শিরোনাম … ‘আজ শুধু দেবাঞ্জন’ কলমে ….ধ্রুবতারা (ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী)
শিরোনাম … ‘আজ শুধু দেবাঞ্জন’
কলমে ….ধ্রুবতারা (ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী)
শরীর শরীরকে চেনে , মন চেনে মনকে I কিন্তু কথাটা দেবাঞ্জনের ক্ষেত্রে খাটেনা I দেবাঞ্জন শুধু মনকে চেনে I সময়ের সাথে পা মিলিয়ে চলতে থাকা দামাল ছেলেরা যখন মাঠ দাপিয়ে খেলছে , পাড়ার গার্লস স্কুলের মেয়েদের উপরে ক্রাশ খাচ্ছে , KFC আর ডমিনোজ পিজা হাটে গিয়ে গার্ল ফ্রেন্ডদের সাথে সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে অনায়াসে মিথ্যে বলে পার পেয়ে যায় , ঠিক সেই সময়ে এই ছেলেটার সাথে আমার পরিচয় হলো I নামটা জিজ্ঞেস করতেই পাশের চেয়ারে বসে থাকা মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিল , ‘দেবাঞ্জন !’ এত সুন্দর নামটা শুনেই মনে হলো ঈশ্বর হয়তো ওর মধ্যে লীন , সেই কারণেই ভৌতিক জীবনের সব অনুভূতিগুলোকে স্বাভাবিক ভাবে প্রকাশ করার ক্ষমতা ওর কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছেন I যে দেউলে ঈশ্বর থাকেন সেই দেউলে ইন্দ্রিয়ের সঞ্চালনায় পার্থিব অনুভূতি প্রকাশের কী কাজ ! নাহ , কোনো কাজ নেই ! ভোরের তাজা রোদ্দুরে চকচকে কচি পাতার মত ওর ত্বক ! চোখে স্বপ্নের ভ্রমর ! হাসির মধ্যে এমন একটা মায়া , যেটা কোমল ভাবে তুলে নিচ্ছে সামনের ব্যক্তির মনের ভেতর থেকে তার সবটুকু I ওর মনের ভেতরে শান্ত কোনো এক নদীর স্রোতে কোমল পাপড়ি ভেসে চলেছে , কোথায় ! জানিনা , ঈশ্বর জানেন !
কিন্তু কে এই দেবাঞ্জন ! বহরমপুরের অমৃতকুম্ভ আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্রের একজন বাচিক শিল্পী I যে আবৃত্তি করে তাকে আমি বাচিক শিল্পী বলেই জানি , তা সে কোন ক্ষেত্রে কতটা স্বাভাবিক সেটা বিচার্য নয় I কে করবে বিচার ? যারা রাস্তায় চলতে ফিরতে নিজের স্বাভাবিক জীবন কাটিয়ে দিয়েও সারা জীবনে একটাও কবিতা আবৃত্তি করার ক্ষমতা রাখেনা , তারা কি দেবাঞ্জনের বিচার করবে ! যারা দিনে রাত্রে মানুষের বেশ ধরে দস্যুর অভিযানে সামিল , তারা কতটা স্বাভাবিক ? যে সমাজে স্বাভাবিক মানুষদের যৌন উত্তেজনার ইশারায় বুকে আর মস্তিষ্কে গজিয়ে ওঠে ঝোপঝাড় , সেই সমাজে দেবাঞ্জন এমন স্বাভাবিক নাই বা হলো ! ক্ষতি নেই , বরং পৃথিবীর বুকে দেবাঞ্জনরাই অমলের মত রোদ্দুর হয়ে যাবে একদিন ! আমি শুধু বলতে চাই ,দেবাঞ্জন যেটা করে সেটা কেউ বুঝতে পারেনা , ও যেটা দেখতে পায় সেটা কেউ দেখতে পায়না I আবার বিপরীতে বলতে গেলে সবাই যেটা করতে পারে , দেখতে পারে , দেবাঞ্জন সেটার ঊর্ধে করতে বা দেখতে পারে I আলোকবর্ষ ধরে নিদ্রিত এই মায়ার পৃথিবীতে দেবাঞ্জন একমাত্র সেই দৃষ্টি নিয়ে ঘোরাফেরা করতে পারে , যে দৃষ্টি দিয়ে দেবাঞ্জন দেখতে পায় আলোর বিন্দুর মত একেকটা মনকে !
স্টেজের সামনে ওর আবৃত্তির শিক্ষিকা সোমা রায় ভট্ট’র হাত আর মুখের ইশারা দেখতে দেখতে তিনটে কবিতা আবৃত্তি করে দেবাঞ্জন যখন স্টেজ থেকে নেমে আসছে তখন মনে হলো , সত্যিই দেবাঞ্জনের মত মানুষ বরাবর মনকে ভালবাসতে চায় I ও , ওর শিক্ষিকার হাত আর মুখের ইশারা নয় , শিক্ষিকার রক্তস্রোতে বইতে থাকা আত্মার ইশারা দেখতে অভ্যস্ত I কাছে আসতেই সোমা দেবাঞ্জন কে স্নেহের স্পর্শে আলিঙ্গন করে বলে উঠলেন , ‘জানেন , মনের যে কতরকম অনুভূতি হয় সেগুলো দেবাঞ্জন কে না দেখলে জানতেই পারতাম না I প্রতিটি দিন যখনই ওকে দেখি , মনে হয় ও যেন কৌশলে ঈশ্বরের ভাষা রপ্ত করে ফেলেছে !’ সোমার কথা শুনে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানাতে জানাতে বলতে ইচ্ছে হলো , ‘সাব্বাস দেবাঞ্জন , তোমার ওই দুই চোখে স্বপ্নের ভ্রমরেরা এভাবেই তোমাকে আকাশের কাছাকাছি নিয়ে চলে যাক I তুমি এক টুকরো মেঘ রুমালের মত উড়িয়ে দিও চাঁদের গায়ে I চাঁদের সুন্দরতাও যেন তোমার সুন্দরতার সামনে মুখ ঢেকে ফেলে !’ সবার কাছে সুন্দরতার সংজ্ঞা যদি হয় বর্ণ আকৃতির সমাহার , তবে আমার কাছে সুন্দরতার সংজ্ঞা শুধু একটাই নাম , ‘দেবাঞ্জন ..’
শিরোনাম … ‘আজ শুধু দেবাঞ্জন’
কলমে ….ধ্রুবতারা (ইন্দ্রনীল ব্যানার্জী)
খোয়াংখো ….মনিপুর …২১/১২/২০২১