জ্ঞানেন্দ্রিয়___ শ্রীচিরঞ্জত

জ্ঞানেন্দ্রিয়___

শ্রীচিরঞ্জত

কালিদাস — মা আমি বড়ই তৃষ্ণার্ত, একটু জল দিন বড়ই পুণ্য হবে।

বৃদ্ধা — বাবা তোমায় তো আমি চিনি না, নিজের পরিচয় দাও, আমি অবশ্যই জল খাওয়াবো।

কালিদাস বললেন — আমি পথিক, দয়া করে একটু জল দিন।

বৃদ্ধা বললেন — তুমি পথিক কি করে হতে পারো ? পথিক তো কেবল দুজন, এক সূর্য ☀ দ্বিতীয় চন্দ্রমা 🌙 এরা কখনো থামেন না সর্বদাই চলায়মান। তুমি এদের মধ্যে কে সত্যি করে বল ?

কালিদাস বললেন — তাহলে আমি অতিথি, বড়ই তৃষ্ণার্ত দয়া করে আমাকে একটু জল পান করান।

বৃদ্ধা বললেন — তুমি অতিথি কি করে হতে পারো ? সংসারে দুজনই মাত্র অতিথি, এক অর্থ বা সম্পদ আর দ্বিতীয় যৌবন — এরা আসেন আবার চলেও যান, সত্যি করে বলো তুমি কে ?

কালিদাস তর্কে পরাজিত এবং হতাশ হয়ে বললেন — আমি একজন সহ্যশীল, এবার অন্তত একটু জল দিন !

বৃদ্ধা বললেন — না না সহ্যশীল তো মাত্র দুজন, এক ধরিত্রী যিনি পাপী-পুণ্যাত্মা সকলের ভার গ্রহণ করেন বা বহন করেন। দ্বিতীয় বৃক্ষ — তাকে যতই পাথর দিয়ে আঘাত করো তবু সে মিষ্টি ফল দিয়ে সেবা করে যায়। সত্যি বলো তুমি কে ?

কালিদাস বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বললেন — তাহলে আমি উদ্ধত হঠকারী এবার অন্তত একটু জল তো দিন।

বৃদ্ধা বললেন — অসত্য বলছো। হঠকারী দুই — এক নখ আর দ্বিতীয় চুল এদের যতবারই কাটো এরা বার – বার বেড়েই ওঠে। সত্য বল ব্রাহ্মণ তুমি কে ?

অপমানিত পরাজিত কালিদাস বললেন — তাহলে ধরুন আমি মূর্খ, এবার একটু জল দেবেন কি ?

বৃদ্ধা বললেন — না, তুমি মূর্খ কি করে হতে পারো ? মূর্খ তো দুজন ! এক এমন রাজা — যিনি বিনা যোগ্যতাতেই সবার উপর শাসন করেন। আর দ্বিতীয় এমন রাজপন্ডিত বা পুরোহিত যিনি রাজা কে প্রসন্ন করার জন্য ভুলভাল তর্কের সাহায্যে ভুলকেও সঠিক প্রমাণ করার চেষ্টা করেন।

কালিদাস — আর কিছু না বলতে পেরে সষ্ঠাঙ্গে বৃদ্ধার পায়ে পড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।

বৃদ্ধা বললেন — ওঠো বৎস।

কন্ঠস্বর অন্যরকম হওয়ায় কালিদাস চোখ তাকিয়ে অবাক দৃষ্টিতে দেখলেন স্বয়ং মা সরস্বতী তাঁর সামনে দণ্ডায়মান। কালিদাস করজোড়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলেন।

মা বললেন — বৎস সর্বদা মনে রেখো শিক্ষা বা বিদ্যা কখনো দম্ভ বা অহংকার দেয় না, যা দেয় তা হল বিনয় এবং বিনম্রতা।

🍂🌾🌿 জয় মা সরস্বতী 🌿🌾🍂
রম্য প্রতিবেদন- শ্রীচিরঞ্জত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *