উপন্যাসের নাম-চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জন। লেখিকার নাম-বাবিয়া নন্দী
পর্ব_২
উপন্যাসের নাম-চৌধুরী বাড়ির ঘট বিসর্জন।
লেখিকার নাম-বাবিয়া নন্দী
আগের পর্বে আমরা জেনেছি চৌধুরী পরিবারের হর্তাকর্তা বিধাতা শশীভূষন বাবুর কথা।তাঁর জ্ঞাতীবর্গ পরিবার পরিজন সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা হয়ে ওঠে নি।আজকের পর্ব তে সেটুকুই আলোচিত বিষয়াবলী।শশীভূষনের পিতা ছিলেন রমানাথ চৌধুরী। একজন বিজ্ঞ বৈদ্য অর্থাৎ তখনকার দিনের কবিরাজ মহাশয় বলা চলে।এক ডাকে তাঁর সুনাম ছিলো।সাথে ছিলেন তিনি জমিদার।তৎসত্ত্বেও তিনি ছিলেন একজন অতি জ্ঞানী ও নিরহঙ্কারপূর্ণ একজন মানুষ।তিনি শখে কবরেজ করতেন।গ্রামের অনেক গরীব দুঃখীকে বিনে পয়সায় চিকিৎসা করতেন।তিনি ছিলেন যথার্থই সৎচরিত্র ও দয়াবান ব্যক্তি।তাঁর এই মহৎ গুণ টুকু পেয়েছিলেন বংশানুক্রমে তাঁহার জ্যেষ্ঠ পুত্র শঙ্করনাথ চৌধুরী।শঙ্করনাথ বাবু ছিলেন একজন প্রবাসী বাঙ্গালী।বিগত দুই বৎসর অতিবাহিত হয়েছে,তিনি পরলোক গমন করেছেন।জমিদারীর প্রতি কোনোদিনই তাঁর কোনোই দূর্বলতা ছিলো না।তিনি বিশ্বাস করতেন,বাপ,ঠাকুরদার সম্পত্তি যতোই থাকুক না কেন। তবুও পুরুষ মানুষের উচিত নিজস্ব কিছু উপার্জন করা,ও তার সাথে খ্যাতি ও নামযশ কামানোর ভূত তাঁর মাথায় ভর করেছিলো।তাই তিনি বাড়ি ও সম্পত্তির সমস্ত দায়ভার তাঁর ছোটোভাই শশীভূষন কে দিয়ে বিদেশে ডাক্তারির পসরা আরও একটু গুছিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হন ও কারণবশত সেখানেই পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে শুরু করেন।এখন এই পরিবারে থাকার মতোন রয়েছেন,শশীভূষন ও তাঁরও দুই পুত্র এবং স্ত্রী যোগমায়া।শশিভূষণ বাবুর জ্যেষ্ঠ্য পুত্রের নাম রমেন্দ্রনাথ চৌধুরী ওরফে রমেন এবং কনিষ্ঠ টির নাম সত্যব্রত চৌধুরী ওরফে সতু বা সত্য।বেচারা কনিষ্ঠ টি আবার ভীষণই আধুনিকতার মোড়কে মোড়া।কিন্তু তার মন টি খাঁটি সোনা।পাছে তাঁর বন্ধু রা তাঁর এই সেকেলে নাম নিয়ে অট্টহাস্য করে,তাই সে নিজের নাম short এ বলে Sat।শশীভূষনের জ্যেষ্ঠ পুত্রটি পিতার অত্যন্ত বাধ্য,তাই তাঁর বিবাহ ও হয়েছে পিতার মতামতানুসারে অর্থাৎ সম্বন্ধ করে।তাঁর বধূটি অনেক টা মোমের পুতুলের মতোন।এ যুগের মেয়ে হয়েও কেমন যেন বেমানান ঠ্যাকে রমেন ও সত্যের নিকট।কাজেই বধূটির নাম টিও ভারী সেকেলে।স্বর্নলতা চৌধুরী। সে মুখ বুজে ঘরের সমস্ত দায়দায়িত্ব পালন করে চলে।তাই শ্বশুরমশাইয়ের নিকট অতিশয় প্রিয়।বধুর রূপে গুণে মুগ্ধ হয়ে শশীভূষন একেবারে যেন গদগদ।ফলস্বরূপ,রমেনও তাঁর যথেষ্ট যত্নআত্ত্বি করে।বৌ বলে স্বীকারও করে নিয়েছে হয়তো বা কিছুটা হলেও মনের সাথে আপোষ করেই।ছোট ভাই সত্য কিন্তু রমেনের একেবারে বিপরীত।ভীষণ চন্চ্ঞল,সাহসী প্রাণোবন্ত এক ছেলে।যে মানে না পুরোনো দিনের ক্রমবর্ধমান চলে আসা অযৌক্তিক প্রথা ও এক ঘেয়েমী অনাবশ্যক কুসংস্কারাচ্ছন্ন রীতিনীতি।সে বিশ্বাস করে,পুরুষদের মতোন নারীদেরও সমান অধিকার থাকা দরকার।সে নারী স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।আর সে চায়,জীবনে অন্তত দুটি জিনিষের সাথে কখনোই আপোষ করা উচিত নয়।এক হল-তাঁর পেশা ও দ্বিতীয়টি হল সঙ্গী নির্বাচন অর্থাৎ বিবাহ।
ক্রমশ (চলবে)।