“মন দে উড়ান ” তোপচাঁচি —- কোয়েলী ঘোষ
“মন দে উড়ান ” তোপচাঁচি
কোয়েলী ঘোষ
মন দে উড়ান , যেখানে প্রাণের টান
উচ্ছ্বসিত প্রেম , উস্রির কলতান ,
সুদূরের আহ্বান , মন দে উড়ান ।
তোপচাঁচি … ভাতিন্ডায় ..
মন হারানোর ঠিকানায় ,
পেয়েছি সন্ধান , মন দে উড়ান ।
মিলে গেছে প্রাণে প্রাণ
হই চই , নাচ , গান
আয় মন , দিই উড়ান ।
মন দে উড়ান …মন দে উড়ান ..
মন দে উড়ান ” এমনই এক গ্রুপ যেখানে একদল মহিলা বেড়ানোর নামেই উচ্ছ্বসিত । পাহাড় নদী ঝর্ণা , অরণ্য সব একসাথে দেখতে আমরা পাড়ি দিলাম ঝাড়খণ্ডের তোপচাঁচি , ভাতিন্ডা আর ঊশ্রী নদীর ঝর্ণায় ।
সুস্মিতার ব্যবস্থাপনায় দুদিন খুব আনন্দে কাটিয়ে এলাম । একুশ জন ভ্রমণ সঙ্গীদের সাথে নিয়ে ট্রাভেলার্স গাড়ি ছুটল । সেই ব্যারাকপুর থেকে যাত্রা শুরু হয়েছে । একে একে সবাইকে নিয়ে সবশেষে ডানকুনি থেকে আমাকে তুলে নিল যখন ঘড়িতে বাজে সাড়ে সাতটা ।
পথের ধারে ধারে সবুজ গাছপালা আর কাশ ফুলের সমারোহ । গাড়ি এসে দাঁড়াল শক্তিগড়ে ।
গরম কচুরী-ছোলার ডাল, আর ল্যাংচা খেয়ে আবার গাড়িতে উঠলাম ।
গাড়ি চলেছে বর্ধমান , পানাগড় , আসানসোল ছাড়িয়ে …ভেতরে গাড়িতে তখন একদল সোৎসাহে নাচ গান শুরু করে দিল ।
যেতে যেতে এক অপরূপ দৃশ্য দেখে আর চোখ ফেরে না ।
বরাকর নদীর চরে শুভ্র কাশ ফুলের মেলা যেন সমুদ্রের ঢেউ । গাড়ি থেকে নেমে ছবি তোলার প্রবল ইচ্ছা কিন্তু পৌঁছতে দেরি হবে সেজন্য গাড়িতে বসেই কাঁচ সরিয়ে ছবি তোলা হল । একটু পরেই গাড়ি ঢুকলো ঝাড়খণ্ডের সীমানায় । এবার ধানবাদ শহরে গাড়ি ঢুকলো । গুগল ম্যাপের সাহায্যে পৌঁছে গেলাম হোটেল Divira inn
বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ঘর ।
ততক্ষনে রাজীব আর সহকর্মীরা দুজন আগে থেকে রান্না সেরে ফেলেছে ।
দুপুরের খাওয়া সেরে আমরা সবাই রওনা দিলাম তোপচাঁচি লেকের উদ্দেশ্যে ।
পথে যেতে যেতে বৃষ্টি নামলো ।
‘তোপচাঁচি’ লেক থেকে সূর্যাস্ত মোহময় এক দৃশ্য তাই সুস্মিতা বারবার বলতে লাগলো — বৃষ্টির জন্য আর সূর্যাস্ত দেখা হবে না । চওড়া রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলেছে , দুদিকে ঘন বন বর্ষার জলে সজীব সবুজ ।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে লেক । মেঘলা আকাশ , পরেশনাথ পাহাড়ের ছায়া এসে পড়েছে আয়নার মত স্বচ্ছ জলে । এ এক অন্য রূপ । একটা নৌকো বাঁধা আছে ঘাটে । প্রায় দু কিলোমিটার জুড়ে পাহাড়ের গায়ে এই লেক ।
এখানে মহানায়ক উত্তমকুমারের বাড়ি । এখানেই শুটিং হয়েছে অনেক বাংলা সিনেমার ।
উত্তম-মাধবীর সেই বিখ্যাত রোমান্টিক গান, “কে প্রথম কাছে এসেছি”.. হারানো সুর কিংবা এই সুন্দর স্বর্ণালী সন্ধ্যায় একি বন্ধনে জড়ালে গো বন্ধু ” ব্যস , গান শুরু হয়ে গেল আর আমাদের ফটো তোলা ।
সামনের সেতু ধরে এগিয়ে গিয়ে ব্যারেজের জল পড়ার ঝর ঝর শব্দ কানে এলো । আকাশ তখন পরিষ্কার । ঘন সবুজ জঙ্গলে ফুটে আছে ফুল ।
ব্যারেজের জল সবুজ জঙ্গলে বয়ে গেছে ।
জঙ্গল থেকে ডাল পালা পাতার বোঝা নিয়ে বাড়ি ফিরছে আদিবাসী রমণীরা । পরনে শুধু একটা খাটো শাড়ি । এই জ্বালানী দিয়ে ঘরে ফিরে ওরা মাটির উনুনে রান্না বসাবে ।
আশেপাশে আর কোন লোকালয় নেই । একটি মাত্র চায়ের দোকান আর টিলার ওপর
সঙ্কটমোচনের মন্দির। নিচে থেকেই প্রণাম জানালাম । তারপর চায়ের দোকানে এসে বসলাম । এক আদিবাসী মহিলা চা তৈরি করেছিলেন আর অপূর্ব লেমন গ্রাস দিয়ে চা তৈরি করে দিলেন । লেমন গ্রাস সেখানেই পাওয়া যায় । তাই ছিঁড়ে ছিঁড়ে চায়ে দেওয়া হয় । মাটির উনুন , সামনে কিছু বিস্কুটের শিশি ।
বয়স্ক মানুষটি সন্ধ্যা দীপ জ্বlলতে মন্দিরে উঠলেন ।সামনের গ্রামে ওদের বাড়ি । একদল ছাগল ছড়িয়ে তখন চলেছে স্থানীয় মানুষ।
এখানে করোনা নেই। প্রকৃতির উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেওয়া যায়।
চলবে