চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জন লেখিকার নাম- বাবিয়া নন্দী
উপন্যাসের নাম- চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জন
লেখিকার নাম- বাবিয়া নন্দী
ধারাবাহিক
ষষ্ঠ পর্ব(৬)
সত্য মুলত ওই মহল্যায় গিয়েছিলো তাঁর পিতার আদেশ পালন করতে অর্থাৎ ঘরোয়া সাবেকী দূর্গাপূজার রীতিনীতি অনুসারে মাটি নিয়ে আসতে পতিতালয়ের।কিন্তু আমরা সব সময় যা ভাবি তা হয়ে ওঠে না।সব কিছু আমাদের হাতে থাকে না।নিয়তির বন্ধনে কোথায় ও না কোথাও গিয়ে আমরা আটকে পড়ি।সত্যর সাথে ও সেরকমই হচ্ছিল। আগের দিন আমরা দেখেছি সত্য সেই পল্লীর একটি কোঠা ঘরের ঠিক পাশের ঝুল বারান্দা ও কলঘরের মধ্যবর্তী অংশে ঢুকে স্থবির হয়ে গিয়েছিলো আকস্মিক কিছু জঘন্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে।যে অচেনা পুরুষ টি অচেনা মেয়েটির ঘরে খরিদ্দার হিসেবে ঢুকেছিলো ও মেয়েটির অমতেই পুরুষটি নিজের লালসা চরিতার্থ করেছিলো সেই পুরুষটি হঠাৎ করে তার নিজের কার্যসিদ্ধি করে ক্রুর হাসি ও জঘন্য গালিগালাজ করে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেলো।অন্ধকারে ঠিক ঠাহর করতে না পারলেও সত্যর বুঝতে বাকি রইলো না যে পুরুষ মানুষটির বয়স আন্দাজ ওই তিপান্ন চুয়ান্ন হবে।তখন সাথে সাথে মেয়েটির চিৎকার করা গলা ফাটানো কান্নার সুর সারা কোঠায় ছড়িয়ে পড়লো এবং যা সত্যের পৌরুষ কে ক্ষণিকের ন্যায় আঘাত হানলো।সত্য ভাবলো তাঁরই প্রজাতির মানুষ পুরুষ মানুষ কি করে এতো টা নিষ্ঠুর হোতে পারে?সত্যর হৃদয়কে বিদীর্ণ করলো সেই অশ্রুসিক্ত অসহায় কান্নার সুর। তারপর সত্য দেখতে পায় অন্ধকারের মধ্যে দিয়েই ঝুমঝুম শব্দ করে কোনো নারী, বয়স বড় জোর সতেরো হবে।যেটুকু চাঁদের আলো তাঁর মুখের উপর পড়েছিলো তাতে সেই তনয়া যে অপরূপ লাবণ্যময়ী তা বুঝতে বাকি রইলো না।সত্য তাঁর কৈশোরে পদার্পণ করে মনের মধ্যে যে নারীর মূর্তি একটু একটু করে গড়ে তুলেছিলো,সেই ঘন কালো মায়াভরা দুটি আঁখিপল্লব,সেই পবিত্র ও সারল্যে পরিপূর্ণ মুখচ্ছবি যেন দেবী প্রতিমার মতোন।এমন স্নিগ্ধতা ছড়ানো লাবণ্যময়ী নারী তো তাঁর স্বপ্নের মায়াজালেই জড়িয়ে ছিলো।তবে কি শেষ পর্যন্ত সত্য তাঁর কল্পনায় গড়া সেই নারীরই আজ হদিস পেল?তবে এরকম এমন একটা জায়গায় যেখানে পুরুষরা নারীকে শুধু পণ্য মনে করে?এসব সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে সত্য দেখলো মেয়েটির অবস্থা সত্যিই ভীষণ করুণ।সে কল ঘরে গিয়েছিলো কোনো রকমে হয়তো শরীরের অপবিত্রতার শুদ্ধিকরণ ঘটাতে।কিন্তু তাঁর আত্মা?তাঁর কি সত্যিই আত্মা বলে কিছু আছে।চোখ দুটো সুন্দর হলেও সত্যর কাছে তা বড় নিষ্প্রাণ বলে মনে হল।মৃতলাশ জ্যান্ত অবস্থায় বিচরণ করলে যেমন দ্যাখায় মেয়েটি কেও ঠিক তেমনই দ্যাখাচ্ছিলো।কাজেই সত্যর আসল কাজ আর হল না।
সত্য ভোরের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।ভালো ভাবে উষার আলো ফুটে এলেও সে বেশ সমস্যাতেই পড়বে।তাই লুকিয়ে আরও কিছু সময় সে ওখানেই অতিবাহিত করলো।এর কিছু পরে সে তার নিজের আস্তানায় ফিরে আসলো।সে যতোবারই ঘুমাবার চেষ্টা করলো ততোবারই ব্যর্থ হল।নিদ্রাও যেন তাঁকে আজ আলিঙ্গণ করতে চাইছে না।সে কোনো মতেই দু চোখের পাতা এক করে উঠতে পারলো না।গতকাল রাতের ওই ঘটনা যেন তাঁর জীবনের সাথে ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িয়ে গেছে।বিশেষত ওই পবিত্র দেবী প্রতিমা তুল্য মুখচ্ছবি বারবার তাঁকে যেন হাতছানি দিয়ে অর্থাৎ ইশারা তে ডাকছে।সত্য মনে মনে ভাবলো এতো সহজ সরল নীরীহ প্রকৃতির মেয়েটি কি করে ওই ডেরায় গিয়ে পড়লো?কি এর রহস্য?আরেকবার ভাবলো কি হবে এতো কিছুর খোঁজ করে।কে হয় ওই মেয়েটা ওর?কেউই তো নয়।সে তো শুধুমাত্র এসেছে জমিদার বাড়ির কনিষ্ঠা পুত্রের কার্যসমাধা করতে।তাহলে এতো কিছু ভাবছে কেন?পরক্ষণেই ভাবলো আ হা!ওই বেচারী মেয়েটার না জানি কতো কষ্ট। আর সত্যের কেন মনে হল ওই চোখ দুটো যেন তাঁর বড় আপন।বড় মায়া সেই দুটো কাজল কালো চোখে।তাঁর মনে তখন এক দোলাচলের সৃষ্টি হল।অবশেষে সত্য স্থির করলো,না,তাঁকে জানতেই হবে ওই রমনী কি করে ওই স্তানে গিয়ে পৌঁছলো।তাঁর জন্য যতোদূর সত্য কে যেতে হয় সে ততো দূরই যাবে।তবু সে জানবে কি এর রহস্য।মেয়েটি কে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কারা রোজ এইভাবে মেয়েটি কে কষ্ট দিচ্ছে।এটা তো সূর্যের আলোর মতোনই স্বচ্ছ,সুন্দর যে মেয়েটি এই ব্যবসায় কোনো মত নেই।তাঁর মতের বাইরেই জোর করে তাঁর উপর অত্যাচার করা হচ্ছে। আর দিনের পর দিন বেচারী এইভাবে সহ্য করতে করতে হয়তো কোনো এক দিন আত্মহত্যা,না আর ভাবতে পারছে না সত্য।এখন শুধু সন্ধ্যে নামার ও প্রহর গুণছে মাত্র।
ক্রমশ (চলবে)।