নিঃসঙ্গ রাত্রি — জিৎ পাত্র
নিঃসঙ্গ রাত্রি
জিৎ পাত্র
যেসব সকালে শোকসংবাদ আসে, সেসব সকালেই তোমার কথা মনে পড়ে। মুহূর্তেই ভেঙে যায় অন্দরমহল।
খেলাঘর থেকে কেঁদে ওঠে পুতুলেরা। তারপর গোটা দিন টুংটাং টুংটাং শব্দ…
একজন মানুষ ঠিক কতখানি একা হলে নিজেই একটি শোকবাড়ি হয়ে ওঠে? ঠিক কতখানি সহ্যের পর নিজেকে চিতাকাঠ মনে করতে শুরু করে? এসব প্রশ্ন তোমার কাছে পৌঁছে দেব, মনে মনে ভেবেছি বহুদিন। কিন্তু, মধ্যরাতের এইসব বেদনাগুচ্ছ তোমার ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য পিয়নের হাতে গুঁজে দিতে যাব, এমন সময় হাত ধরে টান মারে তোমার সম্পর্কে সবজান্তা আমার এক বন্ধু। যদিও এখন আমার বন্ধু বলে কেউ নেই। তবুও দু-এক রাত কানামাছি খেলি দুজনে । দু-এক দুপুর ওর মতো না হতে পারার জন্য বকা খাই। তবুও কোনো কথা কানে যায় না আর। অদ্ভুত টানে তোমারই মুখ মাথার ভেতর ভনভন করে। তোমাকে হারিয়ে এপাড়া ওপাড়া ঘুরে প্রতিটি শোকবাড়িতে গিয়ে বলতে ইচ্ছে করে — এই সমস্ত কিছু মিথ্যে। তোমাদের ধূপবাতি, সাদা থান, নীরবতা এসব কোনো কিছুই ওঁর কাছে মূল্য পাবে না কোনোদিন। যাঁরা চলে যায়, তাঁরা ভালো থাকে। ভালো আছে খুব।
ফেসবুক আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। দিয়েছে নির্লজ্জ আত্মপ্রচারের খোলা আকাশ। নিজের লেখার সঙ্গে বন্ধুদের পরিচয় ঘটিয়ে দেওয়ার মতো সাঁকো। করে দিয়েছে অন্যের লেখা পড়ার আর তা আমাকে কতখানি স্পর্শ করল তা জানানোর সুযোগ। এমনকি একাকিত্বের বিষছোবল থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে এই ফেসবুকই।
একটা সঠিক প্রেম করবো বলে না জানি কত সম্পর্ক ভেঙেচুরে শেষ করেছি! সেসবের হিসেব কখনও কষা হয়নি, আসলে প্রতিটা সম্পর্কের দায়বদ্ধতা আমার ভেতরের আমিটাকে তিলেতিলে শেষ করে দিয়েছে…
আমি চেয়েছিলাম এমন একটা প্রেম, যেখানে কোনো ফর্মালিটি নেই,। অধিকারবোধ নেই । এমনকি তাকে পাওয়ার ক্ষিদেও নেই, ।
ঘোর বর্ষায় এক ছাতায় সঙ্গীনিকে জাপটে চলাটা যদি সম্পর্ক হয় ,
আমি ভুল করে ছাতা ঘরে ফেলে একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজতে চাওয়া কে প্রেম বলি …
তোমায় দেখতে চাওয়ার অসুখ যদি তুমি ছুঁয়ে দিলেই গায়েব হয়ে যায় তবে তোমায় না পাওয়ার অসহ্য যন্ত্রণাকে আমি প্রেম বলে মানি …
দীর্ঘসময় একসাথে থাকতে থাকতে কথা ফুরিয়ে এলেও একসাথে থাকার চেষ্টা করে যাওয়াটা সম্পর্ক হলে।
যোগাযোগ মুছে ফেলে ডায়েরির পাতায় সাজিয়ে রাখা অমলিন স্মৃতিরাই আজ আমার কাছে শ্রেষ্ঠ প্রেম ।
এখন আর লিখতে ভালো লাগে না।তবু চেষ্টা করি প্রতিটি চরিত্রে যখন নিজেকে খুঁজে পাই ।কেন জানিনা দু ফোঁটা চোখের জল গড়িয়ে পরে। আজকাল নিজেকে দূর্বল মনে হয়। বুকের মধ্যে জমা থাকা কষ্ট গুলো রাত হলে গভীর যন্ত্রণায় পরিনত হয়। এইভাবেই একটা ওষুধ প্রতিদিন নিজেকে মৃত্যু দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় ।
রাত বেড়ে আসে। গলে যায় সমস্ত আলো। দূরের কোথাও কাঁদছে জোনাকিরা। এমন রঙ মাখিয়ে দেওয়া কিংবা মুছে ফেলার দিনে যারা অন্ধের মতো মৃদু আলোটির পাশে বসে থাকে বা ডায়েরিতে লিখে রাখে আলোদের গান, সেইসব মায়াবী মানুষের হাতছানি বড় চেনা মনে হয় আমার।
প্রিয় বকুলগাছ, অদ্ভুত এইসব রাত পেরিয়ে তোমার কাছে বসতে ইচ্ছে করে। আমি চাই মায়াবী আলোয় তোমার ডাল থেকে ঝরে পড়ুক একটার পর একটা বিষাদের পাতা। আমার বারান্দা হয়ে উঠুক বসন্তময়। আজ অবশিষ্ট বন্ধুদের ডাক ফেরাতে পারিনি বলে নিজেকে রাঙিয়ে নিয়েছি অনিচ্ছাসত্ত্বেও। অথচ, তুমি জানো, এমনকি এই মফসসলের সমস্ত মরে যাওয়া গাছেরা জানে কীরকম রঙহীন হয়ে বেঁচে আছি আজকাল। দিনের শেষে ‘মুছে ফেলার মতোই’ কিছু একটা লিখে রাখলাম!
প্রতারণা
জিৎ পাত্র
সে দিন তোমাকে ঠিক চিনেছিলাম
কি আশ্চর্য ,চেনার তো কথা ছিলোনা।
প্রকাণ্ড একটা উই ঢিবি হৃৎপিণ্ডের উপর
কয়েক টা পোকা সেদিন হঠাৎ তাপে নির্লিপ্ত,।
অথচ এমন তো হবার কথা ছিলোনা!
আসলে সময় বুড়িয়েছে জানো?
সূর্যোদয় হোক অথবা জ্যোৎস্না।
আর ভেজায় না আজ কাল
বরং খায় আমাকে রাহুর মত।
আচ্ছা ওদের মুখে কি আ্যসিড থাকে?
আমার চামড়া গুলো পুড়ে গেছে।
কোনো অনুভূতি হয়না এখন
অথচ সেদিন চামড়ার নীচে পাতা ঝরা শিশির।
তারপর সারাদিন ক্যাকটাস ভেজা আলোতে
খুঁজে মরি তোমাকে অর্থহীন তোলপাড়।
নামহীন ইচ্ছেরা দিশাহীন, ক্লান্ত বিকেলে।
চোখের কোনে হঠাৎ নেমে আসা
একটা ফোঁটা জল জানান দেয়।
“” মৃত মানুষের অস্তিত্ব ছুঁয়ে শুধু বোকারা কাঁদে”