“স্মৃতির আলোয় গুরুদেব” – মধুমিতা সরকার
“স্মৃতির আলোয় গুরুদেব”
– মধুমিতা সরকার
গুরুদেবের স্মৃতিচারণে আজ লিখছি কল্পতরু উৎসবকে ঘিরে কিছু অভিজ্ঞতার কথা…
২০১২ সালে আমি আমার গুরুদেব শ্রীমৎ স্বামী বাগীশানন্দজীর শ্রীচরণে আশ্রয় পাই।২০১৩ সালে আমার প্রথম কল্পতরু উৎসব দর্শন হয়।প্রতি বছরই ভোরে উঠে লাইন দিয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরকে দর্শনের পাশাপাশি যে আগ্ৰহ বা উন্মাদনায় উৎফুল্ল হতাম তা হলো—- গুরুদেবের হাতে একটা গোলাপ ফুল দিয়ে Happy New year বলা। গোলাপ ফুলটা উনি অনেকক্ষণ হাতে নিয়ে বসে থাকতেন…আর ওনার স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলতেন..’Happy New year.. ভালো আছিস?’ সেই মূহূর্তে মনে হোতো… আমি নিশ্চিন্ত, আমার সারাটা বছর ভালো যাবে…
তো এই কল্পতরু উৎসবকে ঘিরেই আমার এক পাগলামির ঘটনা আজ বলব।
যারা মঠ মিশনের সাথে জড়িত তারা হয়তো সকলেই জানেন যে ,এই কল্পতরু উৎসবের প্রস্তুতি হিসেবে এক বিশাল কর্মকাণ্ড চলে উৎসবের আগের একমাস ধরে।কত যে স্বেচ্ছাসেবক দাদারা অনলস পরিশ্রম করেন… তারমধ্যে বোঁদে ঠোঙাবন্দী করা অন্যতম। আমি গুরুদেবকে দর্শন করতে যেতাম আর এইসব দেখতাম।চুড়ান্ত ব্যস্ততা…কারোর কথা বলার সময় নেই ।এইসব দেখে খালি মনে হোতো…এত বিশাল কর্মকাণ্ডের কণামাত্র কাজেও কি আমি লাগতে পারি না? ভাবনাটা ক্রমশ বিন্দু থেকে সিন্ধুতে পরিনত হবার জোগাড় হোলো….
ব্যস্ ! যেমন ভাবা অমনি কাজ। বলে ফেললাম গুরুদেবের কাছে। বললাম,’এই উৎসবে আমি কিছু কাজ করতে চাই..আপনি ব্যবস্থা করে দিন’।শুনে উনি এতটাই অবাক হলেন, বললেন,’কি বললি?’ আমি আবার বললাম। প্রথমে উনি ‘না’ বললেন। তারপর বোঝাতে শুরু করলেন। আমি ত শুনবো না । বললাম, ‘কিছু না পারি…জুতো পাহারা ত দিতে পারি?’ এবার হেসে ফেললেন।আমাকে অবাক করে দিয়ে আচমকা ডাক দিলেন সেক্রেটারি মহারাজকে…’সুদীপ্ত,দ্যাখো তো…এই মেয়েটা কিছু কাজ করতে চায় ‘। আমি তো তখন প্রমাদ গুনছি। বেশ তো কথা হচ্ছিল আমাদের মধ্যে… এরমধ্যে আবার উনি কেন? আমার অসীম সাহস তখন বেলুনের মত চুপসে গিয়ে শরীরে কাঁপুনি ধরাচ্ছে। নিঃশ্বাস বন্ধ করে বকুনি খাবার অপেক্ষায় রইলাম। কিন্তু গুরুদেব সহায়। সেক্রেটারি মহারাজ অনেক কথা বললেন… অনেক অসুবিধার কথা, অনেক বাধ্যবাধকতার কথা । অগত্যা – মনোকষ্ট চেপে মেনে নিতে বাধ্য হলাম।
এরপর ত গুরুদেবের অসুস্থতার জন্য পাশে বসা বা চরণস্পর্শ করার সৌভাগ্য থেকে চিরদিনের জন্য বঞ্চিত হলাম। এ নিয়ে আর আবদার করার সুযোগ পাই নি।
শুধু এটুকুই সারাজীবনের জন্য মনে গেঁথে রইলো যে….আমার মত তুচ্ছ ভক্তের মনোবাসনা পূরন করার জন্যও উনি চেষ্টা করে ছিলেন। এ স্মৃতি কোনোদিনও ভোলার নয়….এ আমার জীবনে পরম পাওয়া….