আমি নারী, আমি গর্বিতা(প্রথম পর্ব),, কলমে-নিতু চৌধুরী
আমি নারী,আমি গর্বিতা(প্রথম পর্ব),,
কলমে-নিতু চৌধুরী
ভোরবেলা চায়ের কাপ হাতে সূর্যের দিকে তাকিয়ে তার অসামান্য রূপে মুগ্ধ আমি।হঠাৎই কবি মল্লিকা সেন গুপ্তের( সাধারণ মেয়ে, একুশ শতক)কবিতার দুটো লাইন মনে এলো,,
“রবিবাবু,
দেখো তোমার ওই সাধারণ মেয়ে, অসামান্য হয়ে উঠেছে, ভাবাচ্ছে তোমাকে।”
মনে হলো,নারী রূপে এই আমি সম্পূর্ণা?
মা-বাবার আদরের সেই ছোট্ট মেয়েটি, ভাইয়ের খুনসুটির সঙ্গী বড়ো বোনটি এই আমি আজ, অদৃশ্য দশহাতে সামলাচ্ছি সংসারের চাকা।তফাৎ একটাই মা দুর্গার দশহাত দৃশ্যমান কিন্ত আমি বা আমাদের মতো মেয়েদের দশ হাত অদৃশ্য। আমাদের কতো রূপ ধারণ করতে হয়। মনকে বোঝাতে হয় “আমি নারী,সব করতে পারি”।
সংসারের সকলের মুখে খাবার জোগানোর জন্য হতে হয় রান্নার লোক(সকলের মতে)বা অন্নপূর্না (আমার মতে)।কাপড় ধোয়ার ধোপা আমিই আবার কখনও স্বামীর প্রিয়া।সেই আমিই আবার অসুস্থ পরিজনদের সেবা যত্ন করার নার্স বা আয়া।কখনও হতে হয় ছেলে বা তার বন্ধুদের অথবা ছাত্র ছাত্রীদের গৃহ শিক্ষিকা বা বন্ধু। স্বামীর অফিস বা ব্যবসার ঝামেলা শেয়ার করার, মাথা রাখার ভরসার কাঁধ।কখনও বাবা-মা-ভাইয়ের খুঁটি নাটি কাজের দায়িত্ব পালন করে নিশ্চিত ভরসার অঙ্গীকার দান করা।সংসারের অর্থ মন্ত্রী হয়ে আর্থিক দিক সামলে আবার পূজোর থালা হাতে গৃহলক্ষী হয়ে সংসারের মঙ্গলের কামনাই প্রতিনিয়ত যার কিছুক্ষণ কেটে যায়।বন্ধুদের একাকীত্বের সঙ্গী হয়ে বা পাড়া পড়শীদের আপদে বিপদে পাশে দাঁড়িয়ে সমাজ সেবা ভালোই তো লাগে। রাত্রে বসে পড়ি লেখিকা হয়ে নিজের মনের কথা লিখতে।পাঠিকা হয়ে নিজের ভালোলাগার একটু সময় বার করে নিই কিছু পড়তে।
মা-ঠাকুমার কথায়, মেয়েরা অনেক শক্তি নিয়ে জন্মায়, তবেই তো সন্তানের জন্ম দিতে পারে, পুরুষ কি তা পারে?আজ মনে হচ্ছে কথাটা সবৈব সত্যি।দশাবতার রূপী আমার সারাটা দিন কিভাবে কেটে যায় বুঝতেই তো পারিনা। শক্তি তো কেউ দেয় তাই না।
সে যাই হোক, আজ মনে হচ্ছে আমার এই রূপ গুলোর প্রেমে সত্যিই পরেছি আমি। ভালো বেসে ফেলেছি এদের, এদের মধ্যেই আমার মুক্তি।যুগে যুগে আমি এভাবেই সম্পূর্ণা নারী হতে চাই।
(ক্রমশ)