প্রেম দিবসের একাল সেকাল, কলমে-নিতু চৌধুরী

প্রেম দিবসের একাল সেকাল
কলমে-নিতু চৌধুরী

সদ্য পেরোনো প্রেম দিবসের কথা নিয়েই আমার আজকের কলম পাঠক গন। বেশ লাগে কিন্ত এভাবে প্রেমের উৎসব পালন দেখতে।উৎসব বলছি কারণ দুর্গা পুজোর চারদিন,ক্রিসমাস, হোলি বা দোল সবই তো উৎসব পালনের দিন।আরো আছে পিতৃ দিবস, মাতৃ দিবস, বন্ধুত্ব দিবস সেইরকমই “ভালোবাসা দিবস ” বলতে তো বেশ ভালোই লাগে পাঠক গন তাই না?গোটা একটা সপ্তাহ ধরে প্রেম নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা বেশ মাখো মাখো ভাব মন্দ কি।
পাঁচ টাকার গোলাপ তিরিশ টাকায় কিনে ভালোবাসা জানাবার এই যে বিলাসিতা তা কখনোই অ প্রেম হতেই পারে না। বা ধরো একটা সুবিশাল টেডি বা চকোলেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাগ করে ধড়াম করে প্রোপোজ করেই কিস টাকে মিস না করার যে ফান্ডা ,বা প্রমিস করা একে অন্যের সঙ্গে থাকার, তারপর সেই বিশেষ দিনে উৎসবে সামিল মানুষদের কতো ভালো ভালো কথা,ফোনালাপ ইত্যাদি বেশ একটা প্রেমে পরার ইচ্ছা কে উসকে দেয় বৈকি। তবে সম্পর্ক গুলো পরের বছরের “ভালোবাসা দিবস “অবধি টিঁকবে কিনা সে গ্যারান্টি কিন্ত এই উৎসবের অংশ নয়।তাই “আসছে বছর আবার হবে”তা বোধকরি বলা যাচ্ছে না।এতো কষ্ট করে গাঁটের কড়ি খরচা করে শেষমেষ প্রেম টাই যদি না টেঁকে তবে আর কি করা?অগত্যা আসছে বছর আবার হবে ভেবে ব্রেক আপের জ্বালায় যে যার ঘরে ফিরে যাওয়া।তবে সব ক্ষেত্রেই যে এটা হবে তা ভাবার কারণ নেই আবার হবে যে না এমন ভাবারও কারণ নেই। তাই সম্পর্ক থাকুক নিজের মতো আর আমরা চলি নিজের খেয়ালে।
এতো গেল একালের প্রেম দিবসের উৎসব পালনের কথা তবে আমি বাপু একটু সেকেলে কিনা, তাই সেকালের কথা একটু বেশি করেই মনে পড়ে।
আমাদের সময় কোচিনের ছেলে বন্ধু জ্বর শুনে নিজ হাতে নোট লিখে যখন বাড়িতে দিতে আসতো তখন কেমন যেন নিজেকে বেশ দামী মনে হতো আর একটু যে মনে প্রেমের জন্ম হতো না তা বাপু বলতে পারবো না। পাশের বাড়ির ছেলেটার শরীর খারাপ হয়তো, তার মা মাথার কাছে বসিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলেন, বলে গেলেন মাথায় একটু জল দিতে। হয়তো তাদের কাছে সেদিন ই প্রেম দিবস। ধরুন স্কুলে যাওয়ার পথে কেউ গান ধরলো “এক লড়কী কো দেখা তো” তখন তো নিজেকে তার প্রেমিকা ভাবতে বেশ ভালোই লাগতো।তবে উৎসব পালন সম্ভব ছিল না। সরস্বতী পুজোর দিন সকালে হলুদ শাড়ি পরা স্কুল ফেরৎ ছাত্রী টিকে কেউ হয়তো প্রোপোজ করেই ফেললো কারণ সেদিন সবার চোখে সব দোষ মাফ, শুরু হলো প্রেমের উৎসব।
সদ্য বিবাহিতা যখন আমি, একান্নবর্তী সংসারের জাঁতাকলে পিষে হাঁফিয়ে উঠেছি হয়তো, হঠাৎই পতি দেবতার কন্ঠস্বর “কই কোথাই তুমি” ব্যস মনে প্রেমের লাডডু ফোটা শুরু কারণ জয়েন্ট ফ্যামিলির বাড়িতে ওই ডাকটাই ছিলো মোবাইল ফোনের রিং টোন। এখনও যখন সে বলে”আজকে তো মাংস রান্নাটা আগের দিনের থেকেও ভালো হয়েছে গো” বা কোন অনুষ্ঠান বাড়ি যাওয়ার আগে শাড়ির কুঁচিটা ধরে বলে “ভালো করে গুঁজে নাও নাহলে হোঁচট খাবে যে” মনে হয় এই ছোট্ট ছোট্ট মুহুর্ত গুলোই আমাদের প্রেম দিবস।
আমার মতে প্রেম কখনও স্বার্থ পূরণের গল্প হতে পারে না। আত্মত্যাগ আর স্বার্থ ত্যাগের মধ্য দিয়েই দুটো মানুষের হৃদয়ের মেলবন্ধন ঘটে আর তখনই হয় প্রেমের উৎসব।
চিন্তাধারা যাই হোক, প্রেমের উৎসব যে শাশ্বত কারণ সেই পুরাকাল থেকেই শ্রীরাধা- কৃষ্ণের প্রেম কাহিনী দিয়েই তো শুরু সনাতন হিন্দু ধর্মের প্রেমোৎসব তাই, ,,,
“প্রেম থাকুক আবেগে,প্রেম থাকুক স্বভাবে,
প্রেম থাকুক মনের মধ্যে শত সহস্র অভাবে।”

সমাপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *