত্ত happy…figure দেখেছিস।পুরো six pack মাইরি।সব মেয়েরাই তো ফ্লার্ট হয়ে যায় ওর উপর।বলি,হ্যাঁ রে তোর বাপি মায়ের সেফারেশন হয়ে গেছে শুনছিলাম।এখন কি আবার একসাথে থাকছিস।ওফ!আমার বাপি তো আমাকে চোখে হারায়।এখনও বাপি না খাইয়ে দিলে আমি খাই ই না।আর বাপিও কিচ্ছু খাবে না।এটা গেলো একটা বাচ্ছা মেয়ের স্কুল জীবনের গল্প।সে এটাই শুনে শুনে বড় হচ্ছে তাদের বাবা মা একসাথে থাকে।তাই বান্ধবী রা ঠারে ঠোরে বুঝিয়ে দেয় তার বাগ্য টা কি খারাপ।এটা শৈশব কালীন বন্ধুত্ব বিশেষত মেয়েদের।
তারপর কলেজ লাইফ শেষ হয়ে যথারীতি বাবা মায়ের দ্যাখাশোনা করা বিয়ে হয়ে গেলো।কারুর আগে কারুর পরে।কেউ করলো লাভ ম্যারোজ তো কেউ arrange…কারুর ভাগ্যে স্বামী ও সংসারের সুখ সইলো।আর কারুর সইলো না।বান্ধবী রা already জেনে গেছে।কার বরের কত আয়?কে honeymoon এ কোথায় গেছে।কার বরের রূপ কেমন?কার বর মাসে কাকে ক’টা শাড়ি দেয়।গহনা দেয়।কেউ যদি বলে এখান, এই জানিস আমার বর আমার 6 months aniversary তে আমায় ডায়মন্ড নেকলেস গিফট করেছে।
তারপর পরের জনের সুর,” ও মা তাই নাকি!আমার বর তো প্রতি মাসে আমাকে প্ল্যাটিনাম গিফ্ট করে।তারপর গলা একটু খাটো কর, এই জানি, সুমনার না ভীষণ ঝামেলা চলছিলো তো বরের সাথে। এতোদিনে মনে হয় ডিভোর্স হয়ে গেছে বুঝলি!বাব্বা বড় লোকের মেয়ের যা দেমাগ ছিলো।এবার কেমন হয়েছে!প্রেস্টিজে গ্যামাক।সিন ছিটে গেছে।পাশের জনের ও এখন তখন অবস্থা। বর আছে।ঘরও আছে।নেই শুধু কোনো টান।সেটাও অস্মি তার বন্ধু জানে ভালোভাবেই।তাই লাবণ্য কে দেখলেই নিজের পতি দেবতা টি কে নিয়ে রংঢং শুরু হয়ে যায়।জানে,কিভাবে বান্ধবীর দার্বল জায়গায় আঘাত হানতে হয়।এতো গেলো বান্ধবী দের কথা।
পাশের বাড়ির সুমি কাকী সারাক্ষণ কান ঝালাপালা করে দেয়,”মেয়ের তো অনেক বয়স হল।সোমত্ত মেয়ে ঘরে বসিয়ে রেখো না।বুঝলে পদ্মার মা?বলি কখন কি ঘটে স্বয়ং বিধাতাও বলতে পারে না।যদিও তোমার মেয়ের গায়ের রং টা খানিক চাপা।তাতে কি?তোমাদের ভালো টাকাকড়ি আছে,সে মেয়ে পার হয়ে যাবে ক্ষণ।আ হা আমার মহুয়ার অমন লক্ষী প্রতিমার মতন গড়ন আর পটল চেরা চোখ দেকেই তো এক্কেবারে পাত্তর পক্ষ হেলে হাঁ হয়ে গেলো।ওই যা সোনা দানা সে নয় আমিই দিয়েছি।ওদের কোনো দাবী দাওয়া ছিলো না।একসময় জমিদার ছিলো।তবে সম্পত্তি পাতি এখনও যা আছে।এর উপর জামাই আমার N.R.I.আমার মহুয়া কে পায় কে?
বলি হ্যাঁ গো চাঁদুর মা আজ চার বছর হয়ে গেলো তোমার ছেলের বউয়ের কোলে সন্তান এলো না।আমার বৌমার বছর ঘুরতেই আমার নাতি টা হযে গেলো।অমন লক্ষীমন্তর বউ আমার।ওই মাঝেমধ্যে মাথাটা গরম হলে দু চার কথা শুনিয়ে দেয়।তাতে আমি কান দিই না।আমার নাতিই এখন আমার কাছে সব।”সবেধনে নীলমনি”।তা তোমার বৌমার কি খবর গো?সব ঠিকঠাক আছে তো!বিয়ের সময়ই আমার সন্দেহ হয়েছিলো।অতো মোটা মেয়ে মানুষ।বৌদের একটু ছিমছামে হোতে হয়।এ হল শ্বাশুড়ি গিন্নির পাশের পাড়ার আত্মীয়া।যদিও কিছু দিন আগে ধরুন,ঝামেলা এমন তুমুল জায়গায় এসে নেমেছিলো যে যমুনা পিসি কে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসাটাই শুধু হয় নি।তারপরেও মনের জোর নিয়ে তিনি শর্মিলা দেবীর বাড়ির বৌমা কে নিয়ে ভীষণ উৎসাহী।
এরপর আসি অফিস কলিগের কথা নিয়ে।দুজনে রীমা আর মীতা একসাথে ই চাকুরী করেন।একজন সিঙ্গেল।আর অপর জন mingle ঠিক বলা চলে না।তবে সে রীমা রাণী নিজের পসার জমানোর জন্য যে কোনো পুরুষ মানুষের হাত ধরতেই প্রস্তত। সে সুইপার হোক বা অফিস এর Head of the Department মানে অফিসের boss…এমন কি নিজের কলিগ মীতা কেও অনেক কথা গোপন করে।প্রয়োজনে হয়তো ঠকাতেও দ্বিতীয় বার দ্বিধা করবে না।
হারুর মা নিজের বাড়িঘর সব বিক্রি করে ছেলের হাতে টাকা তুলে দিয়েছিলো।তারপর থেকে তার ঠিকানা পাকাপাকি ভাবে বৃদ্ধাশ্রম।তার সাথে মাঝে মধ্যে দ্যাখা করতে আসে তাঁর নিজেরই মায়ের পেটের বোন শিখা।আর তাকে বোঝায় যে তার ছেলে ও বৌমা তাকে মাথায় তুলে রেখেছে।তাকে ভাবতেই হয় না সংসারের অন্যান্য কিছু নিয়ে।সব তার বৌমা একাই সামলায়।তবু আজ হারুর মা বৃদ্ধাশ্রমে আশ্রিত।শিখা রাণী নিজের সৌভাগ্যের কথা তো শোনায়ই।কিন্তু ভুলেও কখনও তাঁর দিদিকে হাত ধরে নিজের ঘরে নিয়ে গিয়ে তোলে না।আশ্বাস দিয়ে বলে না যে” দিভাই তোর ছেলে আর আমার ছেলে আলাদা কি বল?”হোতেই পারে তোর বৌমা তোকে পছন্দ করে না।কিন্তু তোর বোন থাকতে তোর কষ্ট কিসের রে দিভাই?আমি আছি তো এখনও বেঁচে।ছোট্টবেলার মতোন আবার একসাথে থাকবো।গলাগলি করে গান গাইবো দুই বুড়ি তে।আবার রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা পড়বো।তোর আর আমার সুখ দুঃখ গুলো কে ভাগাভাগি করে নেবো।কি আছে তোর ছেলে নেই তো?তোর বোন তো আছে!
এই হল নারীদিবস।এই হল নারী স্বাধীনতা। এই হল আমার আপনার আমাদের সকলের জীবনগাঁথা।ব্যতিক্রম যে নেই তা নয়।কিন্তু যুগের হাওয়ায় অভিজ্ঞতা গুলো তে শুধু পচনই ধরছে।
একটু ভেবে দেখুন তো সব নারীরা এক জোট হলে আলাদা করে নারী বা পুরুষ দিবস পালন করতে হতো না।
পাঠক বর্গ ভেবে দেখবেন দয়া করে, সবটাই নিজের মতামত জানালাম।