বসন্তের ছোঁয়া – দেবযানী ঘোষাল
বসন্তের ছোঁয়া –
দেবযানী ঘোষাল
ছেলেটা মাকে পেয়েছিল এই বছর দশেক।
বাবাকে পেয়েছিল বছর আষ্টেক হয়তো।
এক সংসারে মানুষ ছেলেটা জেঠিমাকেই ছোট থেকে মা বলে ডাকতো।
মা তো ছিলই মনের গহীনে।
গর্ভধারিনী মা।
জেঠিমার কর্ত্রিতেই দুই ঘরের শাসন নিয়ম।
ব্যবসাদার বাবা কি কারণে যেন লাখ লাখ টাকা ধার করে বেপাত্তা।
তাগাদারদের কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত জেঠিমা।
শান্ত নম্র সুন্দরী মা স্বেচ্ছায় বিসর্জিত তাই মামাবাড়ি গিয়ে।
অপমান সহ্য করতে না পেরে।
মা বাবা হারা ছেলেটার চোখের জল কেউ কি দেখেছে তখন?
সর্বক্ষন হাসি হাসি মুখের ছেলেটা শিল্পী।
জন্মগত শিল্পী।
ভাস্কর।
ছোট সরস্বতী আনতো মায়ের হাত ধরে ছেলেবেলায়।
সরস্বতী পূজোর আগের দিন।
গতবছর বড় ঠাকুর এনেছে সে।
মাকে বলেছিল চাকরি পেলে ইয়া বড় ঠাকুর আনবে।
কথা রেখেছে ছেলেটা।
মা শুক্রতারা হয়ে দেখেছে তা।
আড়ালে বসে থাকা ছেলেটার বুকভাঙা কান্না কি কেউ দেখেছে?
গতকাল ছেলেটা ভালবাসার ছাত্রীটাকে মা লক্ষ্মীর আসনে বসিয়েছে।
সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে ভালবাসার দায়িত্ব নিয়েছে।
শত আনন্দমুখর মুখগুলোর মাঝে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছে নিজের কাছে।
মায়ের কাছে।
ঐ ছেলেটার কালরাতের বিনিদ্র বালিশ ভেজা কান্না কি কেউ দেখেছে?
আজ ওর বউভাত।
ভাত কাপড়ের দায়িত্ব নিয়েছে নিজের ভালবাসার মানুষের।
সাথে রং তুলিরও দায়িত্ব ভাগ করে নিল সহধর্মিনীর সাথে।
ওদের ভালবাসা হোক চিরন্তন।
এতকালের ঝরে যাওয়া জলে
রঙিন রঙে রাঙিয়ে
মুহুর্তরা মেলে ধরুক ডানা।
তুলির এলোমেলো টানে
তুলে ধরুক ওরা সবটুকু জীবনের ক্যানভাসে।
দেবযানী ঘোষাল