আজ মহালয়া @ গৌরী মৃণাল

আজ মহালয়া

@ গৌরী মৃণাল

এবাড়ীর চিলেকোঠা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয়,
তিন দিকে জানালা-
খুলে দিলে সমস্ত আকাশ যেন হৈ হৈ করে উঠতো,
চলে আসতো বুকের কাছে।
আমার দাদানের কথা মনে পড়ে যায় –
দরাজ কণ্ঠ, ঋজু শরীর আর প্রশস্ত হৃদয়…
দাদান ছিল ওই আকাশের আয়না ।

ভোরবেলা ঠামির কণ্ঠ ভেসে আসত ঠাকুরঘর থেকে-
ওম্ নাগেন্দ্রহারায় ত্রিলোচনায় ….
কোমল ঋষভ থেকে ধৈবত প্রবাহিত হয়ে যেত- ভস্মাঙ্গরাগায় মহেশ্বরায় …. একরাশ কোঁকড়া চুলের ঢালে,
আমি বলতাম- ঠামি, তোমার কপালে রোজ সূর্য ওঠে?

মায়ের ছিল নিজস্ব জগৎ –
গানঘর, তাঁর সুরের সংসার ।
আশাবরীতে আলাপ,বেহাগে বিস্তার, আর
গভীর রাতের আকাশে আকুল দরবারী
অশ্রান্ত ঝালায় ঝরে যেত মায়ের স্পর্শে।

বাবা ছিলেন গবেষণার বৃত্তে আত্মমগ্ন,
কিন্তু ফেরাতেন না কাউকে – মামা,পিসী,কাকা…
চালচিত্রে জমজমাট ছিল এই বাড়ি, এই সংসার,
….. একদিন ।

কতকাল পরে সেই পিতৃপক্ষ ফিরে এল আজ,
এক প্রবাসী শরীর আর উপবাসী হৃদয়ের কাছে।
পরিযায়ী ঠিকানায় উড়ে যাওয়া পাখি
মাস্তুল নেবে কি চিনে ম্লান গোধূলিতে?

সব কিছু থাকে, সব কিছু আছে,
তবু খুঁজে খুঁজে ফিরি সেই আলো,
দীপ থেকে দীপে বহমান –
শেষ কথা জেনেছে কি কেউ, কোথাও, কখনও?
অনন্ত ছায়াপথ জুড়ে
অঞ্জলি পেতে রাখে কোন্ নভোচারী
উত্তরপুরুষের কাছে?
অলক্ষ্যে কোথায় বাজে সেই মন্দ্রস্বর –
” আব্রহ্মভুবনাল্লোকাঃ দেবর্ষি পিতৃমানবাঃ
তৃপ্যন্তু পিতরঃ……তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ম্”।

তর্পণের মণ্ত্র … .. আজ মহালয়া ।

স্থিতজানু হয়ে যাই,
জীবনের স্রোত ভরে নিই গণ্ডূষে, আর একবার-
যে আছে যেখানে, যা থাকে যেখানে,
শান্ত হয়ে যাক্, তৃপ্ত হোক্ তৃষ্ণা যতো হৃদয়ের খাঁজে।
অমরাবতীর সীমা ছুঁয়ে
নিরাবিল হোক্ আজ প্রাণের আবাস –
আজ তৃপ্যন্তু ভুবনত্রয়ম্ ।।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *