বনসাই —– সফিক আহমেদ
বনসাই
সফিক আহমেদ
আমি আমার ইচ্ছাগুলোকে মরতে দিই নি,
কেটেছেঁটে বনসাই করে রেখে দিয়েছি
আমার এই গতানুগতিক দিনযাপনের
দু কামরার আবাসনে মানানসই করে।
প্রেম ভালোবাসার কবিতা গুলো আজও
মলাট দেওয়া খাতায় ভরে রেখেছি,
প্রেম প্রত্যাখ্যানের লাল গোলাপটাও
খাতার খাঁজে শুয়ে আছে বাদামি হয়ে ।
জীবনের ক্যানভাসে
কিশোর প্রেমের পেলব স্পর্শের
ছবি গুলো পায়নি কোনো অবয়ব,
পরিণত আবেগের দৃঢ় বেষ্টনীতে ও
হয়তো প্রেমগুলো পড়েনি ধরা
তবুও মাসের হিসাবের খাতার কোনো কোনায়
কাটাকুটি করে এখনো লিখি প্রেমের কবিতা
প্রেম করার ইচ্ছাটাকে আমি বাঁচিয়ে রেখেছি
কেটেছেঁটে আমার জীবনের মাপ মতো বনসাই করে
বাহারি পালঙ্কের বাজুবন্ধে হাত রেখে
হীরের নাকছাবির চোখ ধাধাঁনো ঝলক নিয়ে
ফিরে তাকানো রক্ত রাঙা মোহিনী চোখ দেখার ইচ্ছাটা,
বারবার পুরোনো নতুন দেবদাস দেখে মিটিয়ে নিয়েছি
আমি আমার ইচ্ছাগুলোকে মরতে দিইনি
কেটেছেঁটে মানানসই বনসাই করে রেখেছি
বজরায় বেনারস ঘাটে গঙ্গায় ভাসতে ভাসতে
হয় তো শোনা হয়নি গওহর জানের ঠুংরি
তবে চোখ বুঝে FM রেডিওতে গওহর জানের
গান শুনতে শুনতে চলে যাই গঙ্গার বুকে
চাঁদনী রাতের ভেসে যাওয়া বজরায়
আমি আমার ইচ্ছাগুলোকে মরতে দিইনি
কেটেছেঁটে মানানসই বনসাই করে রেখেছি
তুমুল বৃষ্টিতে খোলা মাঠে
দু হাত ছড়িয়ে দৌড়ানো না হলেও
অফিস ফেরতা ঠান্ডা লাগার ভয় কাটিয়ে
ছাতাটাকে সরিয়ে একটু ভিজে নিই
ইচ্ছাটাকে বাঁচিয়ে রাখা বড় কথা
না হয় কেটেছেঁটে বনসাই হয়েই রইলো
আবাসনের একচিলতে বারান্দায়
আমার সাধারণ জীবনের
অসাধারণ ইচ্ছাগুলো বুকে নিয়ে।
সফিক আহমেদ