গন্ধ —- কেকা মল্লিক

গন্ধ
কেকা মল্লিক

পামেলা সাহা, বয়স ৩৪, দস্তুর মতো বিজ্ঞাপন দেখে ইন্টারভিউ দিয়ে চাকরি জয়েন করতে এসেছি, দুই যমজ ছেলেকে পড়াতে। যতটা সম্ভব দ্রুত সিঁড়ি বেয়ে উঠে এসেই কলিং বেল টিপলাম। সাজানো গোছানো ঘর, মিষ্টি দুটো ছেলে, মোটা টাকা মাইনে। আসতেই ঠান্ডা জল শরবত আর দুটো সন্দেশ। কতোদিন পর খেলাম।
কিন্তু বুঝতে পারছিনা অসম্ভব দুর্গন্ধ কেনো ঘরটায়। প্রথম দিন কিছু না বলে চলে এলাম। একদিন বাদেই আবার পড়াতে যেতেই তীব্র হোলো গন্ধ। সেদিন সিঙারা চা দিলেও গলা দিয়ে নামলোই না। না পেরে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, কিসের এরকম বোঁটকা গন্ধ ? বোললো পাখির। মানে? দেখি দরজার উপরে বিশাল খাঁচা, তাতে হরেক পাখি। খাঁচার নীচে একটা ট্রে আর তাতে উচ্ছিষ্ট আর বিষ্ঠায় ভরা। মাঝে মাঝে পরিষ্কার হয়। ওরা দরজা বন্ধ করে এসি চালালেও প্রাইভেট টিচার কে এসি দিলে পোষাবে না,তাই।

পারলাম না ছাড়তে। আবার তৃতীয় দিন এসেছি রুমালে কর্পূরের টুকরো জড়িয়ে। কাজ টা আমার করতেই হবে। সুপ্রিয় যে নেশামুক্তি কেন্দ্রে আছে সেখানে যে মোটা টাকা দিতে হয়। ৮বছরের মুনিয়া যে বাবার জন্য আমাকেই দোষারোপ করে,আমি ওর বাবাকে হস্টেলে রেখে এসেছি। কি করে বোঝাই, যে সুপ্রিয় মুনিয়াকেও বেচে দিচ্ছিলো নেশার ঘোরে টাকার জন্য।

রাতভর যুদ্ধ করলাম মনের সাথে। আচ্ছা সুপ্রিয় রাতে চুমু খেতে এলে কতোবার তো বমি করে ফেলেছি গন্ধে, পরে কিরকম সয়ে গেছিলো!

মনে পরে একবার মায়ের ভাতের তলা ধরে গেলে সারাবাড়ি খেলেও আমি খাইনি ভাত, গন্ধ কি তীব্র তাই।

মা খুব মিস করছি তোমায়,তোমার আঁচলের আদরমাখা গন্ধ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *