উপন্যাসের নাম- চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জ্জন। লেখিকার নাম- বাবিয়া নন্দী

উপন্যাসের নাম- চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জ্জন।
লেখিকার নাম- বাবিয়া নন্দী

পর্ব- ৫(পঞ্চম পর্ব)
ধারাবাহিক

সত্যব্রত চৌধুরী সন্ধ্যা উত্তীর্ণ হওয়ার পর পরই যখন অন্ধকার গাড় হয়েছে,যে যার ঘরে খরিদ্দার নিয়ে ব্যস্ত বারাঙ্গণারা,ঠিক এ মতো সময়ে চাদর মুড়ি দিয়ে প্রবেশ করলো ওই এলাকার কোঠারই একটি বাঁম পাশের ঝুল বারান্দার মতোন একটি ঘরে।সে এমন জায়গায় তো আগে কখনও আসেনি।পাশেই ছিল কলঘর।সত্য নিজেকে লোকাতে ব্যস্ত ছিলো।তাঁর ঠিক ডান পাশের ঘরটি থেকে ভেসে আসছিলো পুরুষকন্ঠের উন্মাদনার শব্দ।অশ্রাব্য কিছু অসংলগ্ন গালিগালাজ,কটুক্তি।কোনো পুরুষ তথাকথিত ভদ্র সমাজের কোনো পুরুষ মানুষ যে এমন অপভাষা প্রয়োগ করতে পারে তাও বা কোনো নারীর উদ্দেশ্যে তা সত্যের অবগত ছিলো না।সে এইসব জায়গার কথা খবরের কাগজে পড়েছে।চলচ্চিত্রে দেখেছে।অনেক বন্ধু মহলে শুনেওছে।কিন্তু কখনওই বাস্তবের সম্মুখীন হোতে হয় নি তাকে এই নিষিদ্ধ পল্লীতে।সে হঠাৎ করে শুনতে পেলো নারীকন্ঠের আর্তনাদ।একটি নারী সেই পুরুষটিকে অনেক কাকুতি মিনতি করছে তাকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য।কিন্তু পুরুষ মানুষটির পাশবিক অদম্য জেদ ও শারীরিক ক্ষুধা তখন হুঙ্কার ছড়াচ্ছে সারা ঘরময়।সত্য যে কাজে এসেছিলো তা না করেই বাইরের অন্ধকারে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।তারপর মিনিট পনেরো যেন সব চুপচাপ।নিস্তব্ধ।আর নেই কোনো নারীর চিৎকার,আর নেই কোনো আর্তনাদ।শুধু যেন একটা অস্ফুটে গোঙ্গানির শব্দ।তারপর সেই পশুরূপী পুরুষ টি একটি জঘন্য ক্রুর হাসি হেসে বার কয়েক থু থু ফেলে আরও কিছু অশ্রাব্য গালিগালাজ দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো।

পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে বলা হয়,যখন কোনো পুরুষ তাঁর শারীরিক লালসা চরিতার্থ করার জন্য কোনো গণিকা/পতিতা/বারাঙ্গণার সাথে সঙ্গমে লিপ্ত হন,তখন সেই পুরুষ মানুষটি তাঁর জীবনের সমস্ত সন্চ্ঞিত পূর্ন্য সেই পতিতালয়ের বারাঙ্গনার কাছেই ফেলে আসেন,আর তার বদলে পাপ সঞ্চয় করেন।তাই হয়তো,পতিতালয়ের মাটি অপবিত্র হওয়ার পরিবর্তে পবিত্রতায় পরিপূর্ণ হয়।আমরা সকলেই জানি মহাদেব সমুদ্র মন্থনের সময় অমৃতের ভান্ডার সর্ব দেবতাগণের হাতে তুলে দিয়ে শুধুমাত্র বিষটুকু পান করে নীলকন্ঠ হয়েছিলেন।ঠিক তেমনই তো হয় পতিতা রা।আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজই তো তাদের পতিতা বানায়।সমাজের যতো পাঁক তাঁরা তাঁদের শরীরে ধারণ করে পুরুষদের শুধু মধুুটুকু তুলে ধরেন।তাঁর প্রাপ্য মুল্য সমাজ কতোটা দেয় তা হয়তো আমাদের বিষদ ভাবে জানা নেই।কিন্তু ঈশ্বরের নিকট তাঁর মুল্য যে চিরধার্য্য।ঈশ্বরের বিচারে কোনো পৃথকীকরণ নেই।নেই কোনো ভেদাভেদ।নেই জাতীভেদ প্রথা।নেই বর্নাশ্রম।কারণ আমরা সকলেই তাঁর সৃষ্টির সন্তান।তাই তো পতিতালয়ের মাটি ছাড়া দূর্গা পুজো হোতে পারে না।একদিকে দেবী দূর্গার পবিত্র পূজো।অন্যদিকে পতিতাপল্লীর মাটি।তারমানে গঙ্গা জলের উপর দিয়ে যতো ময়লা আবর্জনাই বয়ে যাক না কেন?গঙ্গার পবিত্রতা তাতে কি ম্লান হয়?সেরকমই তো নারী।তাদের ভোগ্যপণ্য হিসেবে মনে করা হয়।তাঁদের শরীর ব্যবহার করা হয়।কিন্তু।তারাও তো মানুষ।আর তাঁদের বুকের ভেতরে আাসন পাতা আছে এক পবিত্র আত্মার।শরীর অপবিত্র হলেও আত্মা যে মন্দিরসম।তা কখনই অপবিত্র হয় না।নারীদের হয়তো পেটের দায়ে,বা সমাজের চাপে অনেক কাজ করতে হয়।আমাদের মতোন গৃহস্থ সমাজের পুরুষ বা মেয়ে মানুষের কাছে তাঁরা সমাজের জঞ্জাল হলেও দেবী মহামায়ার কাছে তাঁরা তাঁর সন্তান।সেখানে কোনো হিসেবের গরমিল চলে না।যাক সেসব কথা।

ক্রমশ(চলবে)।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *