চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জন লেখিকার নাম- বাবিয়া নন্দী

উপন্যাসের নাম- চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জন
লেখিকার নাম- বাবিয়া নন্দী
ধারাবাহিক
অষ্টম পর্ব (৮)

সত্যব্রতর দুটো চোখ ব্যাকুলভাবে অনুসন্ধান করে চলেছে যাকে তার মন সর্বক্ষণ খুঁজেছে।যার জন্য সে এই কর্দমাক্ত পাঁকের মধ্যেও নিজেকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়েছে।আজ কি তবে এরা সেই রমনী কে লুকিয়ে রেখেছে?না তা তো হোতে পারে না।নানা প্রশ্ন যখন সত্যের মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে আসল সত্য জানার জন্য ঠিক তখনই তার চোখ চলে গেল একেবারে কোণের দিকে রক্তিম শাড়ি তে সজ্জিত অধোমুখে শঙ্কিত চিত্তে দাঁড়ানো একটি বছর সতেরোর মেয়ের দিকে।মেয়েটির মুখ পুরোপুরি দেখা না গেলেও হাবেভাবে বুঝতে ও চিনতে এত্তো টুকুও অসুবিধা হল না সত্যের।এতোক্ষণে যেন সে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।মেয়েটি একবার মাত্র তার দিকে তাকিয়েই মুখ নত করলো।সত্যর মনে হল,মেয়েটি তো সেখানে উপস্থিত রয়েছে।কিন্তু তার চোখ গুলোও বড়ই নিষ্প্রাণ।যন্ত্রচালিতের ন্যায় যেন সকলে তাঁকে ওই স্থানে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।সে যেন শুধুই একটা জড়বস্তু। না আছে গতি।না তো আছে মনের কোণে কোনো আবেগ ও উচ্ছাস।মৃতপ্রায় লাশ যদি দাঁড়িয়ে থাকে বা ঘোরাফেরা করে বেড়ায়,তাঁকে যেমন টা দ্যাখাবে,এই মেয়েটিকেও ঠিক তেমনটাই দ্যাখালো সেই মুহুর্তে। সত্য আর বিলম্ব না করে কোণের দিকেই অঙ্গুলি নির্দেশ করে পিয়ারী বাঈ কে ইশারায় বললো,”হামে উস লাড়কি কো চাহিয়ে।”পিয়ারী বাঈ ও তৎক্ষনাৎ হেসে গড়িয়ে বললো,”সাব আপকো তারিফ দেনা পারে গা,আপ কা পাসান্দ তো লাজাবাব হ্যায়।হাম তো ইসকে বারে মেঁ হি বোল রহে থে,মাল তো আচ্ছি হ্যায়,পার ঘিসঘিসানি বহুত জাদা।নকরে বহুত হ্যায়।চার মাহিনা সে ইসকি নকরে কি বোঝ উঠাতে উঠাতে হাম লোগ তো পাগাল হো চুকে হ্যায়।আব ক্যায়া কারে লে জায়িয়ে জারা হিচখিচ মাচায় তো উসসে দো চার থাপ্পার লাগা দেনা।” হ্যাঁ থাপ্পড় তো মারতে ইচ্ছে ই করছিলো সত্যের তবে সেটা মেয়ে টা কে না।স্বয়ং পিয়ারী বাঈ কেই।মেয়েমানুষ হয়ে যে আরেক মেয়ের সর্বনাশ করতে উদ্দ্যত হয় তার জীবনে বেঁচে থাকারই কোনো অধিকার আছে বলে সত্যের যথেষ্ট সংশয় আছে।তবে ততোক্ষণে সত্য একটা জিনিষ লক্ষ্য করলো মেয়েটির চোখে।যার চোখ দেখে মনে হয়েছিলো নিষ্প্রাণ। হঠাৎ করে একবার সেই চোখই অগ্নির ন্যায় দপ করে জ্বলে উঠলো সত্যর দিকে তাকিয়ে আবার অবজ্ঞা ভরে মুখে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে আবার মুখ টা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিলো।সত্যর এমন সময়ে নিজের অজান্তেই কেমন যেন একটা কৌতুক বোধ করলো।পিয়ারী বাঈ ততোক্ষণে বাহাদুর সিং কে ডেকে ওদের কামড়ায় যেতে বললো।আর নিজে বোধ হয় উঠে নিজের কামড়ায় চলে গেলো।মেয়েটি তো অনেক কাকুতিমিনতি করলো,”মুঝে ছোর দো।কিউ মেরী মার্জি খিলাফ গান্দা কাম কারাতে হো।একদিন মেঁ তুম সাবকো দেখ লুঙ্গি।বহুত জুরুম কারতে হো।আখির হামনে তুম লোগো কা ক্যায়া বিগারা থা কে ইস তারহা সে সাজা দে রহে হো।ইসসে আচ্ছা জাহের পিলাদো হাম মারনা চাহতে হ্যায়।”বাহাদূর সিং ঝপাৎ করে এক থাপ্পড় মেয়েটির গালে লাগিয়ে দিলো।সত্য তো হাত ওঠাতেই যাচ্ছিলো কিন্তু তাহলে তো সব গন্ডগোল হয়ে যাবে।এদের কে তো জানতেই দেওয়া যাবে না,যে সে মেয়েটির ভক্ষক নয়,কেবলমাত্র রক্ষক হয়েই এসেছে।

