শিরোনাম একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি —— কলমে অসীম মজুমদদার

#গদ্যকবিতা
#শিরোনাম একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি
#কলমে অসীম মজুমদদার

একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি …
বিগত শতাব্দীর ওপার হতে ভেসে আসা আপনার বাণী,
কেন এত মধুর লাগে জীবন সংগ্ৰামে, আত্মগ্লানিতে।
প্রতিনিয়ত হারিয়ে ফেলা আশা, ভরসা, বিশ্বাসের সমাধিতে …
প্রার্থনা সংগীতের মত ভেসে আসে আপনার অমর লেখনী,
বিদীর্ণ করে আঁধারের ঘনঘটা তীব্র আলোকচ্ছ্বটায়।

তবুও একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি …
ঈশ্বর বিশ্বাসের অদম্য ধারণা অসহায় মানুষের প্রতি বর্তায় না,
হাজার হাজার স্বর্ণমুদ্রায় বর্তমানেও গড়ে উঠে দম্ভের বুদবুদ।
অসহায় মানুষেরা গৃহহীন, খাদ্যহীন, বস্ত্রহীন চির প্রবঞ্চিত,
মানুষের মধ্যেই ঈশ্বরের বাস মানতে তীব্র অনীহা …
রাজা-রাণীদের অহংকারের গরিমা প্রশংসিত হয় অবলীলায়।

তবুও একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি …
যারা কাজ করে নগরে, বন্দরে, শহরের রাজপথে অক্লান্ত
তারাই চির উপেক্ষিত উচ্চ-বিত্তের মাত্রাতিরিক্ত লোভের আস্ফালনে।
সমগ্ৰ জাতীর মুখে খাদ্য তুলে দেওয়ার অঙ্গীকারে যারা
গ্ৰীষ্মের দাবদাহে, বর্ষার বৃষ্টিতে, শীতের প্রকোপে মাঠ চষে
তারাই অবাঞ্ছিত রাজ দরবারে, স্বার্থপরতার নির্মম পরাকাষ্ঠায়।

তবুও একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি …
নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার অধিকার এখনো দেননি বিধাতা
ভারতবর্ষের অধিকাংশ নারী প্রতিনিয়ত অত্যাচারীত হয়।
অত্যাচারীত হয় মানসিক নির্যাতনে, পাশবিক রিপুর দংশনে ….
এমনকি আপন ঔরস সন্তানের দ্বারা অসহায়তার বাতাবরণে,
‘নারীর সম্মান’ আধুনিকতার কালিমা লিপ্ত শব্দের স্পন্দনে হাহাকার তোলে।

তবুও একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি …
আপনার কবিতা, গান, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক সাহিত্যের অমূল্য ধন
তার প্রতি আমাদের যত তীব্র ভালোবাসাই থাকুক, তা শুধুই বহনের।
আপনার রচনার গূঢ় শিক্ষাকে আমরা বহন করে চলেছি শুধুই,
তাকে বাহন করতে পারিনি জীবন বোধে, ভঙ্গিল চারিত্রিক দৃঢ়তায়;
রিক্ত জীবন নিয়ে ছুটে চলেছি জৈবিক প্রয়োজন চরিতার্থ করতে।

তবুও একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি …
আপনার রচনাবলী, গীতবিতান, সঞ্চয়িতা, আপনার গল্পগুচ্ছ
কাদের জন্য, কিসের জন্য, কেনই বা লিখে গেছেন পাতার পর পাতা!
আমরা পারিনি তা আপন করতে, ধূলো ঝেড়ে বছরে দু-বার;
২৫ শে বৈশাখ আর ২২ শে শ্রাবণ, নিয়ে বসি শ্রদ্ধাঞ্জলির হাটে …
আগামী প্রজন্মকে দিয়ে যেতে পারবো না আপনার গরিমার অংশটুকু।

একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে বুঝি
এসেছে সময় করজোড়ে আরো একবার ক্ষমা প্রার্থনা করার দিন,
আপনার মৃত্যুদিন স্মরণে শ্রদ্ধার অন্তিম লগ্নে অনুশোচনার সুযোগ।
অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে আগামীর তরে, দীপ জ্বালিয়ে সায়াহ্নে;
ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন মননে জ্বালাতে হবে আপনার লেখনীর জ্বলন্ত মশাল …
সহস্র বৎসর পরেও যেন কেউ বাতায়ন পাশে বসে পাঠ করে আপনার রচনা।

হে প্রাণের ঠাকুর, হৃদয়ে লেখা নাম ‘রবীন্দ্রনাথ’
একবিংশ শতাব্দীর এক নাগরিক হিসাবে আপনাকে
জানাই প্রণাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *