স্বাধীনতা প্রসঙ্গে বোধিসত্ত্ব

স্বাধীনতা প্রসঙ্গে
বোধিসত্ত্ব

স্বাধীনতা দিবস হল ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একটি পবিত্র জাতীয় দিবস। ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট ভারত ব্রিটিশ রাজশক্তির শাসনকর্তৃত্ব থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল। সেই ঘটনাটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য প্রতি বছর ১৫ই অগাস্ট তারিখটি ভারতে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে প্রধানত অহিংস, অসহযোগ ও আইন অমান্য আন্দোলন এবং বিভিন্ন চরমপন্থী গুপ্ত রাজনৈতিক সমিতির সহিংস আন্দোলনের পথে পরিচালিত এক দীর্ঘ সংগ্রামের পর ভারত স্বাধীনতা অর্জন করেছিল।

এ দেশে ব্রিটিশ শাসনকাল অবসানের মধ্য দিয়ে আমাদের রাজনৈতিক স্বাধীনতা এসেছে । কিন্তু আমরা কি হলফ করে বলতে পারি যে সকল ক্ষেত্রেই আমাদের স্বাধীনতা এসেছে? আমাদের সংবিধান বাক স্বাধীনতা দিয়েছে, কিন্ত স্বাধীনতার এতো বছর পর‌ও আমাদের দেশে সেই বাক স্বাধীনতা শাসকের ইচ্ছাধীন। শিক্ষা থেকে শুরু করে সামাজিক ক্ষেত্রে দলীয় আদর্শকে বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে। শিক্ষা এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে ক্ষমতাসীন দলের আদর্শের শিক্ষা। আজও আমাদের গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে হয় । আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা কি এই স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিলেন? প্রতিটি নাগরিকের প্রয়োজনীয় চাহিদাগুলি যাতে পূরণ হয়, সেই ব্যবস্থা স্বাধীন দেশের সরকার করবে এটাই চেয়েছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামীরা। অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থান এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ চাহিদা যাতে পূরণ হয় সেই লক্ষ্যেই স্বাধীনতা সংগ্রামীরা জীবনকে তুচ্ছ করে আত্ম-বলিদান দিয়েছিলেন।

স্বাধীনতার ৭৫ বছর পর স্বাধীনতা উদযাপন এর দিনে আমরা কি হলফ করে বলতে পারব, দেশের সব মানুষ দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পাচ্ছে? এ দেশের সকল মানুষ মাথা গোঁজার একটা ঠাঁই পেয়েছে? সকলের লজ্জা নিবারণের ন্যূনতম ব্যবস্থা আছে? সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা সম্ভব হয়েছে? ইংরেজরা এ দেশ থেকে চলে গিয়েছে ঠিকই, কিন্ত বঞ্চনা কি বন্ধ হযেছে? দেশের দুর্বলতর শ্রেণির অধিকারকে প্রতিষ্ঠা কি সম্ভব হয়েছে?

‘স্বাধীনতা’ শব্দটির ব্যাপ্তি অনেক। স্বাধীনতার অর্থ- দেশকে একটি সুদৃঢ় ভিতের উপরে দাঁড় করানো; দেশের মানুষের নূন্যতম প্রয়োজন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য, বস্ত্র ও বসবাস যোগ্য স্থানের চাহিদা পূরণে সক্ষম করে তোলার সাথে কর্মসংস্থানের দিকে দেশকে স্বনির্ভর করে তোলা। স্বাধীনতার অর্থ এই নয় যে স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ করা, স্বাধীনতার অর্থ দেশের প্রতি আরও কর্তব্য পরায়ণ হওয়া। জনগণের মঙ্গলের কথা চিন্তা না করে দেশের নেতা মন্ত্রীরা যখন যা খুশি নিয়ম আরোপ করলে স্বাধীনতা খর্ব হয়। আত্মমর্যাদার জন্য যদি কাউকে আত্মহত্যা করতে হয়, নূন্যতম বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি পাওয়া না যায়, অথবা প্রত্যেক মানুষের বেঁচে থাকার অধিকারটা যদি কারও দয়া দাক্ষিণ্যের উপরে নির্ভর করতে থাকে, তবে কি আমরা স্বাধীন?

সর্বোপরি একটি কথা বলতে হয় যে দেশের প্রতিটি শিশুর আত্মবিকাশের শিক্ষার কথা যেন আমাদের বিবেচনায় থাকে। আমাদের আত্মিক বিকাশ না ঘটলে ‘স্বাধীনতা’ শুধু একটা শব্দ হিসেবেই থেকে যাবে। আসলে ‘স্বাধীনতা’ কী এটা আমাদের উপলব্ধি করতে হবে। আজকের দিনে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমাদের সকলের শপথ হোক প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য আত্মিক বিকাশের পথে চলা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *