শিরোনাম – অনুকবিতা ( ভেবে দেখ মন ) ***** রচয়িতা – বরুণ মাইতি
শিরোনাম – অনুকবিতা ( ভেবে দেখ মন )
*************************
রচয়িতা – বরুণ মাইতি
———————————–
(১)
ভীষণ দামি মুখোশের পিছনে
রাগ করে না বিদ্রুপের প্রেরণে ।
তোমার অনামিকার দেওয়াল ঘিরে
লিখবোই আমি পোড়ামাটির সুরে ।।
(২)
মাছরাঙার ঠোঁটে লেগে থাকা রক্তের সিঁড়ি বেয়ে ….
উচ্চাভিলাষী মন অসভ্য সভ্যতার নগ্ন স্তনে আছে চেয়ে !
জরায়ুর ভেতর হতে বেড়ে ওঠা নিষ্পাপ প্রাণের উদ্বেল লহরি ….
ভূমিষ্ঠ হয়ে আমৃত্যু সন্ধান করে চলে একখণ্ড কাঁচুলি ।।
(৩)
সভ্যতার ওই ভব্যতায় ভাঙছে নদীর পাড়
ভাসছি তবু ভীষম বেগে আশ্রয় তলোয়ার ।
চোখের মাঝে নিদ্রা অগাধ তবু হৃদয় নিশাচর
সময়খণ্ড চূর্ণবিচূর্ণ ! সমাজ মৃতসংস্কৃতির আঁতুড়ঘর ।।
(৪)
সাম্যের সন্ধানে যুগ যুগ ধরে ভাঙছি কোন সে পুঁজিবাদের তালা ?
রক্তকরবীর মালাতে গেঁথে রেখেছি অহেতুক রক্ত নদীর ধারা !
নিয়ন আলোয় জোছনা জলে তৃষ্ণা মেটায় অভুক্ত মায়ের আঁচল
পর্ণকুটিরে পান্তা ফুরায় ! সমুদ্রস্নানে অট্টহাসিতে নাচছে লবনাক্ত রাজমহল ।
(৫)
আদি সূর্যটা ভাঙতে ভাঙতে সেই কবেই গিয়েছে অস্তাচলে
প্রতিটি যুগাবসানের বেদিতলে একটি করে সূর্য খসে পড়ে ।
স্বার্থান্বেষী সভ্যতায় বারবার শ্লীলতাহানি হয় শুদ্ধ আলোকরেণুর
আকাঙ্ক্ষা তবু ছুটতে থাকে নোয়ার নৌকা হতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত পরমাণুর ।।
(৬)
যেথা বিস্ময়মাখা নয়নতারা অনিকেত পাখির সন্ধানে
সেথা পিঞ্জরবন্দি অচিনপাখি কেন উড়িতে চাহে না মধ্যগগনে !
মূঢ়তার বিজয়ধ্বজা সারাক্ষন কেবল বাতাসে পতপত করে
জ্ঞানজ্যোতির শুদ্ধভূমি মহাকাব্যের পাতায় পাতায় ফিসফিস কথা বলে ।।
(৭)
বিলাসিতার গহীন জলে স্নানরত বিশ্ব চরাচর
বিজ্ঞাপনের রঙিন আলোয় নগ্ন নারীর আঁচল ।
আবর্জনায় পূর্ণ হয়ে নিস্তারিণী গঙ্গা বইছে ধিকিধিকি
সন্তরণের পথ্য সন্ধানে আদিমানব সেজে চকমকি পাথর ঠুকি ।।
(৮)
দিনান্ধ পেঁচার মানচিত্রে আঁকা মেরুদন্ডহীন সরীসৃপের দল
শীতের দুপুরে আঁশটে গন্ধ ছড়িয়ে ভ্রান্তপথে করছে টলমল ।
সভা সমিতি মিছিলের নকশা করা যাদের সারা শরীর
গণতন্ত্রের পিদিম হাতের তাদের ! বুকের ভেতর মৃত ফসিল ।।
(৯)
অন্তরাত্মার শঙ্খধ্বনি বিজন পথে একলা শুধুই হাঁটে
ব্যস্তমনের ক্যানভাসেতে চেতনাহীন একফালি চাঁদ ওঠে ।
দুমড়ে পড়া জীবন শুধু আত্মসুখের সন্ধানেতে পিঞ্জরে নড়েচড়ে
হৃদয়ের পোড়ামন্দিরে অবচেতন জোছনার ছাই ওড়ে ।।
(১০)
অরণ্যের রোদনে সিক্ত বসুমতীর জীর্ণ আঁচল
ইট বালি সিমেন্ট মোড়া আমার সখের শহর ।
কানায় কানায় কংক্রিটের চাদরে বনলতা গিয়েছে চুরি
ব্যালকনিতে সাজানো টবে ওটা যে জীবনানন্দের নষ্ট বিভাবরী ।।
(১১)
কোন সে আলোয় লিখবে কবি নতুন ভোরের গান
সান্ধ্য আলোয় আলোকিত তোমার-আমার গীতিবিতান ।
স্বার্থান্বেষী মনের ভিতর কলুষিত গঙ্গা বয়
জোয়ার ভাটার টানে শুধু ভোগবাদ কথা কয় ।।
(১২)
নির্মম শাসনে নিঠুর শোষনে জনগণ যেন কঙ্কালসার
প্রতিবাদীর দেহে আগুন জ্বেলে প্রতিবাদের করেছ হত্যা বারেবার ।
নিজের বিজয়ধ্বজা বাতাসে ওড়াতে ধর্ম নিয়ে রাজনৈতিক হানাহানি
ভায়ের রক্তে রঞ্জিত হাতে তোমার মসনদ চিরখুনি ।।
(১৩)
” ডিমে আর তা দেব না ” বলেছে দুষ্টুপাখি
” মানুষগুলো সব সন্তানখেকো খাচ্ছে সকল পশুপাখি । ”
আহারে নাহয় ব্যবহারে করছে প্রকৃতির ভারসাম্য ক্ষয়
ওদের নিত্য নতুন আবিষ্কারে মোদের লাগে ভয় ।।