ঈশ্বর , অলৌকিক ও বহুমাত্রিক জগৎ —– রাজ কুন্ডু

ঈশ্বর , অলৌকিক ও বহুমাত্রিক জগৎ

রাজ কুন্ডু

মানুষ যেদিন থেকে
সমাজ , জাতি, গোষ্ঠী ইত্যাদি গঠন করেছে , সেদিন থেকেই কিছু নির্দিষ্ট ধারণার ভিত্তি থেকে একে অপরকে চিনতে শিখেছে । সভ্যতার জন্মলগ্ন থেকেই বিচ্ছিন্ন মানুষজনকে একত্রিত করার জন্য প্রয়োজন হয়েছে কোনো এককের প্রতি আনুগত্য। এই একক কোনো ব্যক্তি , কোনো গোষ্ঠী , কোনো জাতি অথবা কোনো প্রতীক বা বিশেষ চিন্তাধারা হতে পারে । এদের মধ্যে বৃহত্তর একক হয়ে দাঁড়ায় একটি ধারণা যা বিভিন্ন প্রতীকে রূপায়িত হয় , তা হল ঈশ্বর । ঈশ্বরকে সমগ্র বিশ্বের বৃহত্তম একক বা সমগ্র শক্তির একক রূপ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় ; এবং তা শুধু মাত্র বৃহত্তর জনমানসের আনুগত্য লাভের উদ্দেশ্যে । যেকোনো প্রাকৃতিক ঘটনা যা মানুষের আয়ত্বের বাইরে তা ঈশ্বরের কাজ বলেই মনে করা হতে থেকে । যে ঘটনার কার্যকারণ সম্পর্ক স্পষ্ট নয় বা যে ঘটনাকে কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা মানুষের পক্ষে সম্ভব না তাই ঈশ্বরের দ্বারা কৃত বলে মনে করা হতো এবং আজও হয়। ঈশ্বর শব্দের মূল “ঈশ্” এর অর্থ হল,দক্ষ, মালিক,শাসক। দ্বিতীয় অংশ ‘বর’ যার আভিধানিক অর্থ হল “সেরা, চমৎকার, সুন্দর, শাসক”। আমরা ঈশ্বর ও ভগবান সমার্থক মনে করে থাকি । ভগ” ও “বান” – এদুটি শব্দের সন্ধির ফলে মূলতঃ ভগবান শব্দের উদ্ভব হয়েছে। ‘ভগ’ শব্দের অর্থ ঐশ্বর্য্য এবং ‘বান’ শব্দের অর্থ অধিকারী। অর্থাৎ যিনি ভগ তথা ঐশ্বর্যের অধিকারী তাকে আক্ষরিকভাবে বলা হয় ভগবান । পরাশর মুনি ভগবান শব্দের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন- যার মধ্যে সমস্ত ঐশ্বর্য্য, সমস্ত বীর্য্য, সমস্ত যশ, সমস্ত শ্রী, সমস্ত জ্ঞান এবং সমস্ত বৈরাগ্য এই ছয়টি গুন পূর্ণমাত্রায় বর্তমান, তিনি হচ্ছেন ভগবান। মূলতঃ একারনে সনাতন ধর্মে বহু মুনি, মহামুনি, ঋষি, মহাঋষিদের নামের আগে ভগবান শব্দটির ব্যবহার হতে দেখা যায়।

মূলত শ্রেষ্ঠত্বের পরিচায়ক হিসাবে ঈশ্বর বা ঈশ শব্দের প্রয়োগ হয়ে থাকে। অর্থাৎ সাধারণ প্রাণীর অস্তিত্বের থেকে উন্নততর কোনো অস্তিত্ব বোঝাতে ঈশ্বরের তুলনা করা হয় ।

খুব প্রাসঙ্গিক ভাবে ঈশ্বরের ধারণার সাথে ধর্মের এক নিবিড় যোগ স্থাপন করা হয় । ধর্ম অর্থাৎ ধারণকারী ,যা জীবের অস্তিত্বের ধারক বৈশিষ্ট্য তার সাথে ঈশ্বরকে নিবিড় ভাবে যুক্ত করা হয় একটি বিশেষ ধারণার সাথে। এই ধারণাটি হল বিশ্বের সব বস্তু তা প্রাণ বা জড় যাই হোক না কেন তাই ঈশ্বরের সৃষ্টি। ঈশ্বরের ধারণা বিভিন্ন সভ্যতায় বিভিন্ন ভাবে ব্যক্ত হয়েছে তাই ধর্মও ভিন্নতর হয়েছে।

আমাদের এই আলোচনার উপজীব্য ধর্ম ও ঈশ্বর নয় তাই এই আলোচনা দীর্ঘায়িত করলামনা । আমাদের এই আলোচনার মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের অস্তিত্ব বা ধারণাকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে বিচার ও বিশ্লেষণ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে । তবে এই প্রসঙ্গে আরো অনেক বিষয় উত্থাপন হবে যা আমাদের স্পর্শ করে যেতে হবে ।
প্রায়শঃই ঈশ্বর , ধর্ম ও বিজ্ঞানের মধ্যে মূলগত ভাবনার বিরোধ ঘটে । এই বিরোধের মূল সূত্র হল ঈশ্বর ও ব্রহ্মাণ্ডের ধারণার পার্থক্য যা বৈজ্ঞানিক ধারণার সাথে পার্থক্য তৈরি করে দেয় ।
প্রাকৃতিক যা কিছু ঘটনা যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার অতীত বলে মনে হয় তাই ঐশ্বরিক বলে ধরা হয় তা আগেই আলোচিত হয়েছে । এবার মানুষের অভিজ্ঞতা লব্ধ জ্ঞান ও পর্যবেক্ষণ সময়ের সাথে সাথে বহু প্রাকৃতিক ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম হয়েছে। আশা করা জয় ভবিষ্যতে এই প্রসার অব্যাহত থাকবে। তাই বিজ্ঞান যত তার ব্যাখ্যার পরিসর বিস্তৃত করেছে ঈশ্বর ততই তাঁর আধিপত্য হারিয়েছেন । তাই বৈজ্ঞানিকদের ধারণায় ঈশ্বর শুধুমাত্র অজ্ঞ মনের এক অবলম্বন মাত্র , বিজ্ঞান যখন মনের অজ্ঞতা দূর করে ঈশ্বর তাঁর স্থান ত্যাগ করেন সেই মন থেকে । তবে আশ্চর্যের ব্যাপার এই যে একবিংশ শতাব্দীতে আজ বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব প্রসারের যুগেও ঈশ্বরের প্রভাব পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি। বরং ঈশ্বরকে বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে ব্যাখ্যা করার উদ্যোগ হয়েছে । বিজ্ঞানী শ্রেষ্ঠ স্যার আলবার্ট আইনস্টাইন ঈশ্বরে বিশ্বাসী ছিলেন , তবে সাধারণ ধারণা থেকে তাঁর ধারণা উচ্চতর ছিল এবং তা বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিকে উপেক্ষা করে একদমই নয় ।

ঈশ্বরের ধারণার সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে জৈবিক অস্তিত্বের থেকে বৃহত্তর অস্তিত্বের সন্ধান । প্রাণ সত্ত্বাকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায় । শরীর ও আত্মা । তাত্বিক বা দার্শনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে শরীর বা দেহ হল নশ্বর আত্মা হল অবিনশ্বর । ভৌত বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেহ হল mass বা ভর এবং আত্মা হল energy বা শক্তি । অর্থাৎ বস্তুর দুটি মূল আধার , একটি সাকার এবং একটি নিরাকার । দেহ বা mass হল সাকার রূপ এবং আত্মা বা energy হল নিরাকার রূপ । বিজ্ঞানী শ্রেষ্ঠর শ্রেষ্ঠতম আবিষ্কার E=m(c)2 সূত্রটি এই ধারণাকেই প্রতিষ্ঠা দেয় । যেখানে E হল নিরাকার যা কখনো ধ্বংস হয়না । M হল সাকার অংশ যার এক রূপ ধ্বংস হয়ে E তে পরিণত হয় ।
বিভিন্ন দার্শনিক মতবাদ বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় একটি সাধারণ তত্ত্ব হল আত্মা বিরাজ করে প্রাণশক্তিতে । কিন্তু এই প্রাণশক্তি জিনিসটি কি ? আত্মার অস্তিত্বকে বিজ্ঞানীরা নস্যাৎ করেছেন কিন্তু প্রাণশক্তি কে নস্যাৎ করার উপায় নেই । এই প্রাণশক্তিই জড়ের সাথে জীবের পার্থক্য গড়ে দেয় । কিন্তু এই প্রাণশক্তি জীবের মধ্যে কোথায় কিভাবে জন্ম নেয় এবং অবস্থান করে তার সঠিক ও যুক্তিগ্রাহ্য ব্যাখ্যা আজও বিজ্ঞানীরা করতে পারেননি । অনেকে প্রাণশক্তি কে vitality বলে ব্যাখ্যা করেছেন । Vitality আসলে কি বস্তু তা কিন্তু তাঁরা ব্যাখ্যা করতে অসমর্থ হন ; তাই অচিরেই এই মতবাদ খারিজ হয়ে যায় । পৃথিবীতে এখনো পর্যন্ত আবিষ্কৃত ৯২ টি মৌল পাওয়া গেছে যাদের পারমাণবিক গঠন একে ওপরের থেকে সম্পূর্ন ভিন্ন এবং এদের বিভাজনের ফলে কোনো ভিন্নতর মৌলের সন্ধান মেলেনি । তাই মৌল মানুষ কোনো পরীক্ষাগারে সৃষ্টি করতে পারেনা । বিভিন্ন মৌলের রাসায়নিক সংযুক্তিকরণের মাধ্যমে যৌগের অস্তিত্ব পাওয়া সম্ভব। তাহলে পৃথিবীতে এই মৌলগুলি তৈরি করল কে বা কারা ?

রসায়ন শাস্ত্র দুটি প্রধান অংশে বিভক্ত একটি জৈব ও আরেকটি অজৈব । জৈব অণু পৃথিবীতে প্রাপ্ত মৌলগুলির রাসায়নিক মিশ্রণে সৃষ্ট , অজৈব অণু ও তাই। কিন্তু জৈব অণু কখনো পরীক্ষাগারে কোনো জৈব অণু ব্যতিরেকে তৈরি সম্ভব না । তাই পৃথিবীতে জৈবিক সত্ত্বা কৃত্রিম ভাবে সৃষ্টি করা যায়না কোনো অজৈব উপাদান দিয়ে । অথচ রাসায়নিক ভাবে বিশ্লেষিত হলে জৈব অণু বা জৈব কোষ কিছু অজৈব উপাদানের সমষ্টি মাত্র। তাহলে শুধু মাত্র অজৈব রাসায়নিক উপাদান দিয়ে জৈব উপাদান পরীক্ষাগারে তৈরি সম্ভব হলনা কেন ? এর সন্তোষজনক সদুত্তর আজও কোনো বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি ।
আর ঠিক এখানেই প্রবল ভাবে উদীয়মান হয় ঈশ্বর ও তাঁর সৃষ্টির মাহাত্ম্য ।

বিজ্ঞানের একটি সীমাবদ্ধতা হল যেকোনো ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বস্তু, ঘটনা বা বিষয়কেই বিজ্ঞান স্বীকৃতি দেয়। ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের বাইরে বিজ্ঞান পা রেখেছে অনেক পরে । আমরা জানি যা কিছু ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য তার বেশিরভাগ ই ত্রিমাত্রিক । অর্থাৎ তিন মাত্রার আঙ্গিকে সীমাবদ্ধ ; দৈর্ঘ্য ,প্রস্থ ও উচ্চতা । দশর্ণেন্দ্রিয় আমাদের জ্ঞানের মূল উৎস । দর্শন ইন্দ্রিয় শুধুমাত্র ত্রিমাত্রিক বস্তুকেই গ্রাহ্যতার অন্তর্গত করে থাকে । কিন্তু এর উচ্চতর মাত্রায় অবস্থিত কোনো অস্তিত্বকে কিভাবে গ্রাহ্যতা প্রদান করা সম্ভব ? প্রয়াত বৈজ্ঞানিক ডক্টর স্টিফেন হকিংস স্ট্রিং তত্ত্ব অনুযায়ী ব্যাখ্যা করেছেন যে ব্রহ্মাণ্ডের অস্তিত্বের জন্য অন্তত ১১ টি মাত্রার অস্তিত্ব সম্ভব । এবং এর মধ্যে কৃষ্ণ গহ্বরের অস্তিত্ব ব্যাখ্যা করেছেন হকিংস । আবার ভিন্ন সূত্রের ১৬ টি এবং ২৬ টি মাত্রার অস্তিত্বও কল্পনা করা হয়েছে ।

একমাত্রিক বস্তু আমরা কল্পনা করে থাকি যার মাত্র একটি মাত্রা বা যা দুটি বিন্দুর সংযোগকারী অস্তিত্ব । এখানে বিন্দুকে একটি শুণ্যমত্রিক অস্তিত্ব হিসাবে কল্পনা করা যেতে পারে । একমাত্রিক অস্তিত্বের শুধু মাত্র দৈর্ঘ্য পাওয়া সম্ভব। অপরদিকে দ্বিমাত্রিক অস্তিত্বের মাত্র দুটি মাত্রা পাওয়া সম্ভব , দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ। তৃতীয় মাত্রিকে এর সাথে যুক্ত হয় উচ্চতা ।

চতুর্থ মাত্রা হল সময় । Space বা মহাশূন্যে স্থান ও সময় একসাথে অবস্থান করে বলে ধরে নেওয়া হয় । এই জন্য আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী স্যার আইনস্টাইন space কে space – time হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন ।

এই পর্যন্ত মাত্রা সম্বন্ধে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়।

কিন্তু চতুর্থ মাত্রার উচ্চতর মাত্রা জটিলতর ধারণার জন্ম দেয় । অত্যন্ত জটিল অঙ্কের মাধ্যমে এর প্রামাণ্য সূত্র দিয়ে গেছেন স্যার হকিংস ।
উচ্চতর মাত্রার সরলতম ব্যাখ্যা দিতে গেলে যা বলা সম্ভব সেরকম ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা করা যেতে পারে এখানে ।

পঞ্চম মাত্রা হল চতুর্থ মাত্রার উচ্চতর পর্যায়। কোন ত্রিমাত্রিক অস্তিত্ব যখন দুটি সময় বিন্দুর মধ্যবর্তী সময়স্থানে একমুখী বিচরণ করতে পারে সেই বিচরণ ক্ষেত্র চতুর্থ মাত্রায় অবস্থিত বলা যায় ।
পঞ্চম মাত্রায় সেই বিন্দুরুপী অস্তিত্ব যখন দ্বিমুখী বিচরণ করে সেই দ্বিমুখী বিচরণ ক্ষেত্র পঞ্চম মাত্রায় অবস্থান করে । অর্থাৎ সময় যদি ক্ষেত্র হয় তাহলে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতে এবং ভবিষ্যত থেকে বর্তমানে বিচরণ সম্ভব এই মাত্রায় । অর্থাৎ ভবিষ্যত যাত্রা করা সম্ভব এই মাত্রায় ।

ষষ্ঠ মাত্রায় কল্পনা করা হয় যে , সময়ের নিরিখে কোনো ত্রিমাত্রিক অস্তিত্ব শুধু সামনে ওর পিছনে নয় । ডানে ও বামে বিচরণ করতে পারে । অর্থাৎ একটি দ্বিমাত্রিক সময় ক্ষেত্র তৈরি হয় । একটি সমান্তরাল সময় ক্ষেত্র অবস্থান করে এই মাত্রায় যেখানে একটি parallel time zone এ অসংখ্য ত্রিমাত্রিক ও চতুর্মাত্রিক অস্তিত্ব বিচরণ করতে পারে ।

সপ্তম মাত্রায় কল্পনা করা হয় সময়ের নিরিখে এমন একটি ত্রিমাত্রিক সময় ক্ষেত্র যেখানে কোনো ত্রিমাত্রিক অস্তিত্ব সামনে ,পিছনে , ডানে ,বামে ,উপরে ও নিচেও বিচরণ করতে পারে ।

অষ্টম মাত্রায় এমন একটি অস্তিত্ব কল্পনা করা হয় যেখানে একটি ত্রিমাত্রিক সময় ক্ষেত্র অপর একটি ত্রিমাত্রিক সময় ক্ষেত্রের দিকে এক মুখী বিচরণ ক্ষেত্রে বিচরণ করতে পারে । অর্থাৎ একটি সপ্তম মাত্রিক অস্তিত্ব ওপর একটি সপ্তম মাত্রিক অস্তিত্বের সাথে সংযুক্ত হতে পারে অষ্টম মাত্রিক পরিসরে । এখান থেকে শুরু হয় ভিন্ন ব্রহ্মাণ্ডের ধারণা ।

নবম মাত্রায় কল্পনা করা হয় একটি সপ্তম মাত্রিক অস্তিত্ব পাশাপাশি একাধিক ব্রহ্মাণ্ড ক্ষেত্রের মধ্যে বিচরণ করতে সক্ষম । এখান থেকে শুরু হয় সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ডের ধারণা। এখানে নবম মাত্রায় একটি দ্বিমাত্রিক ব্রহ্মাণ্ড ক্ষেত্র সৃষ্টি হয় বলে ধরে নেওয়া হয়েছে।

দশম মাত্রায় কল্পনা করা হয়েছে একটি ত্রিমাত্রিক ব্রহ্মাণ্ড ক্ষেত্রের যেখানে একটি ব্রহ্মাণ্ড শুধু মাত্র সমান্তরাল ব্রহ্মাণ্ডে নয়, এমনকি উচ্চ ও নিম্ন ব্রহ্মাণ্ডে বিচরণ করতে পারে ।

একাদশ মাত্রায় কল্পনা করা হয় এমন এক অনন্ত বিশ্ব যেখানে অসংখ্য ব্রহ্মাণ্ড ক্ষেত্র এক অনন্ত ব্রহ্মাণ্ড ক্ষেত্রে বিচরণ করতে পারে ।

এখনো পর্যন্ত চতুর্থ মাত্রার অস্তিত্ব প্রমাণিত হয়েছে এর উচ্চতর মাত্রার অস্তিত্ব গাণিতিক ভাবে প্রমানিত হলেও ভৌতিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি ।

এই ভিন্ন মাত্রিক অবস্থান গুলির পর্যবেক্ষণে একটি সাধারণ তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায় যে নিম্নতর মাত্রার অস্তিত্ব উচ্চতর মাত্রায় অবস্থান করতে পারে কিন্তু উচ্চতর মাত্রার অস্তিত্ব কখনোই নিম্নতর মাত্রায় অবস্থান করতে পারেনা । তাই শুণ্যমাত্রিক অস্তিত্ব যেকোনো উচ্চতর মাত্রায় অবস্থান করতে পারে।
শুন্যমাত্রিক অস্তিত্ব অবিভাজ্য । ঠিক এই সূত্রেই চলে আসে স্ট্রিং এর সম্ভাবনা। যেখানে কল্পনা করা হচ্ছে যে অসংখ্য ক্ষুদ্রতম অস্তিত্ব যা energy বা শক্তি হিসাবে বিচরণ করছে এবং প্রতিটি অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে নির্ভুল , অব্যর্থ গাণিতিক পদ্ধতিতে । আর ঠিক এখানেই উঠে আসে নিরাকার ঈশ্বরের অস্তিত্বের সম্ভাবনা। এই ঈশ্বরকে হয়ত আমরা কল্পনা করি যা আদতে এক বৃহত্তম শক্তির সমষ্টি যা সবার অলক্ষ্যে সব অস্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

ভৌতিক বা অলৌকিক জগৎ নিয়ে চর্চার প্রথম ধাপ হচ্ছে আত্মার মুক্তি প্রাপ্তি । পূর্বে আমরা আলোচনা করেছি যে আত্মা হল এমন এক নিরাকার শক্তি (energy) বা শূন্য মাত্রিক অস্তিত্ব যা মানুষের দৃষ্টিগোচর নয় । যেহেতু আত্মা শূন্যমাত্রিক অস্তিত্ব তাই যেকোনো বৃহত্তর বা উচ্চতর মাত্রায় অবস্থান করতে সক্ষম । এমনকি একাদশ মাত্রায় অবস্থান করতেও সক্ষম। আমরা ঈশ্বরকে একাদশ মাত্রায় কল্পনা করতে পারি । তাই হয়ত আত্মার মুক্তিকে আমরা ঈশ্বর প্রাপ্তি বলে থাকি । তাই বলা যেতে পারে যে মৃত্যুর পর আত্মা অনন্ত বিশ্বে ব্যাপ্ত ঐশ্বরিক শক্তির একটি ক্ষুদ্রতর অংশ হিসাবে যুক্ত হয় যাকে আমরা ঈশ্বর প্রাপ্তি বলে থাকি । তাই ভিন্ন মাত্রিক জগৎ এর সম্ভাবনাকে আমরা অলৌকিক জগতের সাথে তুলনা করতে পারি , যার সম্ভাবনা ক্ষীণ হলেও সম্পূর্ন নস্যাৎ করে দেওয়া যায়না । হতে পারে আজ যা কল্পবিজ্ঞানের অংশ পরবর্তীকালে তা ভৌত বিজ্ঞানের অংশ হবে। যাকে আজ আমরা অলৌকিক বলে অভিহিত করছি ভবিষ্যতে তাকে প্রাকৃতিক ঘটনা হিসাবে পরিগণিত করব। হয়ত অলৌকিক বা উচ্চমাত্রার জগতে প্রবেশের এক মাধ্যম আবিষ্কৃত হবে।

ব্রহ্মাণ্ডে সভ্যতার স্তরকে তিনটি ভাগে বিজ্ঞানীরা ভাগ করেছেন । Type ১ , Type ২ ,Type ৩ । Type ১ জাতীয় সভ্যতার মানুষ তাদের গ্রহের মধ্যে সব শক্তির উৎসকে ১০০% ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ।
Type ২ সভ্যতার মানুষরা তাদের সৌর জগতের সমস্ত শক্তির উৎসকে ১০০% ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ।
Type ৩ জাতীয় সভ্যতার মানুষ ব্রহ্মাণ্ডের সব শক্তিকে ১০০% ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম ।

বর্তমান পৃথিবীতে এই নিরিখে মানবসভ্যতা .৭৩ স্তরে উন্নীত । হয়ত আগামী কয়েক শতাব্দী এই সভ্যতাকে Type ১ সভ্যতায় পরিণত করবে । যেদিন মানুষ Type ৩ সভ্যতায় উন্নীত হবে সেদিন সমগ্র ব্রহ্মাণ্ডকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। সেদিন কল্পবিজ্ঞান , অলৌকিক জগৎ বলে কিছু থাকবে না । তবে যতদিন তা না হচ্ছে ততদিন আমরা কল্পনা বিলাসে ভেসে থাকার আনন্দ উপভোগ করতে পারি । জগতের সব রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড হয়ত এত সুন্দর , রহস্যময়, চমৎকার ও রোমাঞ্চকর থাকবেনা ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *