সরস্বতীপুজো_বনাম_প্রেমদিবস #পুরানো সেই দিনের কথা ছবি ব্যানার্জি

সরস্বতীপুজো_বনাম_প্রেমদিবস
#পুরানো সেই দিনের কথা
ছবি ব্যানার্জি

দীর্ঘ বাইশ বছর পর অনুষ্কা তার একমাত্র ছেলে অর্জুনকে নিয়ে তাদের এক সময়ের একান্নবর্তি পরিবারে সরস্বতী পুজো উপলক্ষে এল।এই পুজো উপলক্ষে পরিবারের ঐতিহ্য বজায় রাখতে এখনও অনেক জ্ঞাতি ও আত্মীয় স্বজনেরা আসে।

এর আগে দু চারবার সে একাই বিভিন্ন উপলক্ষে দেশের বাড়ি এসেছে। প্রতিবার তার ব্যাকুল চোখ ব্রতীন দাকে খুঁজে হতাশ হয়েছে।এবার ও পুজো মন্ডপে বসে ফেলে আসা শৈশবের কথাই ভাবছিল।

হঠাৎই কার মৃদু ধাক্কায় অনুষ্কা চেয়ে দেখতেই ব্রতীন বলল–কি রে অনু চিনতে পারছিস?অনুস্কা বলল–না চিনলেই মনে হয় ভালো হত।আমার চোখে তোমার ইলেভেনে পড়া ছিপছিপে চেহারাটাই শুধু আঁকা আছে।ইশ্ কি মোটা হয়ে গেছ,সেই ঘন কালো চুলে বেশ একটা চকচকে টাক ও পড়েছে।তোমার এই চেহারাটা আমার মোটেই ভালো লাগছে না।

ব্রতীন বলল–আমিও তো তোকে একই কথা বলতে পারি ।আমি আজও চোখ বুঁজলে যার চেহারাটা মনের ক্যানভাসে আঁকা আছে সেটা তোর বাসন্তী রঙের শাড়ি পরা দু বিনুনি করে চুল বাঁধা কিশোরী অনুকে।আমার কিন্তু তোর এই চেহারাটাও খুব ভালো লাগছে।সব বয়সেরই একটা আলাদা সৌন্দর্য থাকে অনু।

অনুষ্কা বলল–আচ্ছা ব্রতীন দা তুমি কি একা এসেছো?–না আমি শুধু আমার মেয়ে ঋদ্ধিকে তার পিতৃপুরুষের ভিটে দেখাতে, সংগে সরস্বতী পুজোও দেখাতে নিয়ে এসেছি।ওই দ্যাখ ও ঠিক একটা সঙ্গী খুঁজে নিয়েছে।

অনুষ্কা বলল–ওটা তো আমার ছেলে অর্জুন। দ্যাখো আমার ছেলেটা কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো তোমার মেয়ের দিকে চোখভরা মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে।নিশ্চয়ই ওদের মধ্যে আলাপ পরিচয়টা হয়ে গেছে।

ব্রতীন বলল—এই বয়স টাই তো ভালোলাগার বয়স রে।–শুধু ভালোলাগার বয়স?একদিন তুমিও ঠিক এইভাবে সরস্বতী পুজোর মন্ডপে আমার দিকে চেয়েছিলে।আর পুস্পাঞ্জলির ফুল আমার মাথায় লুকিয়ে ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলে–অনু তোকে দেখতে ঠিক জ্যান্ত সরস্বতীর মতো লাগছে।আজ বিকেলে আমার সংগে শাড়ি পরে ঠাকুর দেখতে বেরোবি?আমিও কি এক ভালোলাগার ঘোরে বলেছিলাম–যাব।

তারপর তো কতোদিন আমরা একসংগে ফুচকা খেয়েছি,স্কুল পালিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি। সেসব তোমার মনে নেই?–খুব মনে আছে।তুই তো একটা গেছো মেয়ে ছিলি।এখন তোকে পরিপূর্ণ একজন সুখি গৃহিনীর মতো লাগছে।

অনুষ্কা বলল– আমি বড্ড বোকা ছিলাম ব্রতীন দা।তাই তখন থেকেই আমি মনে মনে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতাম।ছোটবেলার স্মৃতি খুব সহজে ভোলা যায় না ব্রতীন দা।

ব্রতীন বলল– ভোলাটা তো উচিত ও নয়।মায়াময় শৈশবের স্মৃতি কি ভোলা যায়?কিন্তু এসব কি বলছিস তুই?ওইটুকু বয়সে কি কেউ এসব স্বপ্ন দেখে?দ্যাখ অনু সেই বয়সটাই তো ছিল পছন্দের মেয়েদের প্রতি মুগ্ধতা ভালোলাগার বয়স।বিয়ের আগে এমন মুগ্ধতা বহুবার আমার জীবনে এসেছে।তোর জীবনেও কি আসে নি?আসলে সুন্দরের প্রতি,বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তো মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। মুগ্ধতা,ভালোলাগার সংগে ভালোবাসার আকাশ পাতাল ফারাক।সেদিন শুধু আমিই তোকে একা দেখছিলাম না।আমার দুটো বন্ধুও তোকে মুগ্ধ চোখে দেখে বলেছিল– আজ অনুকে দেখতে ঠিক হলুদ প্রজাপতির মতো লাগছে।

–তুই যেটাকে প্রেম ভেবে ছিলি সেটা প্রেম নয়,শুধু মুগ্ধতা আর ভালোলাগার সান্নিধ্য।তখন আমাদের ভালোবাসার মানে বোঝার বয়সটাই ছিল না।এটা একটা সুখস্মৃতি।বুঝলি হাঁদারাম? এত বছর পর আমাদের দেখা হল বলেই তো ছোটোবেলার ছবিটা এত জীবন্তভাবে চোখের সামনে দেখতে পেলাম।এটা কি কম পাওয়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *