“চিঠি” সুজিত অধিকারী
“চিঠি”
সুজিত অধিকারী
পূজনীয় মা, পত্রের প্রথমে তুমি আমার প্রণাম নিও।দাদু ,কাকা ও কাকিমা কে আমার প্রণাম দিও ।কেমন আছো তুমি,ওষুধ গুলো ঠিক করে
খাচ্ছো তো?আমি এখানে ভালো আছি ,আমার
জন্য চিন্তা করো না।
জানো মা এখানে দিদুর সাথে দেখা হলো,আমাকে
দেখে মিট মিট করে হাসছে,আমিও বকে দিলাম
আচ্ছা আমাকে দেখে হাসার কি আছে বলো ?
তারপর একদিন আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব
কাঁদলো ,জানো মা দিদু কে মানে তোমার মা কে দেখলাম,দেখে খুব কষ্ট হলো বুঝলে
কেমন কালো পড়ে গেছে রোগা রোগা লাগছে
দাদুর কথা জিজ্ঞেস করতেই ওমনি মুখটা ঘুরিয়ে
নিলো,এমন রাগ ধরে না……..
তারপর কাঁদো কাঁদো স্বরে বললো,” তোর দাদুর
আসার কথা ছিলো কিন্তু তোর মামা আসতে
দেয়নি” আমি তখন বললাম মামা ঠিক করেছে
থাকুক দাদু মামার কাছে ,তুমি আমার কাছে
থাকো…।জানো মা এখানে না একজন দাদা
আছে সে আমাকে কি ভালো বাসে গো মনে হয়
সে আমার নিজের দাদা ,দাদার মুখ টা ঠিক
তোমার মত ……….।
এখানে যমরাজ কি ভালোবাসে গো আমায়,খুব
ভালো মানুষ উনি …..
তবে “চিত্রগুপ্ত ” দিদুর দিকে কেমন ট্যারা চোখে
তাকায় ,আমিও জিজ্ঞেস করলাম ,কেন ঐ ভাবে
দেখছো ?উনি বললেন দিদু নাকি কারনে
অকারণে দাদু কে বোকা দিতো।” চিত্রগুপ্তের ”
খাতায় সব লেখা আছে গো।
তোমার কোথাও লেখা আছে ,বাবার যখন “ডেঙ্গু ”
হয়েছিলো তুমি দিনরাত এক করে বাবাকে , সতী সাবিত্রীর মত করে বাঁচিয়ে ছিলে সে সব লেখা আছে।
তুমি বাবাকে দেখবে গো,তুমি ছাড়া বাবার আর
কে আছে বলো ? ঐ মানুষ টায় তো তোমাকে আগলে রেখেছে এতো দিন ধরে ….
মানুষ টা যে বোবা হয়ে যাবে নাহলে।
জানো মা বাবা না রোজ লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদে
বাড়ীর পিছনে তেঁতুল গাছের আড়ালে …..
আমি যে বাবার কান্না নিতে পারি না।
মা দিদি কেমন আছে গো ? ভালো নেই জানি।
আমার দিদির জন্য খুব মন খারাপ করে।
আচ্ছা দিদিকে একা একা বেরোতে দিও না
আমার খুব ভয় করে ……
যদি বেরোতেই হয় তাহলে আনোয়ার দাকে
সাথে দিও আনোয়ার দা খুব ভালো ছেলে।আচ্ছা
দিদি এখন আর আগের মত সাজে না না ? আসলে
আমি নেই তো তাই । দিদি সাজলে কিন্তু প্রতিমার মতো লাগে ,ওকে মন খারাপ করতে
মানা করবে আমি এখানে খুব খুব ভালো আছি।
জানো মা ওরা না সেদিন আমাকে থেঁতলে
থেঁতলে মেরেছিলো, বিবস্ত্র করে রক্তাক্ত করে
ছিলো খুব খুব কষ্ট হয়েছিলো কত ডেকেছি
তোমাদের ওরা আমার মুখ চেপে ধরে রেখেছিল।
আমি “যমরাজ ” কে সব বলেছি ,উনি বলেছেন
“ওদের কে খুব শাস্তি দেবেন”
তোমার মনে
আছে মনিকা মাহাতর কথা সেও তো আমার
মতোই খুন হয়েছিলো তার সাথেও দেখা হয়,তারও
খুব মন খারাপ তার বাবা ,মা আর দাদার জন্য।
মা আমার কুটটু ভাই টা খুব দুষ্টুমি করে,তোমার
মনে আছে একবার ওকে নিয়ে “টিক টক “করে
ছিলাম বলে দিদি কি বকে ছিলো ,তাতে তোমারও
সায় ছিলো।
বিটটু কে ভালো করে পড়তে বলবে তাকে যে
ইঞ্জিনিয়র হতেই হবে দাদুর খুব ইচ্ছে নতুন
বাড়ীর নক্সা টা তাকে দিয়েই করাবে ……
জানো মা দাদুর সেই ছুটকি ছুটকি ডাকা টা
খুব মিস করি,আচ্ছা দাদু ভালো আছে তো ?
দাদু কে বলে দিও তার ছুটকি ভালো আছে ।
সুদীপ কেমন আছে এখন ?ওকে পুলিশ শুধু শুধু
ধরে রেখেছিলো ,ওর তো কোন দোষ ছিলো না
বলো,তুমি ওকে কে ভুল বোঝো না প্লিজ।
আমার দ্বিতীয় বর্ষের “মার্কশিট ” টা যত্ন করে
রেখে দিও,আমি যখন আবার তোমার কোলে
জন্ম নেবো তখন না হয় দেখবো …..…।
সুমনা,দোলন আর নিবেদিতা কে বলে দিও
আমি এখানে খুব খুব ভালো আছি,ওরা যেন
নিয়মিত কলেজ যায় আর প্রিন্সিপাল কে বলে
দেয় আমি শেষের পরীক্ষা টা দেবো না কারন
“যমরাজ “বলেছেন আমাকে উনারা আর ছাড়বে না।
আর কি লিখবো মা এখানেই শেষ করলাম
তবে তুমি ওষুধ গুলো ঠিক করে খেও।
তুমি আর বাবা আমার প্রণাম নিও ,ভালো থেকো।
ইতি
তোমার সোনা …।