ঢাকের কাঠি তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী
ঢাকের কাঠি
তুলি মুখার্জি চক্রবর্তী
আজ মহালয়া। কাল পেরোলেই দেবীপক্ষের সূচনা। নেতাই ঢাকি প্রতি বছর অনেক আগেই বায়না পায় শহরের একটা বড় ক্লাবের। গতবছর সব ওলোটপালট করে দিয়েছিল একটা ভয়ানক ছোঁয়াচে মরণ অসুখ। ডাক পায় নি সে। শহর থেকে ফেরার সময় পাওয়া টাকা দিয়ে ছেলে মেয়ে বাবা মা এবং বৌ এর জন্য সাধ্যমত জামাকাপড় কিনে আনে প্রতিবার। সবার পুজোর আনন্দ শুরু হয় নতুন জামায়। ঢাকি বাড়ি নতুন কাপড় পরে আনন্দ করে পুজোর শেষে। এছাড়া পুরোনো অনেক শাড়ি জামা কাপড় যা পায় ক্লাব সদস্যদের বাড়ি থেকে তা দিয়ে সারাবছর চলে যায় টেনে টুনে। পুজো কালিপুজো মিটে গেলেই ঢাকির কাজ নেই। আবার সেই জগদ্ধাত্রী পুজোয় বায়না হয়। বাকি সময় ধান জমিতে ভাগে চাষ করে দিন কাটে নেতাই ঢাকির। স্বচ্ছলতা না থাকলেও সুখ ছিল, খুশি ছিল, আর ছিল পুকুর খালে বিলে মাছ ধরা। বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা, পরিবার নিয়ে কাছাকাছি ঘুরতে যাওয়া।
কিন্তু হঠাৎ করেই যেন এক অসুর এক নিমেষে সব আনন্দ মুছে দিয়ে সবাই কে করল ঘরবন্দী। ঘরে আটকা রোজ খেটে খাওয়া মানুষের কাজ নেই, পেটে ভাত নেই। বাচ্চাদের স্কুল কলেজ নেই….. নেই নেই রোগে মানুষ দিশেহারা। পুজো হলেও আয়োজন কম। ঢাকের বায়না নেই। ঢাক আর কাঠি একসাথে বোধন আরতি বিসর্জনের বোল তুললো না…..
দেড় বছর ধরে অনেক কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে সারা পৃথিবীর মানুষ কে। আবার সব স্বাভাবিক হচ্ছে সেই অদৃশ্য জাদুকাঠির ছোঁয়ায়। মা আসছেন। পুজো হবে। ঢাকের কাঠি বোল তুলবে। নেতাই ঢাকি আবার পেয়েছে বায়না পাঁচদিনের। একাদশীর দিন ফেরার সময় ব্যাগ ভরে খুশি নিয়ে ফিরবে সবার জন্য নতুন জামা কাপড়ের গন্ধে।
খুশির ঝাঁপি নিয়ে আয় মা সবার ঘরে দোরে
চাল গুঁড়োর আল্পনায় উঠোন সাজুক ভরে
বোধন থেকে বিসর্জন মায়ের ঘরে থাক
নীলকণ্ঠ উড়লে পরে কৈলাস দিক ডাক
ঢাক কাংসর আর ধুপ ধুনোতে অশুভ যাক সরে
আগের দিন ফিরিয়ে দে মা, নে মা আপন করে