প্রেম বড় আদিম —– মাধুরী বিশ্বাস
প্রেম বড় আদিম
মাধুরী বিশ্বাস
সেই আদিম বসন্ত,
সেই আদিম প্রেমের মহামারী,
প্রেম গ্রস্ত সেই আদিম পুরুষ আর
সেই …সেই আদিম নারী।
পুরুষ বলল-
তোমার মনের ঘরে তালা কেন ?
সমুদ্র মন্থনেও তার চাবি পেলাম না গো
সে এক বজ্র তালা যেন।
দাও না খুলে দুয়ার …
নারী বলল-
একদিন ঢুকেছিলাম গোপনে তোমার মনের ঘরে।
দেখতে চেয়েছিলাম কি ভাবে সাজিয়েছো আমায়,
দেওয়ালে-দেওয়ালে, ফুলদানির পাশে, বালিশের নিচে ।
গোপন ডায়েরির প্রথম থেকে শেষ পাতায়
আমারই ছবি, দেহগন্ধ আর স্পর্শ থাকার কথা ।
দেখলাম সুন্দর সাজানো ঘর,
কিন্তু সমস্যাটা হল….আমি কোথায় ?
দেওয়ালে যারা তারা খুব সুন্দরী
ওই তো… রঙিন ছবিটা, বেশ ছবি আঁকে মেয়েটা
কি সুন্দর গান করে যে আছে ফুলদানির পাশে।
দেখি.. এক মুঠো জোনাকি বালিশের তলে,
তাদের গায়ে তুমি-তুমি আলো জ্বলে।
এদের বুকেই মাথা রেখে রাত জাগো না রাতে ?
ইচ্ছে হল, জিজ্ঞেস করি তাদের কাছে,
তুমি বুকে মুখ গুঁজলে… কেমন লাগে ?
কিন্তু আমি কোথায় ?
কী যেন…নড়েচড়ে বসল খাটের নিচে ?
পরিত্যক্ত কিছু মানুষ ?
স্মৃতি পচা গন্ধ।
জিজ্ঞেস করলাম-“আমি, এখানে আছো কী?
“আছি…আছি !”
ঝড় উঠল… ঘূর্ণিঝড় …
সমুদ্র উথালপাথাল
গাছের হাহাকার
হৃদয় শেষনাগ হয়ে ফনা তুলল
তালা দিল নিজের ঘরে।
পুরুষ তোমার প্রবেশ নিষিদ্ধ হল নারীর মনে ।
হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হল,
নারী সেই বৃষ্টি চোখে বেঁধে ফিরে গেল ঘরে।
সেই বৃষ্টি আজও বেঁচে আছে নারীর অন্তরে।
পুরুষ ভিজল… বৃষ্টি মরা পর্যন্ত ভিজল
মনের দুয়ার খুলে বসে থাকল অপেক্ষায়,
যদি সে ফিরে আসে… যদি দুয়ার খোলে।
জোড়া-জোড়া চোখ গুলো আজও দ্যাখে …
নারী কত সুখে আছে আপন ঘরে,
আর পুরুষ…
প্রেমিকের অপেক্ষা হয়ে অপেক্ষা করে।
কিন্তু ….
তখনও কেউ ছবি আঁকছে রঙে রঙে,
নতুন ভোরের সুর ধরেছে কেউ গানে
জোনাকিরা রাত জাগে,
পুরুষের গোপন ঘরে ভীষণ গোপনে।