বৃন্দাবন ভ্রমণ পর্ব:১ পিয়ালী ঘোষ

বৃন্দাবন ভ্রমণ পর্ব:১
পিয়ালী ঘোষ

“গোঠের রাখাল বলে দে রে কোথায় বৃন্দাবন
যেথা রাখাল রাজা গোপাল আমার খেলে অনুক্ষণ””।
কবি নজরুলের লেখা এই গান মনকে খুব নাড়া দিত সব সময় বিশেষ করে বাড়ীতে গোপাল সেবার সময়। মনে বৃন্দাবন যাওয়ার অদম্য ইচ্ছা ছিল । অবশেষে হঠাৎ ভগবৎ কৃপায় যাওয়ার সুযোগ এলো।সে সুযোগ এখনও বহাল আছে। প্রতি বছর একবার না গেলে খুব কষ্ট পাই।

এখানে আমি প্রথম অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।আর পাঁচটা তীর্থ ভ্রমণের থেকে বৃন্দাবন ভ্রমণ সম্পূর্ণ আলাদা। আলাদা বললাম এই কারণে এখানে ভক্ত ও অভক্তের প্রশ্ন আসে। একজন অভক্ত বৃন্দাবনে গিয়ে দেখে শুধুই গলি,গরু,গোবর আর বিধবা কিন্তু হরিনামে মাতোয়ারা মানুষের কাছে বৃন্দাবন হলো ভগবানের লীলাক্ষেত্র।
সাল ২০১৫। দিনটা ছিল ডিসেম্বরের ২৩ তারিখ। শীতের রাত। আসানসোল থেকে রাতে ট্রেন ধরলাম সঙ্গে আর এক ভক্ত পরিবার।
পরদিন বিকেলে মথুরা পৌঁছলাম ।সেখান থেকে অটোতে গন্তব্য স্থল।’জয়পুরিয়া ভবন’এ থাকার ব্যবস্থা। এখন ওটাই আমার দ্বিতীয় বাড়ী হয়েছে।
যাইহোক নির্দিষ্ট ঘরে একটু স্নানাদি পর্ব সেরে ছুটলাম বাঁকে বিহারীজীর মন্দির। হ্যাঁ, সেই তিনি যিনি বৃন্দাবনের অলিতে গলিতে লীলা করে বেড়ান।


ভাগবতে সব গল্প কথিত আছে তার মধ্যে এক গল্প বলছি যদিও আমাদের কাছে গল্প হলেও বৃন্দাবন বাসীর কাছে এসবই সত্য ঘটনা।
কিছু কিছু নির্দিষ্ট দিনে তাঁকে দৈ-বড়া ভোগ দেওয়ার রীতি এখানে প্রচলিত।এ রকমই একদিন দৈ-বড়া দিতে ভুল হয়েছে। বৃন্দাবনে কিছু কিছু দোকান সারারাত খোলা থাকত বা থাকে এখনও। এরকমই এক দোকানে ছোট্ট এক বালক গভীর রাতে গিয়ে বলে,”আমাকে দৈ-বড়া দেবে? ” দোকানদার বলে,”কেন দেবো না কিন্তু তোমার কাছে কি টাকা আছে, তোমার সাথে যে আছে তাকে ডাকো।আজ একদম দৈ-বড়া বিক্রি হয় নি”।বালক বলে, সাথে মা আছে ঐ দূরে। মায়ের কাছে টাকা নেই। কিন্তু আমার ইচ্ছে মেটাতে মা এটা দিয়েছে। তুমি এটা নাও আর দৈ-বড়া দাও”।

যথারীতি বালক দৈ-বড়া নিয়ে চলে যায়।পরের দিন হৈচৈ পড়ে যায়। বাঁকে বিহারীজীর এক হাতে বালা নেই। চারিদিকে কথা চাউর হতে সেই দোকানদার ছুটে বালাখানা নিয়ে মন্দিরে এসে সব বলে।সেবাইতদের মাথায় হাত। সত্যিই তো কাল ভোগে দৈ-বড়া দেওয়া হয় নি। শোনা যায় ঐ দিনই সেই দোকানদারের মৃত্যু হয়। প্রমাণ হলো”ভক্তের ভগবান”। তাই আজ ও ভগবানের ‘ঝাকি দর্শন’।

আরো অনেক গল্প আছে। শুধু এটুকু বলি, নিধুবনে তুলসীদাস রাধা ভাবে ভাবিত হয়ে বাঁকে বিহারীজীকে প্রকট করেছিলেন।
নিধুবন হলো তুলসী বন। ‘বৃন্দা’ শব্দের অর্থ হলো তুলসী। ভাগবতে যে সব বনের উল্লেখ পাই তারমধ্যে বৃন্দাবনের ভৌগলিক সীমানার মধ্যে আছে নিধুবন,ভানডির বন,কোকিলাবন, নিকুঞ্জ বন।সব বন ই হলো এক একটি লীলাক্ষেত্র।
বাঁকে বিহারীজী কে প্রণাম পর্ব সেরে ভবনে ফিরলাম।
পরদিন আছে গিরিরাজ পরিক্রমা।এই গিরি গোবর্ধন পর্বত ভগবান কড়ে আঙ্গুলে তুলে ধরেছিলেন।নিয়ম হলো যেখান থেকে পরিক্রমা শুরু হবে সেখানেই শেষ হবে।
আমরা প্রথমবার শুরু করেছিলাম কুসুম সরোবর থেকে। কৃষ্ণ চরণে মন হারিয়ে, মুখে হরিনামের বুলিতে যাত্রা শুরু হলো। সকাল সাতটায় খালি পায়ে হাঁটা শুরু করে যখন তিনটে বাজলো আমরা তখন রাজস্থানে। এই পর্বত রাজস্থানে তিন কিলোমিটার বিস্তৃত।
সন্ধ্যায় কুসুম সরোবর ফিরে এলাম। বুঝলাম মনের জোরে অসাধ্য সাধন করা যায়। পরিক্রমা মার্গের মধ্যে আছে মানসী গঙ্গা,জ্যোতিপুরা। আমরা হেঁটে পরিক্রমা করলেও অনেকে দনডী কেটে পরিক্রমা করছিলেন।যারা এতখানি পথ পরিক্রমা করতে পারেন না তাঁরা মুখরাবিন্দ থেকে জ্যোতিপুরা অবধি করেন।গিরি গোবর্ধন পর্বতের গঠন হলো শায়িত বিষ্ণু।

বৃন্দাবন ভ্রমণে আমরা প্রথমেই পরিক্রমা পর্ব সেরে নিয়ে ছিলাম।সব ঘোরার শেষে করলে ক্লান্তি আসে। অনেক অনেক মন্দির।পরের দিন যাবো সেই সব মন্দিরেও যমুনার তীরে।

চলবে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *