পরিহাস —– রাজ পুরকায়স্থ
পরিহাস
রাজ পুরকায়স্থ
স্বপ্ন-সলতের আবেগী স্ফুলিঙ্গে
গোলাকৃত রাজপ্রাসাদের গর্ব কেতনটাকে
হৃদয় লালিমায় রাঙানোর সংলাপ আওড়াতেন
যে সুভাষদা
খবর পেলাম ,, রোগশয্যায় ।
লোক-লাজের লৌকিকতায় সেদিন দেখতে গিয়ে শুধাই
কেমন আছো সুভাষদা ??
আধ শোয়া কঙ্কালটা নির্বিকার ,, শুধু
বাঁদিকের ঠোঁটটাকে তাচ্ছিল্যের চূড়ায় উঠিয়ে
অনুশোচনার শ্বাসে একমুঠো শ্লেষ মিশিয়ে বল্লেন
আসলে কি জানিস রে রাজু
মায়ের দেয়া সাধের এই “সুভাষ” নামটার ই যত মায়া বুঝলি … !
লে হালুয়া ….. বলে কিরে লোকটা
নামের সাথে আবার অসুখের কি সম্পক্ক রে বাবা ….
বুঝিনা মাথামুন্ডু …. চুপটি করে চেয়ে থাকি ফ্যল ফ্যল
একজোড়া শীতল সাগরের গভীরে ,,
সুভাষদা বলতেই থাকেন –
নইলে দেখ না
স্বাধীনতার শরীর জুড়ে আজো প্রকট যাঁর শৌর্য সুবাস
স্বাধীনোত্তর প্রাসঙ্গিকতায় তিনিই তো আজ শ্রেষ্ঠ পরিহাস
তাই নয় কি …… ???
মাথা নাড়াতে নাড়াতে
সবজান্তা গোছের একটুকরো ভ্যাকুয়াম পেটের অতলে চালান করে
খানিকটা কৃত্রিমতা গলায় চড়িয়ে বলি
ছাড়োতো দাদা ওসব অনর্থক আবেগের অযথা উৎপীড়ন
তারচেয়ে বরং তোমার কথা বলো –
মন্থর মোচড়ে ঘাড় ঘুরিয়ে চোখে চোখ রাখেন সুভাষদা
পোড়া ছাইয়ের মতো চোখ দুটোতে রাগ না করুনা ,, বুঝিনা
বুকের অনিয়ন্ত্রিত ওঠানামায় কাঁপা কাঁপা গলায় বলতে থাকেন –
আমার কথা ….. শুনবি ….. তবে …. শোন
যদি পারিস পরিহাসের এই জ্বালাটাকে ধরে রাখিস কেমন
আর তোর স্ত্রীর গর্ভে যে প্রাণটা ক’মাস ধরে তিরতির করছে
পারলে তাঁর নামটা সুভাষ ই রাখিস …. বুঝলি …. সু-ভা-ষ !!
আমি হতভম্ব ,, কথা খুঁজে পাইনা ….. কি করবো বুঝিনা
সুভাষদা বলতেই থাকেন
রাখবি বল ….. বল …. রাখবি ….. শোন –
এইমুহূর্তে আরেকটা সুভাষের বড় দরকার রে দেশটার
হ্যাঁ … হরিলুটের এই স্বাধীনোত্তর মোচ্ছবে
দেশীয় ফিরিঙ্গীগুলোর বুকে দাঁড়িয়ে ,, যে
স্বপ্ন পাগল জাতিটার কানে
আবার গর্জনের সুরে বলতে পারবে –
তোমরা আমায় ………………..
সেই ঐতিহাসিক আকুতির নাছোড় প্রতিধ্বনিতে
ঘরের পথে পালাতে পালাতে
একটা কথাই ভাবছিলাম সেদিন ………..
আবেগের গহনে ঠিক কত ডেসিবেলের দুঃসাহস থাকলে পর
আজকের এই বাজারজাত যাপনেও স্বপ্ন পোষা যায় ….. তাইনা !!