হোলি / বাণী চন্দ দেব ——

হোলি / বাণী চন্দ দেব
———————————–
বিশাল অশ্বত্থ গাছটার নীচে মিষ্টি, মিতালি, চৈতালি, সঞ্চিতা পিচকারি হাতে দৌড়ে গেল – কাকু কাকু, দাঁড়াও, তোমায় রং দেব
কাকু সুধন্যবাবু বাজারের থলে হাতে পিছু ফিরে চাইলেন – আর কোথায় দিবি বাবা, ফাঁকা রেখেছে কোথাও?
সুধন্যবাবু পুরনোবাজার থেকে মাংস আার সব্জী কিনে ফিরছিলেন। কিন্তু রাস্তার ছেলে, ছোকরারা সাতসকালেই দফারফা করে ছেড়েছে। পিছন থেকে ছুটে এলো ভণ্ডু আর মঙ্গল। একজনের হাতে জল বেলুন আরকজনের বাদুড়ে রং। গজা জাপটে ধরল কাকুকে – আজ তোমায় ছাড়বো না। কাকু আর কি করেন বাজারের থলেটা উঁচু করে ধরে স্হির হলেন।
– দে দে যা দেবার দে দিকিনি।
ওদের সেকি উল্লাস, শিকার পেয়ে জল বেলুন, পিচচকারি, বাদুড়ে রং এর ঝটাপট প্রয়োগ চলতে লাগলো। সুধন্যবাবুকে ভালো করে রং এ চুবিয়ে ওদের ভারি আনন্দ। ওদিকে মিউনিসিপালিটি অফিসের সামনে দিয়ে এক পুরোহিতমশাইকে আসতে দেখা গেল গায়ে নামাবলী জড়িয়ে। দুহাতে ধরা ছোট সিংহাসনে শালগ্রাম শিলা। ভণ্ডু মিউনিসিপালিটি অফিসের পিছন দিয়ে ঘুরে এসে বামুনঠাকুরের পিঠে মারলো ছুড়ে জল বেলুন। মঙ্গল তার লম্বা আঙুল দিয়ে কয়েক পোচ বাদুড়ে রং লেপে দিল মুখে। আচমকা পুরোহিতের কালিমাখানো থমথমে মুখখানা যা দেখতে লাগছিল তা আর বলার নয়। মিতাদি আর তিতাদি সামনে থেকে পিচকারি দিয়ে রং দিতে যাবে যেই, একেবারে একেবারে পোখরানে বিস্ফারণ। ভয়ে সবাই পড়ি কি মড়ি দৌড় সোজা সিঁড়িঘর, থামাথামি নেই, একদমে ছাদ। ওদিকে পুরোহিতমশাই ডানহাতের আঙুলে পৈতে জড়িয়ে ব্রহ্মশাপ দিতে শুরু করেছেন – এই সবে সিনান করে শুদ্দ হই এইচি, দিলি তো রঙে ভিইজ্যে? তোরা সবকটা ফেল মারবি।
মিতালির চোখ ছানাবড়া – কি হবে তালে?
ছেলেরা বেগতিক দেখে লম্বাটে তিনতলা ফ্ল্যাট বাড়ির পিছনে লুকালো। কোন সিঁড়ির কোনায় যে আছে ব্রহ্মারও খুঁজে বের করার সাধ্যি নেই। পুরোহিতের ব্রহ্মশাপ দিয়েও শান্তি নেই, নিজের দেওয়া শাপে তেমন ভরসা পেলোনা বোধহয়। মিউনিসিপালিটি অফিসের পাশে বাণী প্রেসের সামনে যে পুলিশেরা টহল দিচ্ছিল তাদের গিয়ে ডেকে আনলো। কিন্তু অপরাধীদের দেখা মিললে তো? ব্যস্ শুরু হলো আস্ফালন
– সবার মুক চিনে নিইচি, একবার বেরো সবকটাকে জেলের ঘানি ঘুইরে তবে ছাড়বো দেকিস। শালগ্রাম শিলাকে অমান্যি? ইয়ার্কি পাতা হ্যায়?
গজা ঘুলঘুলির ফাঁক দিয়ে সে দৃশ্য দেখে ফিক করে হেসে ফেললো। ভণ্ডু চোখ রাঙিয়ে বললো – চোপ, ধরে নিয়ে যাবে যখন তখন বুঝবি।
এ গল্প যখনকার তখনও মাধ্যমিক শুরু হয় নি।গজারাই তো প্রথম ব্যাচ, ১৯৭৬ এ বোর্ড এক্সাম দেবে। এখন তো সবে ক্লাস সেভেন। পুচকি মেয়েগুলো তো দুধভাত। বামুনঠাকুর বিকট হম্বিতম্বি করতে করতে পুলিশের সাথে ফিরে গেলেন। যজমান বাড়িতে শেষমেশ তার পূজো করতে যাওয়া হলো কিনা জানা যায় নি আর। কেবল প্রতিবার একথা বিলক্ষণ মনে থাকতো, বামুনমশাইকে পিচচকারি আার না বাবা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *