কিছু কথায় —– কবিতা দে সরকার
কিছু কথায়
কবিতা দে সরকার
জীবন-সন্ধ্যার নিষ্প্রদীপ যাপন-পর্ব মায়াময় সংসারের এক নির্মম চিত্র!
গোটা কতক দায়সারা দাক্ষিণ্য
সেইসঙ্গে গাদা-খানেক উপেক্ষা ছাড়া প্রাপ্য বলতে আর কিছুই থাকে না
অস্বীকারে আবদ্ধ অস্তিত্ব!
ফলে প্রয়োজন এবং পছন্দ জল-হাওয়ার অভাবে নিষ্প্রভ
ইচ্ছেরা মৃতকল্প।
সময়ের অমোঘ নিয়মে জীবন থেকে বেমালুম হারিয়ে যায়
‘আমাদের’ শব্দটা—
ঘেরাটোপের মধ্যে গুটিসুটি জীবন ‘আমি’-তে সীমাবদ্ধ
নাগালে এক চিলতে ‘আমার’—
বারো-বাই-চোদ্দ নির্জ্জন একটা কামরা
খাট-আলমারি আর খান-দুই রংচটা ট্রাঙ্ক!
সংকীর্ণ বৃত্তের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকায় ছোটাছুটি করে
প্রাণবন্ত প্রাত্যহিকতা
সেখানে সময়ের বড়ো অনটন
নিশ্চল জীবনের তত্ত্বতালাশ করার অবকাশ কম!
অন্তিম অধ্যায় বিছানায়———–
বিকল কলেবর তার ভাঙাচোরা মন নিয়ে
অতীত-দরিয়ার ঢেউ গুনে দিন কাটায়
কালেভদ্রে বর্তমান উঁকি দিয়ে যায় দূরত্ব বজায় রেখে।
শয্যাগত মানেই অশুচি,স্পর্শে দোষ, স্নান ছাড়া গতি নেই
শুধু চাবির গোছা স্পর্শদোষ মুক্ত বলে সরাসরি স্বায়ত্তীকরণ করা যায়!
এখন-তখন অবস্থার মধ্যে কখনো-সখনো দিনে ডাকাতিও হয়—-
চোখের সামনে লুঠ হয়ে যায় শাড়ির ভাঁজে রাখা পরম যত্নের লাল বটুয়া
চরম নির্ভরতার নীল ঝাঁপি, চূড়ান্ত বিশ্বাসের সবুজ বগলি!
বুকচাপা কষ্ট বিগলিত হয়ে দু’চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে বালিশে।
এতসবের পরও সান্ধ্য-কাহিনির শেষের শেষটুকু বেশ জমজমাট
তখন রজনীগন্ধার উগ্র গন্ধ বাতাসের ঘনত্ব বাড়িয়ে দেয়
নিয়মকে হাতিয়ার করে হাজার সংস্কার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে
পরলোকে সুখ-সাগরে ডুব-সাঁতারের নিমিত্তে
ইহলোকে বিশাল কর্মকাণ্ডের আয়োজন করা হয়।