আমি বড়ো হয়ে গেছি মা —– সোনালী চ্যাটার্জি
আমি বড়ো হয়ে গেছি মা
সোনালী চ্যাটার্জি
দূর থেকে আওয়াজটা ভেসে আসছে । তোতা ওঠ মা, অনেক বেলা হয়ে গেছে যে কিন্তু তোতা যার ভাল নাম জয়ী সেই দুষ্টু মেয়ে টা চোখ বুজে শক্ত করে পাসবালিশ টা জড়িয়ে শুয়ে আছে । না সে কিছুতেই উঠবে না,যতক্ষণ না বাবাই এসে কপালে চুমু খেয়ে তাকে বলে উঠে পরো আমার তোতাপাখি দেখ আমি তোমার জন্য কতোকিছু নিয়ে এসেছি ।
আচমকা ধাক্কা খেয়ে তোতার ঘুম টা ভেঙে যায় ।
কিরে দিদি এখন ও ঘুমোচছিস, জানিস আটটা বাজে । নিচে বাবাই আর মা চায়ের টেবিলে অপেক্ষা করছে ।বাবাই খুব রেগে গেছে ।
ধড়মড় করে উঠে বসে জয়ী । বলে তুই যা ভাই ।আমি এখনই চোখেমুখে জল দিয়ে যাচ্ছি ।
নীচের টেবিলে তখন যেন ঝড় বয়ে যাচ্ছে ।অভিরূপের কথার তোড়ে ভেসে যাচ্ছে রিমা যে কিনা
জয়ী র মা ।তুমি জান রিমা discipline এরব্যাপারটায় আমি কতোটা গুরুত্ব দিই ।অথচ জয়ী দিনেদিনে indiscipline হয়ে যাচ্ছে সেদিকে তোমার কোন নজরই নেই ।
। অসহায় ভাবে রিমা বলে না না ও হয়তো কোনো কারণে আজ ঘুমিয়ে পড়েছে নইলে ও তো ছটার মধ্যে ই ঘুম থেকে উঠে পড়ে ।
কথার মধ্যেই টেবিলে হাজির হয় জয়ী ।জয়ীকে দেখেই অভিরূপ বলে ওঠে একটু সভ্যভব্য হও জয়ী ।discipline হও তুমি বড়ো হচ্ছো এটা মনে রেখ ।
জয়ী আস্তে আস্তে মাথা নিচু করে বলে আর কোনদিনও এরকম হবেনা uncle ।
হ্যা মনে থাকলেই ভাল ।বলেই রীমার দিকে তাকায় অভিরূপ ।আমার ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছো তো? বিকেল চারটের ফ্লাইট ।এবার অবশ্য কাজ সেরে দুদিনের মধ্যেই ফিরে আসবো।
বাবাই আসবার সময় আমার জন্য প্লেন কিনে আনবে তো ?
একটু হেসে টুবলুর মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে অভিরূপ বলে , আমার টুবাইসোনা চেয়েছে আর আমি এটুকু কিনে আনবো না নিশ্চয়ই আনবো ।ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে যায় অভিরূপ ।
রীমাও মেয়েকে বলে এবার তুইও তৈরী হয়ে নে তোতা,স্কুলে যেতে হবে তো।
।হ্যা মা যাচ্ছি বলে যেতে গিয়ে ও দাঁডিয়ে পরে জয়ী ।
কিরে দাঁড়িয়ে পরলি যে?
তোমাকে একটা প্রণাম করবো মা ।
হঠাৎ প্রণাম?
না এমনিই ।মাকে প্রণাম করে দোতলায় উঠে যায় জয়ী
অঝোর ধারায় শাওয়ার থেকে জল পরছে মাথার ওপর , কিন্তু সেই জলের ধারার সংগে গালের ওপর দিয়ে একটা নোনতা ধারাও যে সমানে বয়ে যাচ্ছে কোনো বাঁধই মানছে না । আর তার সংগে সংগেই ফুটে উঠছে ছবির পর ছবি এক একটা দৃশ্য
পাঁচই জুলাই বিছানায় শুয়ে ঘুমোচ্ছে একটা ছয় সাত বছরের বাচ্ছা মেয়ে, তাকে আদর করে তার বাবা আর মা ঘুম থেকে তোলার চেষ্টা করছে ।বাবা বলছে আমার তোতাপাখি ওঠো দেখ তোমার জন্য আমি কতো খেলনা নিয়ে এসেছি। ঠাম্মা বলছে ওঠো তোতাসোনা দেখ আমি তোমার জন্য পায়েস করেছি তুমি খাবে না?
আবার দৃশ্যপট পরিবর্তন ।বাবা মার তুমুল ঝগড়া হচ্ছে কয়েকদিন ধরে তারপর একদিন মা তাকে নিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ব্যাগ গুছিয়ে । ঠাম্মা ও খুব কাঁদছে ।মাকে বোঝানোর চেষ্টা করছে। বাবা পাথরের মত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
বাড়ি থেকে বেরিয়ে তারা প্রথমে যায় মামাবাড়িতে ।সেখানে কিছুদিন থাকার পর মা uncle কে বিয়ে করে ।তারপর তারা এখানে চলে আসে ।তারও কিছুদিন পর ভাই হয় এই যাঃ অনেক দেরী হয়ে গেল ।তাড়াতাড়ি করে তৈরী হতে থাকে জয়ী ।
টেবিলে ভাত বাড়তে বাড়তে হঠাৎ ক্যালেন্ডারের দিকে চোখ পরতেই বিদ্যুত দংশন হয় রিমার ।এমা সে কি করে আজকের দিনটা ভুলে গেল ।আজ তো পাঁচই জুলাই তোতার জন্মদিন ।না না এটা একদম ঠিক হয়নি ।আসলে অভি যে তোতাকে খুব একটা মেনে নিতে পারেনি সেটা ওবোঝে । তাই মেয়ের ব্যাপারে রিমা একটু সঙ্কুচিত হয়েই থাকে ।
জয়ী এসে টেবিলে বসতেই রিমা তাই কুণ্ঠিত গলায় বলে তোতা ও বেলা পায়েস করে রাখবো মা আর দুপুরে বেরিয়ে একটা সুন্দর জামাও কিনে আনব । আর কি চাই বল মা?
জয়ী আস্তে আস্তে দু চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকায় স্পষ্ট গলায় বলে আমি বড়ো হয়ে গেছি মা ।আমার আর কিচ্ছু চাই না ।