চেঁচামিচি করতে করতে বাহাদুর সিং দুজন কেই ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে দরজা লাগানোর আগে একটি জঘন্য নোংরা হাসি হেসে বললো,”ক্যায়া সাব আব মাজা লো মাল কা।অউর হামে ভি কুছ বাকশীষ বাগেরা জারুর দেনা সাব।মাত ভুলনা।”সত্যর তো তখন ইচ্ছে করছিলো বকশীষ না বাহাদূর সিং এর টুটি টিপে এক্ষুণি শেষ করে দিই।কিন্তু তা করলে তো তার চলবে না।অগত্যা বকশীষ ই দিতে হল।তারপর দরজা বন্ধ হয়ে গেলো।সত্য বললো,সে নিজেই বন্ধ করে দেবে।এদিকে মেয়েটি তো কুঁকড়ে ভয়ে হাত পা জড় করে বসে আছে।চোখ বন্ধ করে।অনেক টা দীপাবলির রাত্রিবেলায় যখন পাঁঠা বলি দেওয়ার জন্য পাঁঠা কে স্নান করিয়ে এনে যুপকাষ্ঠে মাথা ঢোকানো হয়,তখন যেমন একটা অসহায় অবলা প্রাণীর অবস্থা হয়,তেমনই অবস্থা তখন মেয়েটিরও হয়েছিলো।শুধু তাই নয়,দীপাবলি কেন বলবো নবমী তে মোষবলি,বকরীদে গরু কাটা এই রীতিনীতি গুলোও তো ধর্মের নামে অম্লান বদনে চলে আসছে যুগের পর যুগ ধরে।কি হবে আর সেসব কথা বলে।প্রসঙ্গত,মেয়েটির কথা উত্থাপন করতে গিয়ে এতো কিছু মূর্খের ন্যায় বলে বসলাম।সত্য মেয়েটির অনতিদূরে বসে বললো “আপনি চিন্তা করবেন না।নিরাপদে থাকতে পারেন।আমি আপনাকে ভোগ করতে বা নষ্ট করতে এখানে আসি নি।আপনার নাম কি?”সমস্ত কথোপকথন হিন্দী বাংলা মিশিয়েই পরিবেশন করলো সত্য মেয়েটির নিকট।

এতোক্ষনে মেয়েটি দুই চক্ষু উন্মিলিত করে সত্যের মুখের দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে বলে উঠলো,” মাজাক কার রাহে হো সাব,হ্যায় না?মার্দ এয়সা ভি হোতা হ্যায় ক্যায়া?
সত্য প্রতুত্তরে বললো,”আপনি ক’জন পুরুষ কে দেখেছেন,যে এত্তো শীঘ্র সিদ্ধান্তে উপনীত হচ্ছেন?সব পুরুষ এমন হয় না।তখন মেয়েটি প্রশ্ন করলো সত্যকে,তো আপ ইহা কিউ আয়ে হো?ক্যায়া কাম হে আপকা?”সত্য বললো সে না হয় সময় এলেই বলবো,”আগে আপনার নাম তো শুনি।”
মেয়েটি-হাম রোশনি বাঈ হ্যায়।হামারা নাম ইন লোগো নে রোশনী বাঈ রাকখে হ্যায়।”
সত্য-“আমি এঁরা কি নাম রেখেছে,বিশ্বাস করুন তা নিয়ে আমার বিন্দুমাত্র কোনো কৌতুহল নেই।আপনার আসল নাম টা জানতেই আপনায় জিজ্ঞেস করা।”
মেয়েটি- “আসলি নাম?”
সত্য- হ্যাঁ আপনার বাড়ির নাম
মেয়েটির চোখে মুখে একটা অদ্ভুত তৃপ্তির হাসি খেলা করে গেলো,ঠিক শরতের রৌদ্র আর বৃষ্টি যেমন একই আকাশে ক্ষনিকের তরে উঁকি মেরে চলে যায় তেমনই।
মেয়েটি আবার বলতে শুরু করলো,”আসলি নাম জান কে ক্যায়া ফায়দা সাব,ইহামে কিসি কা ভি কই আপনা নাম লেনে কি ইজাজাত নাহি।”
সত্য- “অন্যের সামনে বলতে কে বলেছে?আমার সামনে তো বলো।”
মেয়েটি এতোক্ষণে একটু নড়েচড়ে বসে কিছুটা নম্র ও কিছুটা উৎসাহিত হয়ে বললো,মেরা নাম উমা হ্যায়।অর্থাৎ সে উমা।

ক্রমশ (চলবে)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *