ভরসা সেই একজন নার্স ©-সুব্রত মিত্র
ভরসা সেই একজন নার্স
©-সুব্রত মিত্র
___________
‘কি! একটা নার্সকে বিয়ে করবি তুই?
যে সারারাত বাড়ির বাইরে থাকে, একগাদা পুরুষের সঙ্গে ডিউটি করে, হাজার একটা রোগের সঙ্গে যার ওঠাবসা, বিয়ের পর কপালে সিঁদুর, হাতে শাঁখা-পলা পরেনা, নিজের স্বামী-বাচ্চা-বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়িকে ফেলে রেখে নিজের ইচ্ছে মতো যখন তখন ছুটে যায়, সবচেয়ে বড় কথা যাকে নিয়ে পাড়ার দশটা লোকে দশ রকম কথা বলে,,,,,,সেই রকম একটা মেয়েকে বিয়ে করবি তুই!’
শোভা দেবী কথাগুলো বলা শেষ করে ছেলে সন্দীপের দিকে কটমট করে তাকিয়ে থাকেন।
সন্দীপ ছয় বছরের পুরনো নার্স প্রেমিকা দীপাকে ‘বাড়ির কারো নার্স মেয়ে পছন্দ নয়’ একথা জানিয়ে মায়ের বাধ্য ছেলে হয়ে, মায়েরই পছন্দ করা একজন ঘরোয়া মেয়েকে বিয়ে করে ঘরে তোলে।
চার বছর পর হঠাৎ একদিন শোভা দেবী মাথা ঘুরে বাথরুমে পড়ে গেলেন। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার জানালেন হার্ট অ্যাটাক। শরীরের বাম দিকটা প্রায় অকেজো। বাড়ির কোন একজনকে সব সময় থাকার কথা জানালেন ডাক্তারবাবু।
বৌমা একবার এসেছিল দেখতে। ছোট বাচ্চা থাকায় সে আর আসতে পারে না। ছেলের অফিস বন্ধ করে থাকার উপায় নেই।
শেষে ভরসা নার্স…..
শোভা দেবী শুয়ে শুয়ে দেখেন একগাদা অচেনা পুরুষ মানুষের মধ্যে একজন শাখা-পলা-সিঁদুর হীন নার্স তার স্বামী, ছোট্ট সন্তান, বয়স্ক শ্বশুর-শাশুড়িকে ফেলে রেখে এসে কেমন একজন থেকে আরেকজন অসুস্থ মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে দায়িত্ব নিয়ে, আর তাদের অক্লান্ত সেবা করছে হাজার একটা রোগের ভয়কে উপেক্ষা করে।
রাত জেগে ঘড়ি ধরে কাউকে ইনজেকশন দিচ্ছে, কাউকে হঠাৎ ওঠা ব্যথার ওষুধ দিচ্ছে, জল দিচ্ছে, খাবার হাতে করে খাইয়ে দিচ্ছে, কাউকে মাথায় হাত বুলিয়ে সান্তনা পর্যন্ত দিচ্ছে একজন নার্স।
‘সবাই যদি তার সংসার, সন্তান,শ্বশুর-শাশুড়ির চিন্তা করে বাড়িতেই থাকে তাহলে অগণিত অসুস্থ মানুষকে কে বা কারা দেখবে! একজন নার্স অনেকের মা, অনেকের মেয়ে, অনেকের বৌমা’…….আজ বুঝতে পারছে শোভা দেবী।
কিন্তু তার বৌমা সেই যে একদিন দেখে গেলো, আর তো এলো না….!! একজন নার্স কে নিয়ে পাড়ার যে দশজনে দশ রকম কথা বলতো তারাও তো কেউ এলোনা…..!!
ভরসা সেই একজন নার্স।
আর পাঁচটা গল্পের মত কাকতালীয়ভাবে দীপা নামের সেই নার্স মেয়েটির সাথে শোভা দেবীর দেখা হয়নি এই হাসপাতলে। কিন্তু দীপাকে তিনি ভীষণ ভাবে খুঁজছেন। একবার ক্ষমা চাইতে চান দীপার কাছে নাহলে তিনি যে মরেও শান্তি পাবেন না।
ভাবতে ভাবতে দুচোখের কোন বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে এসে মিশছে বালিশে।
ছবি : সংগৃহীত
সযত্নে লেখাটি প্রকাশ করার জন্য পত্রিকার সমস্ত কর্মকর্তাদের আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
পড়তে পড়তে আর্দ্র হলো আমার নিজেরও চোখ। জীবনপ্রভ নির্মিতি।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা।